প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো

হাসান আমিন: গত ৭ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বিভিন্ন প্রভিন্সের প্রিমিয়ারদের সাথে বৈঠকে দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে আরও উন্নত এবং ফলপ্রসূ করার জন্য আগামী ১০ বছরে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। উল্লেখ্য, করোনা মহামারীর পর থেকে কানাডার হাসপাতালগুলো স্বাস্থ্যকর্মীদের সংকটে ভুগছে। সেই সাথে সেবা পাওয়ার জন্য মানুষকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এমনকি, সা¤প্রতিক সময়ে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় রোগী মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

কানাডার স্বাস্থ্যসেবায় দেশের সকল নাগরিক এবং স্থায়ী অভিবাসীরা বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় হাসপাতালে সেবা নিতে পারেন এবং ডাক্তার দেখাতে পারেন। ফেডারেল এবং প্রভিন্সের অর্থের যৌথ তহবিলের স্বাস্থ্যসেবা স্থানীয় পর্যায়ে পরিচালিত হয়। ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে এই তহবিলের প্রায় ২৫ ভাগ অর্থ কানাডা হেলথ ট্রান্সফারের (সিএইচটি) মাধ্যমে প্রভিন্সগুলোতে আসে।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো কানাডার বিভিন্ন প্রভিন্সের প্রিমিয়ারদের কাছে স্বাস্থ্য সেবায় বরাদ্দকৃত অর্থ বিষয়টি উপস্থাপন করার সময় উল্লেখ করেন, এই বরাদ্দকৃত অর্থ যাতে সুষ্ঠুভাবে জনগণের সেবায় ব্যবহৃত হয় সেজন্য প্রভিন্সকে ফেডারেলের কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে। এই শর্তগুলো এই অর্থের ব্যবহারের ক্ষেত্রে এক ধরনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ফলপ্রসূতা এনে দিবে বলে তিনি মনে করেন।

প্রিমিয়াররা বিগত দিনগুলোতে বারবার প্রধানমন্ত্রীকে স্বাস্থ্য খাতে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় বাড়ানোর জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। প্রিমিয়ারদের সাথে বৈঠকের পর গণমাধ্যমকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সব সময় কানাডার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এখানে স্বাস্থ্য সেবা অবশ্যই এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে সরকার চায়, কানাডার মানুষ দেশের প্রচলিত ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, আগামী এক দশকে স্বাস্থ্য সেবায় মোট ১৯৬.১ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬.২ বিলিয়ন যা ইতিমধ্যে বাজেটে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। আগামী দশ বছরে প্রভিন্সগুলোতে কানাডা হেল্থ ট্রান্সফার (সিএইচটি)’র মোট পরিমাণ প্রায় ৬১ ভাগ বৃদ্ধি পাবে। তবে অর্থের বরাদ্দ কানাডার প্রভিন্সগুলোর প্রিমিয়ারদের প্রত্যাশার চেয়ে কম হয়েছে বলে তাঁরা উল্লেখ করেন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর কাছে ২৮ বিলিয়ন বার্ষিক অর্থায়ন দাবি করেছিল। ম্যানিটোবার প্রিমিয়ার হেদার স্টেফানসন বলেছেন, স্বাস্থ্য খাতে ফেডারেল সরকারের এই অর্থ বরাদ্দ তাঁকে ‘হতাশ’ করেছে।

অন্টারিও’র প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড অনেকটা আশাবাদী হয়ে এটিকে একটি ‘সূচনা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি মনে করেন, এই পদক্ষেপ সারা কানাডার স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে এক ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। তিনি প্রধানমন্ত্রীক সাধুবাদ জানান। কারণ এমন উদ্যোগের ফলে জনগণের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবার বিষয়গুলো সবার সামনে আরও ভালোভাবে উঠে আসবে এবং এর পেছনের সমস্যা ও অপ্রতুলতাকে যথাযথভাবে দূর করে সামনের দিকে এগুনো যাবে। তিনি আরও বলেন, ফেডারেলের বর্তমান বরাদ্দ বিস্তর সমস্যা মেটানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ না হলেও নিশ্চয় আগামীতে সেটা প্রয়োজন হারে বৃদ্ধি পাবে।

আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী প্রিমিয়ারদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই বরাদ্দকৃত অর্থ কিভাবে ব্যয় হচ্ছে, বা কানাডার জনগণের স্বাস্থ্য সেবার কোন ক্ষেত্রে ব্যয় হচ্ছে, তার একটা চিত্র যেন ফেডারেল সরকারকে দেওয়া হয়। তিনি মনে করেন, এর ফলে যেমন স্বাস্থ্য খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে, ঠিক তেমনি এর ফলে স্বাস্থ্য খাতের স্বরূপ এবং চিত্র সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

মনে করা হয়, কানাডায় স্বাস্থ্যসেবা অন্যান্য দেশের তুলনায় অত্যন্ত ভালো মানের। কিন্তু অনেক দেশের মতো কোভিড-১৯ মহামারীর পর থেকে এর স্বাস্থ্যখাত ক্রমবর্ধমান চাপ মোকাবেলা করে আসছে। বর্তমানে সেবা পেতে ও সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। কয়েক দিন আগে, নোভা স্কশিয়াতে ৬৭ বছর বয়সী এক মহিলা স্থানীয় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে একজন ডাক্তারকে দেখানোর জন্য সাত ঘন্টা অপেক্ষা করার পরে মারা গেছেন বলে জানা গেছে।

রোগীরাও সার্জারি এবং ডায়াগনস্টিক সেবা পাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার ফলে তাঁরা শারীরিক ও মানসিকভাবে আরও বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, কানাডা তার জিডিপির ১০ ভাগ স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যয় করে, যা প্রায় ব্রিটেনের কাছাকাছি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র তার স্বাস্থ্যসেবা খাতে জিডিপির ১৬ ভাগ ব্যয় করে, যেখানে হাসপাতালের পদ্ধতি এবং প্রেসক্রিপশন ওষুধের খরচ বেশি। কানাডার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ভালো মনে করা হলেও, ব্রিটেন এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশের তুলনায় অনেকটা কম। সূত্র : বিবিসি