অনলাইন ডেস্ক : বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত অজানা অন্ধকার বৃত্তেই যেন ঘুরপাক খাচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডের পর ৯ বছরেও শেষই হয়নি এ মামলার তদন্ত। নেই দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি। শনাক্ত কিংবা গ্রেফতার হয়নি খুনিচক্র। চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য আদালত থেকে ৭৮ বার সময় নিয়েছেন র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা।
বারবার পিছিয়ে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন নিহত দম্পতির স্বজন, সাংবাদিক মহলসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। শঙ্কা প্রকাশ করে তাদের প্রশ্ন-তদন্তই শেষ হলো না, তাহলে বিচার কত দূর। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলায় সর্বশেষ গত ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার দিন ধার্য থাকলে তা দেয়নি র্যাব।
আগামী ১১ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন দিন ঠিক করেছেন আদালত। এ নিয়ে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য ৭৮ বার সময় দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
ছেলে ও পুত্রবধূ হত্যা মামলার তদন্তের শেষ দেখতে নয় বছর অপেক্ষা করে হতাশ হয়ে পড়েছেন সাংবাদিক সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মনির। তিনি বলেন, আজ সাগর-রুনি হত্যার আট বছর। অথচ সাংবাদিক হত্যার একটা মামলায় নয় বছরেও তদন্তে কোনো আশানুরূপ ফল নেই।
তদন্ত নিয়ে ‘নাটক করা হচ্ছে’ বলে অভিযোগ করে নিহত সাংবাদিক সাগরের মা বলেন, কিন্তু আমি বিচার চাইতেই থাকব, উপরে আল্লাহ আছেন তো। তিরিশ বছর পর সগীরা মোরশেদ হত্যা মামলার তদন্ত চালু হল, সঠিক আসামি ধরা হল। কয়েকজন সাংবাদিক হত্যার বিচারও শেষ হল। আমরা কেন বিচার পাব না। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না।
সাগর-রুনি দম্পতির একমাত্র সন্তান মেঘের কথা জানতে চাইলে সালেহা জানান, ও বড় হয়ে গেছে। বেশিরভাগ সময় খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকে। নওশেরের (মেহেরুন রুনির ভাই) কাছে মেঘ ভালোই আছে।
চাঞ্চল্যকর এ জোড়া খুনের নয় বছরেও বিচার শুরু না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলম রোমান। তিনি বলেন, মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। কোনো কূলকিনারা দেখছি না। ছোট্ট মেঘ এখন পড়ছে বিকেএসপি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে।
রোমান বলেন, কীভাবে বিচারের তদন্ত শেষ হবে এবং কোনদিন বিচার পাব কিছু বুঝতে পারছি না। হতাশার গহ্বরে আছি। আশার কোটাও শূন্য। তদন্তের কার্যক্রম নিয়ে রোমান বলেন, বর্তমানে যারা তদন্ত করছে অথ্যাৎ র্যাব, তারা ব্যর্থ হলে বলবে। এটা রাষ্ট্রের বিষয়, আমি কিছু বলব না। তবে আমরা খুনিদের কঠোর বিচার চাই।
জানা গেছে, কয়েক মাস আগে এক অগ্রগতি প্রতিবেদনে র্যাব আদালতকে জানায়, ‘ডিএনএ পরীক্ষার প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী সাগরকে বাঁধার জন্য ব্যবহৃত চাদর ও রুনির টি-শার্ট হতে প্রাপ্ত নমুনা পরীক্ষণে প্রতীয়মান হয় উক্ত হত্যাকাণ্ডে কমপক্ষে দুজন অপরিচিত পুরুষ জড়িত ছিল।’ এ অপরিচিত অপরাধী শনাক্তকল্পে ডিএনএ পরীক্ষাকারী যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ল্যাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে।
জানা গেছে, সব মিলিয়ে এ মামলায় আট সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন -রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মো. সাইদ, মিন্টু, কামরুল হাসান ওরফে অরুণ, সাগর-রুনির ভাড়া বাসার নিরাপত্তা প্রহরী এনামুল, পলাশ রুদ্র পাল ও নিহত দম্পতির বন্ধু তানভীর রহমান। এদের মধ্যে প্রথম পাঁচজনই মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র হত্যার ঘটনায় র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেফতার হন। প্রথম পাঁচজন ও নিরাপত্তারক্ষী এনামুল এখনো এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। বাকি দুজন জামিনে আছেন।
মামলার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা খন্দকার শফিকুল আলম বলেন, এফবিআই চার ব্যক্তির ডিএনএ শনাক্ত করেছে। তার মধ্যে দুইটি ডিএনএ সাগর-রুনির। বাকি দুটি ডিএনএর সঙ্গে গ্রেফতার আসামিদের ডিএনএ ম্যাচ করেনি। বাকি দুজনের ডিএনএ যে ব্যক্তির তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারলে মামলার তদন্ত অনেকাংশে এগিয়ে যাবে। ওই দুজনকে’ গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। দুজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ওই রাতে তারা ছাড়া ঘরে ছিল তাদের একমাত্র শিশুসন্তান। হত্যাকাণ্ডের পরের দিনই কারণ অনুসন্ধান করে খুনিদের শাস্তি দিতে সে সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন সময় নিয়েছিলেন ৪৮ ঘণ্টা। কিন্তু নয় বছরে কয়েক দফা তদন্ত কর্মকর্তা বদলেও কোনো আলোর দেখা মেলেনি। হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই মো. নওশের আলম রোমানের করা মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার এসআই জহুরুল ইসলাম। তার কাছ থেকে তদন্তের দায়িত্ব গিয়েছিল ডিবির পরিদর্শক রবিউল আলমের কাছে।






