অনলাইন ডেস্ক : ফেব্রুয়ারি বেশির ভাগ সময় ধরে অটোয়া শহরের কেন্দ্রস্থল দখল করে রেখেছিল তারা। বলতে গেলে শহরটিতে তারা অচল করে দিয়েছিল। ‘ফ্রিডম কনভয়’ বা স্বাধীনতা কনভয় নামে করোনা ভ্যাকসিন বিরোধীদের ওই বিক্ষোভে তখন অনেকেই অংশ নিয়েছেন, সমর্থন দিয়েছেন এবং আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। তেমনি একজন হলেন ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার হোপ অঞ্চলের বাসিন্দা মার্টিন জোসেফ এঙ্গেলহার্ট। বিক্ষোভে অংশ নেয়া ও আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য এখন তিনি দুঃখ প্রকাশ করছেন, অনুশোচনায় ভুগছেন। সিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি সেখানে (বিক্ষোভে) যাওয়ার জন্য দুঃখিত। ফ্রিডম কনভয়কে সমর্থন জানাতে গিয়ে আমি আমার সমস্ত সঞ্চয় নষ্ট করেছি। আরও অনেক কিছু হারিয়েছি। এখন মনে হচ্ছে সত্যিই আমি ভুল করেছি।’

হোপ থেকে জুম-এর মাধ্যমে কথা বলার সময় মার্টিন আরো বলেন, তিনি টানা ৩ সপ্তাহেরও বেশি সময় অটোয়াতে বিক্ষোভকারীদের সাথে ছিলেন। এ সময় নিজের ও অন্য সহকর্মীদের জন্য তাকে ১৩ হাজার ডলার ব্যয় করতে হয়েছে। মূলত খাবার ও জ্বালানি ক্রয়ের জন্য ওই অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। আমি বিক্ষোভে অংশ নেয়া ট্রাকারদের জন্য খাবার কিনে দিয়েছি। এখন আমার কিছুই অবশিষ্ট নেই। জরুরি আইনের আওতায় আমার ব্যাংক হিসাবও জব্দ হয়ে আছে। হাতে যে নগদ সঞ্চয় ছিল তাও ফুরিয়ে গেছে।

২৪ শে জানুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত মার্টিনের ব্যাংক স্টেটমেন্টে দেখা যায় তিনি কয়েক হাজার ডলার স্থানান্তর করেছেন এবং কভেট্রি রোডের কাছে একটি গ্যাস স্টেশনে আরও কয়েক হাজার ডলার খরচ করেছেন। বিক্ষোভ চলাকালে তিনি ওই এলাকাতেই অবস্থান করছিলেন। মার্টিন বর্তমানে তার এসইউভি গাড়ি থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়ে বেঁচে আছেন। ব্যাংক একাউন্ট জব্দ হওয়ার সাথে সাথে তাকে তার আগের বাড়িওয়ালা বের করে দিয়েছেন।

বিক্ষোভ দমনে জরুরি আইন জারির পর বিক্ষোভে জড়িত ২৫০ জনেরও বেশি ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। এতে মার্টিনের মতো অনেকেই চরম আর্থিক সংকটে পড়েন। মার্টিন বলেন, বিক্ষোভ চলাকালে আমরা শুনতাম অনলাইন ক্রেডিট তহবিলে আমাদের জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিন্তু সত্যটা হল আমরা এসবের এক শতাংশও দেখিনি। এসব অর্থ কারা ছিল আর কারা পেল তার কোনো হদিস নেই।

কেন বিক্ষোভে অংশ নিতে গেলেন জানতে চাইলে মার্টিন বলেন, টিকা বা ভ্যাকসিনের উপর আমার কখনো আস্থা ছিল না। তাই বলে আমি এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের পক্ষেও ছিলাম না। কিন্তু ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় মন্ট্রিলের একটি হাসপাতালে আমার এক বন্ধু মারা যায়। আমি তাকে শেষ দেখা দেখতে হাসপাতালে যেতে চাইলে ভ্যাকসিনেটেড না হওয়ায় আমাকে সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তারপর থেকেই আমি আন্দোলনের প্রতি আকৃষ্ট হই।

ফ্রিডম কাফেলার খবর পেয়ে তিনিও আরও কয়েকজন এতে যোগ দেন। তখন তিনি ভেবেছিলেন এটি খুবই মহত একটি বিষয় যা ব্যক্তির চেয়ে অনেক বড়। কিন্তু ১১ ফেব্রæয়ারি অন্টারিও প্রিমিয়ার ডোগ ফোর্ড বিক্ষোভকারীদেরকে ‘অবৈধ দখলদার ঘোষণা করেন এবং ১৪ ফেব্রæয়ারি জরুরি আইন জারি করেন। চার দিন পর ট্রাকারদের জ্বালানি সরবরাহের অভিযোগে মার্টিনকে আটক করা হয়। পরে দ্রুত অটোয়া ছেড়ে যাওয়ার শর্তে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। তবে তার ব্যাংক হিসাব ও ডজ ক্যারাভান জব্দ করা হয়। অর্থের অভাবে তিনি এখনও সেটি ছাড়িয়ে আনতে পারেননি।

সাক্ষাৎকারের শেষ দিকে অনুশোচনার সুরে মার্টিন বলেন, আমি অটোয়াবাসীর কাছে ক্ষমা চাই। ভুল পথে মানুষকে সাহায্য করতে চাওয়ার জন্য আমি দুঃখিত। সূত্র : সিবিসি