সাজ্জাদ আলী

জগত্ সংসারের আরো শতটি অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার অনুরূপে যদি স্বপ্নলোকে একদিন শেখ হাসিনার সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের দেখা হয়ে যায়, তো কেমন হতে পারে বাপ-বেটির সেদিনকার কল্পসংলাপের রাজনৈতিক অংশটুকু?
শেখ মুজিবুর রহমানঃ এক শীতের সকালে ঘন কুয়াশার আস্তরণ কেটে পাইপ টানতে টানতে উদ্দেশ্যহীন হেঁটে চলেছেন শেখ সাহেব। সারি সারি সমাধি সৌধের মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা নির্জন সে পায়ে হাঁটা পথ। পরনে লুঙ্গি, গায়ে হাফহাতা গেঞ্জির উপরে কাশ্মীরী শাল জড়ানো। তবে সেই পথটি কি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় নাকি ঢাকার ধানমন্ডিতে, মুজিব ঠিক বুঝে উঠছেন না। বাতাসের ঝাপটায় কুজ্ঝটিকার ফাঁকে ফাঁকে তিনি সমুখে সুউচ্চ একটি উপাসনা ভবন দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু সেই ভবন থেকে কি গির্জার ঘন্টার শব্দ, নাকি মন্দিরের শঙ্খনাদ অথবা মসজিদের আজানের ধ্বনির অনুরণন হচ্ছে; মুজিব তা ঠিক বুঝে উঠছেন না। এভাবে চলতে চলতে খানিক বাদে তিনি আধাস্পষ্ট দেখতে পেলেন যে, পথের উল্টো দিক দিয়ে এক নারী তাঁর দিকে হেঁটে এগুচ্ছেন। সুতির একখানা শাড়ী কুচি দিয়ে পরেছেন তিনি, মাথায় ঘোমটা।
অনুকুল বাতাসের ঝাপটায় দৃষ্টি খানিকটা পরিস্কার হতেই নারীর মুুখখানা স্পষ্ট হলো। আরে আমার হাসু না? বিস্ময়ে ভরা দৃষ্টিতে মুজিব পরখ করছেন ওই নারীকে। ৪৪ বছর আগে শেষ বারের মতো দেখা তাঁর জেষ্ঠ্য কন্যা হাসিনার যুবতী বয়সের মুখখানা স্মরণের চেষ্টা করছেন তিনি। হাঁ, হাসুই তো! সেই মুখ, সেই গড়ন, সেই চলন! শুধুমাত্র বয়সের একটু প্রলেপ পড়েছে, এই যা। ডান হাতখানা উঁচু করে “হাসু” বলে ডাক দিতে যাবেন; কিন্তু তার আগেই ওই নারী দৌঁড়ে এসে সোজা মুজিবের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। একহাতে কন্যাকে বুকে জড়িয়ে মুজিব আরেক হাতে পরম মমতায় মেয়ের মাথায় হাত বুলাচ্ছেন। আর ঠিক সেই মুহূর্তে কুয়াশার পুরু আস্তরণ পিতাপুতিকে ঢেকে দিয়ে যেন তাঁদের একান্তে কাঁদার সুযোগ করে দিলো।
সমাধিক্ষেত্রের সরু পথ দিয়ে মুজিব তাঁর প্রিয়তম কন্যাকে বাহুতে জড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে এগুচ্ছেন। পারিবারিক কথাবার্তা অসমাপ্ত রেখে শেখ সাহেব হঠাত্ই জানতে চাইলেন, হাঁরে হাসু আগে ক’তো মা, আমার বাংলার মানুষেরা কেমন আছে? আমি তো তাগো জন্য ভাল কিছু করবার সময় পাইলাম না, কিন্তু তুইতো পাইছিস। দ্যাশটারে আর দ্যাশের মানুষগো ক্যামন রাখছিস, ক’তো শুনি?
শেখ হাসিনাঃ আব্বা, এমন মস্ত জিজ্ঞাসার এক কথায় কি জবাব দেবো কন তো? কোনখান থেইকা আপনারে যে কতটুকু কই, তাইতো বুঝতি পারতেছি না! আপনার তো আবার সময়ও কম, পরপারে ফেরবার তাড়া আছে। দেহেন ছোট্ট একটা দ্যাশ, গিজগিজানো মানুষ, সমস্যার কি আর শ্যাষ আছে! দ্যাশটা অহনো আপনার “সোনার বাংলা” হয় নাই বটে, তয় এক কথায় যদি কই তো দ্যাশ ভালই আছে। বাঙালির ঘরে খাবার আছে, পিন্দনে কাপড় আছে, মাথার উপরে চালা আছে। আপনি তো যুদ্ধে ধ্বংস হওয়া একটা দ্যাশ দেইখা গেছেন। বিদ্যাশ থ্যাইকা ভিক্ষা আইনা মানুষেরে খাওয়াইয়া বাঁচাইছেন। খয়রাতি টাকা দিয়া ধ্বংসস্তুপের উপর দ্যাশ গড়ার চেষ্টা করছেন। আইজ আর দ্যাশের সে অবস্থা না।
১৯৭৫ এ সাড়ে সাত কোটি মানুষের খাবারের অভাব থাকলেও আজ ষোল কোটি বাঙালি নিজের ক্ষেতে নিজের খাবার ফলায়। বিদেশীগো কাছে খাবার-ভিক্ষা করে না। উল্টা কিছু ধান-চাল তাঁরা রফতানিও করে। এ ছাড়াও গত ৪৫ বছরে ম্যালা ম্যালা সাহসের কাম করছে বাঙালি, তার মইধ্যে থেকে আপনারে মোটে একটাই কই। বিদেশি মহাজনদের থেইকা একটা টাকা ধার না কইরাও হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ কইরা আপনার বাঙালিরা পদ্মা নদীর উপর ব্রীজ বানাইতেছে আব্বা। কাম প্রায় শ্যাষ, ঢাকা থ্যাইকা টুঙ্গিপাড়ায় মোটে ২ ঘন্টায় যাওয়া যাইবো। বলে চলেছেন শেখ হাসিনা। মেয়ের কাঁধে ভর রেখে মুজিব হাঁটছেন আর ভাবছেন, পাটগাতি থেইকা ইষ্টিমারে চইড়া, সুন্দরবন, বরিশাল ঘুইরা ঢাকা পৌঁছাইতে প্রায় ২ দিন লাগতো! আর আইজ কিনা সেই পথ মোটে ২ ঘন্টায়!
(পাঠক, আপনি পড়ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার স্বপ্নলোকের কল্পকথা)

শেখ সাহেবঃ হাসুরে কানাঘুষা শুনি দ্যাশ চালনায় ধর্ম নিয়া নাকি পক্ষপাত চলতেছে! শোন রে মা, পাকিস্তানীরা ধর্মের দোহাই দিয়া আমাগো শোষন করছে। আমি কিন্তু দ্যাশের মানুষেরে কথা দিছিলাম যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি কোন ধর্মের পক্ষ নেবে না। কিন্তু সব ধর্মের ধর্মাচার পালনের গ্যারান্টি দেবে। রাষ্ট্রীয় মুলনীতির অন্যতম স্তম্ভও করছিলাম “ধর্মনিরপেক্ষতাকে”। আমার দেওয়া সেই ওয়াদার তুই নাকি প্রায়ই খেলাপ করিস?
শেখ হাসিনাঃ খেলাপ করি নাই আব্বা। কথাডা যে ভাবে আপনার কানে পৌঁছাইছে ওভাবে ঠিক না। একটু পেছন থেকে কই তয়। আপনারে হত্যা করবার পরে জিয়া, এরশাদ, বিএনপি গং’রা একটানা প্রায় ২০ বছর দ্যাশ শাসন করছে। এই লম্বা সময়ে সচেতনভাবেই ওরা “যে যে কারণে মুক্তিযুদ্ধ হইছিলো” তার বিপরীত নীতিতে দ্যাশ চালাইছে। দ্যাশের আভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতি ছিলো হুবহু পাকিস্তানী আদলে। ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতিকে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা দিয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতাগো এবং রাজাকার ও ৭১’এর যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রিসভায় স্থান দিছে। আপনি ভাবতে পারেন, স্বাধীন বাংলার মাটিতে তখন বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, জয়বাংলা, এ সব শব্দ উচ্চারণ নিষিদ্ধ ছেলো। এরশাদ তো সংবিধানে “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম” এ কথা জুড়েই দিছে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রনীতির বিপরীতে ওরা সুচতুরভাবে দেশকে ইসলামীকরণ করছে। আর এ কাজে ওরা সাথে পাইছে পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলাকে। রাষ্ট্রিয় মদদে নগদ পেট্রোডলার ছড়াইয়া ওরা দ্যাশের সরল প্রাণ মানুষদের এক বৃহৎ অংশকে বুঝাইতে সক্ষম হইছে যে, ধর্মনিরপেক্ষতা হলো ধর্মহীনতা!
শেখ সাহেবঃ বুঝলাম ওরা এসব করছে, কিন্তু তুইতো একযুগের অধিক ক্ষমতায়। এসব ঠিক করতে কম সময় তো পাসনি?
শেখ হাসিনাঃ আব্বা, আমি লক্ষ্যচ্যুত হই নাই। আপনিতো পরপারে থাকেন, দ্যাশের সব খবর তো অবিকল আপনার কাছে পৌঁছায় না। বাস্তব প্রেক্ষাপটে আমাকে ধীর গতিতে আগাইতে হইতেছে। ভোটের রাজনীতিতে আমি ভোটারদের ধর্মীয় মনোভাবের বিপরীতে দাঁড়াইতে পারি না। ওই যে কইলাম এরশাদ-জিয়ারা একটানা ২০ বছর ধর্মপ্রাণ ও সরলমতি জনগণকে একথা বুঝাইছে যে ধর্মনিরপেক্ষতা হইলো হিন্দুগো পক্ষের মতবাদ! ওটা মাইনা নিলে দ্যাশে ইসলাম থাকবে না। এমন বাস্তব প্রেক্ষাপটে ধর্মনিরপেক্ষতার মতো একটা উদারনৈতিক ও উৎকৃষ্ট মতবাদের প্রতি দ্যাশের মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি না কইরা যদি রাতারাতি “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম” বাতিল করি, তাতে হিতে বিপরীতই হবে।
আপনার হত্যাকান্ডের পরপরই ওরা যে ধর্মীয় মৌলবাদী রাষ্ট্রনীতি শুরু করেছিলো সেটাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করেই সামনে এগুতে হচ্ছে। দ্যাশের ধর্মনির্ভর রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তসারশুন্য রাজনীতির কুফল গণমানুষের সামনে তুইলা ধইরা ওদের নিস্ক্রিয় করার প্রক্রিয়া চলতেছে। ৭১’ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কইরা রায় কার্যকরের মাধ্যমে জামাতে ইসলামীকে নেতৃত্বশুন্য করা গ্যাছে। জিয়ার দল বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা কইরা সাইড লাইনে বসায়ে রাখছি। দ্যাশে এখন মৌলবাদী রাজনীতির কন্ঠস্বর অত্যন্ত ক্ষীণ। দিনে দিনে তা আরো ক্ষীণতর হবে ইনশাল্লাহ। সব ঠিক কইরা ফালাবো, দোয়া কইরেন আব্বা।
শেখ সাহেবঃ পাইপে শেষ টানটি দিয়ে মুজিব বললেন, আচ্ছা আরেকটা বিষয়। দেখরে মা, সেই ১৯৪৯ সালে দলের গোড়াপত্তন করলাম। ৫২, ৫৪, ৫৮, ৬৬, ৬৯ পর্যন্ত আন্দোলন সংগ্রাম করতি করতি ৭০’ এ আইসা ভোটে জিতলাম। তারপর ৭১’ এ রক্তের সাগরে হাবুডুবু খাইয়া বাঙালি দ্যাশ স্বাধীন করলো। কি জানিস, দেখলাম যে যুদ্ধের আগে দলের নেতা-কর্মীগো ধ্যান-জ্ঞান, কাজ-কারবার, আর যুদ্ধের পরের কাজ-কারবার এক্কেবারেই আলাদা। দলের যে সব ত্যাগী কর্মী গাইটের খাইয়া, জীবনের মায়া না কইরা দ্যাশ শত্রু মুক্ত করলো; সেই কর্মীই স্বাধীন দ্যাশে নিজের গাইট ভর্তী করতে বেপরোয়া হইয়া উঠলো। আমার সব হিসাব উল্টাপাল্টা হইয়া গেল রে মা! আচ্ছা আজকে তোর আমলে দলের অবস্থাটা কি? ক’তো হাসু শুনি?
শেখ হাসিনাঃ অবস্থার কোন উন্নতি নাই আব্বা, বরং ক্ষেত্র বিশেষে অবনতি হইছে। যারে যে জায়গায় বসাই সেই সেইখানে চুরি চামারি করে। কি বুড়া কি গুড়া, দলের মইধ্যে “আদর্শবান” এহন কুপো জ্বালাইয়া খুঁইজতে হয়! ১০০ টাকা খরচ করতে দিলি আগে ৫০ টাকা নিজের ট্যাকে গুঁজে। নীতি বইলতে কাউর মইধ্যে কিছু আর অবশিষ্ট নাই! দ্যাশের সব বাটপার ধান্দাবাজ আওয়ামী লীগে যোগ দেছে। ছাত্রলীগের পুলাপাইন চান্দাবাজী করে! যুবলীগওয়ালারা টেন্ডারবাজী, মদ-জুয়া নিয়া ব্যস্ত, সংসদ সদস্যরা সব নিজ নিজ এলাকার উন্নয়ন কাজের থেইকা কমিশন খাওয়ায় অভ্যস্থ। ওরা সগগোলে মিলা একটা লুটপাটের রাজত্ব কায়েম কইরতে চায়। হাতে গোনা দুচারজন দেশপ্রেমী নেতা-কর্মী যাঁরা আছেন, তাঁরা এগো দাপটে ঘরের বাইর হইতে সাহস করেন না। আমি বড়ই একা হইয়া পড়ছি আব্বা। আমি যে “আপনার বেটী” এই পরিচয় ধইরা রাখাই এহন দায়! মুদ্দাকথা হইলো, আওয়ামী লীগের মইধ্যে এহন আপনার হাসুরে ছাড়া আর সবাইরেই কেনা যায়।
(পাঠক, আপনি পড়ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার স্বপ্নলোকের কল্পকথা)

শেখ সাহেবঃ বলিস কিরে? এতো দেখতেছি ভয়ঙ্কর অবস্থা! শক্ত হাতে এখনই এ সব দমন না করলে তুই এবং দল উভয়েই তো সংকটে পড়বি! এমনটা হলো কি করে? দলের অভ্যন্তরে জবাবদিহিতার প্রাকটিস কেমন রে?
শেখ হাসিনাঃ আব্বা, জবাবদিহিতার কোন বালাই নাই। আপনি আমার পিতা ও নেতা, আপনার কাছে গোপন করার তো কিছু নাই। দলে “জবাব চাওয়ার বা দেওয়ার” সংস্কৃতি গড়েই উঠে নাই। আপনার হত্যাকান্ডের পরেও দলে অনেক ত্যাগী ও প্রবীন রাজনীতিক ছিলেন। কিন্তু তাঁরা কেউই কাউরে নেতা মানতে পারেন নাই। অনেকটা “আমরা সবাই রাজা”, এমনই অবস্থা ছিলো ওনাগো। তখন আপোষ প্রার্থী হিসাবে আমারে দলের সভাপতি বানানোর পর আমি ১৯৮১ সালে নির্বাসন থেইকা দ্যাশে ফিরলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী একটি দলের নেতৃত্ব দেবার মতো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সেই সময়ে আমার ছেলো না। সময়ের সাথে সাথে রাজনীতিটা আমি বুঝে নিয়েছি ঠিকই, কিন্তু সেই ৮১’তে আমার একমাত্র যোগ্যতা ছিলো যে “আমি আপনার কইন্যা”।
সেদিন ওই সভাপতি পদে আমার অভিষিক্তির মধ্য দিয়াই দলে অপরিণতদের পদায়নের সূচনা হইছিলো। কি জানি পরবর্তীতে আমিও হয়তো তারই ধারাবাহিকতায় দলে আমার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করবার মতো গণতন্ত্রমনা কোন নেতা তৈরী হতে দেই নাই। এককভাবে সিদ্ধান্ত নেবার মতো কোন নেতা নাই দলে, তা সে সিদ্ধান্ত যত ছোট বা বড়ই হোক না কেন। মন্ত্রীকে সচিবে চালায়, এমপিদের চলতে হয় ডিসিদের পরামর্শে, ডিসিরা চলে এসপিদের দাপটের তলায়। দলের কাউন্সিলে নতুন কমিটি হয় “আমার পছন্দে”! ডেলিগেট-কর্মীদের কষ্ট করে ভোট দিতে হয় না। আর সে কারণেই দলীয় নেতা-কর্মীরা নীতি আদর্শের অনুশীলন না করে আমার “গুডবুকে” থাকারই চেষ্টা করে। আপনার কাছে গোপন করবো না আব্বা, অনুগামী পরিবেষ্ঠিত থাকতে আমার বেশ ভালই লাগে।
দলের বাইরেও একই অবস্থা। দ্যাশ জুইড়া ধর্ষকরা একের পর এক ধর্ষণ করতেছে, ঘুষখোররা আজান দিয়া ঘুষ খাচ্ছে, মাদক ব্যবসা চলছে দ্যাশ জুইড়, জুয়ায় লগ্নি হচ্ছে শত শতকোটি টাকা! ওসব অপকর্মের টাকায় দলের নেতা, পুলিশ সবাই ভাগ বসাচ্ছে, প্রশাসন নির্বিকার। আর নির্বিকার না থাইকা উপায়ই বা কি? ওই সব দুর্মতিরাতো আমার দলের লোক। কাকে কি বলে আবার না হয় প্রশাসকদের চাকরীটাই গেল! তার থেকে ভাগ খাওয়াই ভাল! পুরো প্রশাসনই তো অথর্ব হইয়া পড়ছে আব্বা! একবার ভাবুন দেখি, ধর্ষক, মাদক কারবারী, জুয়াড়ী, অস্ত্রবাজদের মতো নিকৃষ্ট অপরাধীদের গ্রেফতার করতেও দ্যাশের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দেওয়া লাগে! প্রশাসনযন্ত্রের স্বীয়কর্তব্য বলে কি তাহলে কিছু থাকবে না?
শেখ সাহেবঃ অবস্থা তো ভয়াবহ রে হাসু! আমার চারপাশে যেমন কম্বলচোর, গমচোর আর চাটারদলেরা ভীড় করেছিলো, তোরও তো সেই একই অবস্থা রে! প্রতিকারের কি ব্যবস্থা নিছিস? দ্যাশ বাঁচাবি কেমন কইরা?
শেখ হাসিনাঃ টাইট দিয়ে ফেলবো আব্বা, একেবারে লালঘোড়া দাবড়াইয়া দেবো। আপনার থেকে আমি “সৎ সাহসটা” পাইছি। আর আপনার হাসু চোর না, মনে জোর আছে। কাউরে ডরাই না! দলের লোকজন, আত্মীয়স্বজন যাই করুক না কেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে জনগণের সম্পত্তি চুরি করি নাই কোনদিন। দ্যাশের মানুষও আমারে দুর্নীতিগ্রস্ত মনে করে না। আগে দলের মধ্যে দুর্নীতিশুদ্ধি শুরু করবো, তারপরে একে একে দলের বাইরের অপরাধীগুলানরে ধরবো। যতদিন বাঁইচা আছি আপনার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার চেষ্টায় পিছপা হবো না। আপনি খালি দোয়া কইরেন।
স্বপ্নভঙ্গঃ সুবহে সাদিকে মসজিদ মিনার থেকে ভেসে আসা আজানের শব্দে শেখ হাসিনার তন্দ্রা টুটলো। বাস্তবে ফিরলেন তিনি। অশ্রæশিক্ত হাসিনা গণভবনের শয্যা ঘরে শুয়ে শুয়েই বাবার সাথে তার স্বপ্নকথনগুলো আরেকবার স্মরণে আনলেন। ওদিকে ফজরের ওয়াক্ত যাই যাই করছে। অজু করে নামাজটা পড়তে হবে। বিছানা ছেড়ে নেমে পড়লেন হাসিনা।
(লেখক বাংলা টেলিভিশন কানাডা’র নির্বাহী)