অনলাইন ডেস্ক : সদ্য উন্মোচিত কানাডার প্রথম জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবেলা কৌশল তীব্র তাপদাহে মৃত্যু রোধ, নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী ক্ষতি কমিয়ে আনা এবং বন্যা ও দাবানল-প্রবণ এলাকায় ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য নতুন লক্ষ্যে ফেডারেল সরকারকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে।
এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ কানাডা গত সপ্তাহে প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডে কৌশলটি প্রকাশ করেছে। আটলান্টিক প্রদেশগুলোর মধ্যে প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড একটি যেখানে গত সেপ্টেম্বর হারিকেন “ফিওনা” আঘাত হেনেছিল। এ কৌশলটি প্রণয়নে প্রায় দুই বছর সময় লেগেছে।
কৌশলটি জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব মোকাবেলার বিষয়টি বিবেচনা করেই প্রস্তুত করা হয়েছে। উচ্চ-স্তরের কৌশল নথিতে একাধিক লক্ষ্য সম্পর্কে বলা হলেও কোনো সুনির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। সরকার বলেছে, তার লক্ষ্য হল আরও বিস্তারিত বাস্তবায়ন পরিকল্পনার জন্য পর্যায় নির্ধারণ করা যা পরবর্তীতে চালু করা হবে।
যে কাজটি করা দরকার তা কার্যকরভাবে শুরু করতে সহায়তা করার জন্য সরকার পাঁচ বছরের মধ্যে ১.৬ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারের নতুন তহবিল ঘোষণা করেছে। অর্থ বরাদ্দের উদ্দেশ্য হল দুর্যোগজনিত প্রতিক্রিয়া উন্নত করা, কানাডিয়ানদের তীব্র তাপদাহ ও স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করা এবং দুর্যোগ প্রশমন ও অভিযোজন তহবিল বৃদ্ধি করা।
ইন্স্যুরেন্স ব্যুরো অফ কানাডার মতে, কানাডায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য সরকারী ও বেসরকারী খাত থেকে প্রতি বছর প্রয়োজনীয় তহবিল ৫.৩ বিলিয়ন ডলার অনুমানিক নির্ধারণ করা হয়েছে। নেপথ্যে কথা বলা একজন ফেডারেল কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, নতুন তহবিল হল একটি ‘ডাউন পেমেন্ট’ এবং স্বীকৃতি দিচ্ছে যে জলবায়ু কৌশলটির লক্ষ্য অর্জনের জন্য আরও বেশি তহবিল প্রয়োজন হবে। জরুরী প্রস্তুতি মন্ত্রী বিল বেøয়ার তার ঘোষণায় এটি স্বীকার করেছেন বলে মনে হচ্ছে।
ব্লেয়ার সাংবাদিকদের বলেন, “স্পষ্টতই, সরকারের সমস্ত আদেশ দ্বারা উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে”। এনডিপি বলছে এটা যথেষ্ট নয়। নিউ ডেমোক্র্যাট জরুরী প্রস্তুতির সমালোচক রিচার্ড ক্যানিংস বলেছেন, এটি সঠিক দিক নির্দেশক একটি পদক্ষেপ। এটি বাস্তবায়নে কেবল অনেক সময় লেগেছে। এটি খুবই সামান্য। কানাডিয়ান এবং স¤প্রদায়গুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত করাতে কিছু অর্থপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য আমাদের এখানে আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রয়োজন।
যদিও সরকার এবং স¤প্রদায়গুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলোর জন্য পূর্বাভাস এবং পরিকল্পনা করছে; তবে কৌশল নথি বলে আরও অর্জন করা দরকার। নথিতে বলা হয়েছে, আমাদের সম্মিলিত ক্রিয়াকলাপগুলো প্রায়শই অপর্যাপ্ত বা বিচ্ছিন্ন ছিল এবং এর ফলে কানাডার স¤প্রদায়গুলোর জন্য যে দ্রুততা এবং মানিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হয় তা হয়নি।
দেশের দৃষ্টিভঙ্গি পুনরায় স্থাপন করার প্রত্যাশায় কৌশলটি বেশ কয়েকটি স্তম্ভের উপর নির্ভর করে তৈরী, সেগুলো হল: দুর্যোগের স্থিতিস্থাপকতা, স্বাস্থ্য এবং মঙ্গল, প্রকৃতি এবং অবকাঠামো। সুনির্দিষ্টভাবে না গিয়ে কৌশলটি বেশ কয়েকটি লক্ষ্যের রূপরেখা দেয় যেমন বন্যা, দাবানল এবং চরম তাপদাহ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত বা নিহত মানুষের সংখ্যা হ্রাস করা।
অবকাঠামোগত দিক দিয়ে কৌশলটি তাদের জীবনচক্র জুড়ে অবকাঠামো পদ্ধতিগুলো সনাক্তকরণ, পরিকল্পনা, নকশা, পরিচালনা, অভিযোজন, পরিচালনা এবং বজায় রাখার সমস্ত সিদ্ধান্তে জলবায়ু পরিবর্তনকে সংস্থাপন করার আহ্বান জানায়। কৌশলটি কানাডাকে নতুন নির্মাণ নির্দেশিকা এবং মানদণ্ডের প্রতিশ্রুতি দেয়, বিশেষ করে দাবানল, বন্যা এবং অন্যান্য জলবায়ু-সম্পর্কিত হুমকিপ্রবণ এলাকায়।
এটি প্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি বন্ধ এবং পুরোনো অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য বিস্তৃত লক্ষ্য নির্ধারণ করে। এতে বলা হয়েছে, আদিবাসী স¤প্রদায়ের অবশ্যই তাদের ঐতিহ্যবাহী জমি রক্ষার সুযোগ থাকতে হবে। কৌশলটি শহরের ল্যান্ডস্কেপে (কোনো দেশের আভ্যন্তরীণ ভূভাগ) শহুরে বন এবং জলাভূমি স¤প্রসারণের আহ্বান জানায়। এই প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানগুলো নির্গমন কমাতে এবং শহুরে জনসংখ্যার উপর বন্যা এবং তাপ তরঙ্গের প্রভাবগুলো হ্রাস করতে প্রমাণিত হয়েছে।
কানাডিয়ান ক্লাইমেট ইনস্টিটিউটের অভিযোজন গবেষণা সহযোগী সারাহ মিলার বলেছেন, পরিকল্পনার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো এটি অগ্রাধিকারগুলোর রূপরেখা দেয়। “এটি অপরিহার্য কারণ অগ্রাধিকার নির্ধারণ ছাড়া যে কোন অর্থের পরিমাণ প্রকৃত পার্থক্য নির্ধারণ করতে পারবে না।”
সরকারের নেয়া কৌশলটি একটি জীবন্ত দলিল হিসেবে ধরা হয়। সরকার প্রতি পাঁচ বছর অন্তর এটি হালনাগাদ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করা শুরু করবে। সূত্র : সিবিসি