Home আন্তর্জাতিক স্টিল-অ্যালুমিনিয়ামে ট্রাম্পের কঠোর পদক্ষেপ, শুল্ক বাড়ল দ্বিগুণ

স্টিল-অ্যালুমিনিয়ামে ট্রাম্পের কঠোর পদক্ষেপ, শুল্ক বাড়ল দ্বিগুণ

অনলাইন ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার (৩০ মে) এক সমাবেশে ঘোষণা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হবে। এই সিদ্ধান্ত আগামী বুধবার থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। খরব রয়টার্স

পেনসিলভানিয়ার পিটসবার্গের উপকণ্ঠে ইউএস স্টিলের মন ভ্যালি কারখানায় এক জনসভায় ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা শুল্কে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি আনতে যাচ্ছি অর্থাৎ ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশে নিয়ে যাচ্ছি স্টিলের ওপর শুল্ক, যা আমাদের দেশের স্টিল শিল্পকে আরও মজবুত করবে।’

তিনি আরও জানান, অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের ওপরও এই বাড়তি শুল্ক কার্যকর হবে। নতুন এই পদক্ষেপের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে এবং শুরু হয়েছে জোরালো কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া।

ট্রাম্পের ঘোষণার পরই স্টিল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ক্লিভল্যান্ড-ক্লিফস ইনকের শেয়ারবাজারে দর ২৬ শতাংশ লাফিয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, শুল্কবৃদ্ধির ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদকরা লাভবান হবেন।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। কানাডার চেম্বার অব কমার্স এক বিবৃতিতে জানায়, ‘এই শুল্ক উত্তর আমেরিকার অর্থনৈতিক নিরাপত্তার পরিপন্থী এবং এটি উভয় দেশের জন্যই ক্ষতিকর।’

অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী ডন ফ্যারেল বলেন, ‘এটি বন্ধুর কাজ নয়। এই ধরনের শুল্ক সাধারণ ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদেরই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমরা এই শুল্ক তুলে নেয়ার জন্য দৃঢ়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাব।

ট্রাম্পের বক্তব্য এমন এক সময় এলো যখন তিনি পেনসিলভানিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। মার্কিন অর্থনীতির ঐতিহ্যবাহী স্টিল কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এই এলাকা দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

বাণিজ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ২০২৪ সালে ২৬.২ মিলিয়ন টন স্টিল আমদানি করেছে, যা দেশটিকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্টিল আমদানিকারকে পরিণত করেছে (ইইউ ব্যতীত)। ফলে এই শুল্কবৃদ্ধি স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের দাম বাড়াবে, যার প্রভাব পড়বে নির্মাণ, গৃহস্থালি সরঞ্জাম, যানবাহন ও অন্যান্য খাতে।

ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, এই শুল্ক বৃদ্ধি দেশীয় উৎপাদকদের রক্ষা করবে এবং চাকরি সুরক্ষিত রাখবে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ আমদানির ওপর নির্ভরশীল শিল্পগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং শেষ পর্যন্ত সাধারণ আমেরিকানদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়াবে।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর ট্রাম্প আবারও ‘সেকশন ২৩২’ এর আওতায় জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এবার তিনি সেটিকে দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন।

সেকশন ২৩২-এর আওতায় প্রয়োগযোগ্য পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে স্টেইনলেস স্টিলের সিংক, অ্যালুমিনিয়াম ফ্রাইপ্যান, গ্যাস রেঞ্জ, এসির কয়েল, ঘোড়ার খুর, ও দরজার কবজা। ২০২৪ সালে এই ধরনের ২৮৯টি পণ্যের আমদানি মূল্য ছিল প্রায় ১৪৭.৩ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ শুধু বাণিজ্য নীতির বিষয় নয়, এটি নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। তবে এর আর্থিক ও কূটনৈতিক প্রভাব কতটা সুদূরপ্রসারী হবে, তা সময়ই বলবে।

 

Exit mobile version