অনলাইন ডেস্ক : প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের ছোবলে ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোতে চরম রোগী সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালের ওয়ার্ডে রোগী সঙ্কটের কারণে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। করোনার ভয়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো রোগী হাসপাতালে আসছে না। হাতেগোনা যে কয়েকজন ভর্তি হন তারা মোটামুটি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। ভয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে চিকিত্সকের অনুমতি ছাড়া ভর্তি রোগী পালানোর ঘটনাও ঘটছে অহরহ। একইভাবে সরকারি হাসপাতালের বর্হিবিভাগেও রোগীদের আনাগোনা কমেছে।হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেউ কেউ ভাবছেন হাসপাতালে রোগী নিয়ে গেলে করোনা আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। আবার অনেকেই মনে করেন করোনার জন্য হাসপাতালের চিকিৎসকরা রোগী দেখেননা।
আবার অনেক রোগীরা হাসপাতাল বন্ধ ভেবেও আসছেন না।

সরজমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল(ঢামেক), মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মিটফোর্ড) বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটা ওয়ার্ডের রোগীর শয্যা খালি পড়ে আছে। মুগদা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের ১২৭ টি বেডের মধ্যে রোগী আছেন ১৭ জন। এই ওয়ার্ডের এক নার্স বলেন, সকালে ২৩ জন রোগী ছিলেন। এরমধ্য তিনজন রোগী ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছেন। আর পুলিশ কেসের ৬ জন রোগী পালিয়ে গেছে। সার্জারি ও ইউরোলজি ওয়ার্ডে ৫২ টি বেডের মধ্য ইউরোলজির ২ জন ও সার্জারির ১১ জন রোগী আছেন। নেফ্রোলজি ও ডায়ালাইসিস ওয়ার্ডের পুরুষ ও মহিলার ২৯ টি বেডের মধ্য ১ জন মহিলা রোগী ও ৪ জন পুরুষ রোগী ভর্তি আছেন। ওয়ার্ডের আয়া জাহানারা বলেন, অন্য সময় একটি বেড খালি থাকে না। কিন্তু করোনা আসার পর রোগী অনেক রোগী চলে গেছেন। কয়েকজন কিডনির রোগী মারা গেছেন। এখন নতুন করে কোনো রোগী ভর্তি হচ্ছেন না। শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে সার্জারির ৫৪টা বেডে ১৩ জন ও ইউরোলজির ১৫ টি বেডে ৩ জন রোগী আছেন।

মুগদা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নার্সেস অফিসার মারুফ হোসেন শিকদার বলেন, শনিবার জরুরি বিভাগে মাত্র ৪৪টি টিকেট বিক্রি হয়েছে। অথচ অন্য সময় দেড় শতাধিক টিকিট বিক্রি হয়। কখনও কখনও তার চেয়ে বেশি হয়। দেশে করোনা ধরা পড়ার পর থেকেই রোগী কমতে শুরু করেছে। আউটডোরের রোগীদের ক্ষেত্রে একই অবস্থা। তিনি বলেন, অনেকেই ভাবেন হাসপাতাল বন্ধ। তাই রোগী নিয়ে হাসপাতালে আসেন না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিনটি হটলাইন মোবাইল নম্বর চালু করেছে। এসব নম্বরে ফোন করে রোগীরা বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন। আমরাও জরুরি না হলে হাসপাতালে আসতে নিরুত্সাহিত করি। এদিকে দেশের সবচেয়ে সর্বোচ্চ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের একই অবস্থা। আগে যেখানে গড়ে ১৩০০ থেকে ১৪০০ রোগী জরুরি বিভাগে এসে টিকেট কাটতো এখন সেখানে ৩০০ থেকে ৪০০ টিকেট বিক্রি হচ্ছে। সর্বশেষ ১২ ঘন্টায় এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে টিকেট বিক্রি হয়েছে ৪৭০ টি। তার আগের ১২ ঘন্টায় বিক্রি হয়েছেন ৪৭০ টি টিকেট।

আর সর্বশেষ ১২ ঘন্টায় রোগী ভর্তি হয়েছেন ৬০ জন। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী ভর্তি হন। টিকেট কাউন্টারের কর্মকর্তারা জানান, অবস্থা খুবই খারাপ। এর আগে কখনও এমন হয়নি। যানবাহন চলাচল না করায় এবং করোনা আতঙ্কে রোগীরা হাসপাতালে ভীড়ছেন না। হাসাপাতালের ৭০১, ৭০২, ৮০১ ও ৮০২ মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, অন্য সময় যেখানে রোগীর চাপে পালানোর জায়গা মিলেনা এখন পুরো ওয়ার্ড খালি পড়ে আছে। শুধু মেডিসিন ওয়ার্ড নয় অন্যান্য বিভাগ যেমন, সার্জারি, কিডনি, নিউরো সার্জারি, শিশু বিভাগে রোগী নাই। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের নার্স জেবুন নাহার বলেন, ক্যাজুয়েলটি পুরুষ ওয়ার্ডের ৮৯ টি বেডের মধ্য এখন রোগী ভর্তি আছেন ২৫ জন।

অন্য সময় ফ্লোরে রোগীর সিট দিয়েও চাপ সামাল দেয়া যায় না। আর এখন করোনার ভয়ে রোগীরা হাসপাতালে আসে না। তিনি বলেন, এই ২৫ জন রোগীর অধিকাংশই স্টোকের রোগী। একইভাবে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের ৬০ বেডের মধ্যে ২০ জন রোগী ভর্তি আছেন।পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডের ১১৬ টি বেডে রোগী আছেন মাত্র ১৫ জন। সোহরাওয়ার্দী হাসাপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, শনিবার জরুরি বিভাগে ১০০ টিকেট বিক্রি হয়েছে। আর শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ১৩০টি। স্বাভাবিক সময়ে টিকেট বিক্রি হয় চার শতাধিক। নাম প্রকাশ না করে মেডিসিন বিভাগের এক চিকিত্সক বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হওয়াতে রোগীরা আসছে না। যারা আসছেন তারা ঢাকার রোগী। এর বাইরে করোনা আতঙ্ক আছে। তবে জ্বর সর্দি নিয়ে অনেক রোগী আসেন। তাদের জন্য বাইরে ব্যবস্থা করা আছে। প্রাথমিকভাবে তাদেরকে বাইরের একটি ওয়ার্ডে চিকিত্সা দেয়া হয়।যদি করোনার কোনো লক্ষণ না থাকে তবে তাদেরকে ভেতরের ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। ওদিকে, মিটফোর্ড হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েও একই অবস্থা বিরাজ করছে।