অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার অনেকটা অকপটেই জানালেন, নভেম্বরের নির্বাচনে হারলেও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে তিনি কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি নন। আরও স্পষ্ট করেই তিনি বলেছেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, কোনো ক্ষমতা হস্তান্তর হবে না।’ ট্রাম্পের ভাষ্য, নির্বাচনে হারলে দেখতে হবে কী হয়েছে।
বুধবার ওয়াশিংটনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি নজিরবিহীন এ মন্তব্য করেন। এর আগেও ট্রাম্প শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে অস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছিলেন। এর পর এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা হলেও ট্রাম্প তার অবস্থান থেকে সরে দাঁড়াননি। ডাকযোগে ভোটের ব্যাপারেও ট্রাম্প এদিন আবার সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। খবর নিউইয়র্ক টাইমস ও বিবিসির।
হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের কাছে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, তিনি কি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেন? জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের দেখতে হবে, কী ঘটছে। আপনি জানেন, আমি ব্যালট (ডাকযোগে) নিয়ে তীব্র আপত্তির কথা জানিয়েছি। ব্যালটই বিপর্যয়। ব্যালট না থাকলে সবকিছুই শান্তিপূর্ণ হবে- সত্যি বলতে কি ক্ষমতা হস্তান্তর হবে না। ধারাবাহিকতা থাকবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন মন্তব্য এর আগে কোনো প্রেসিডেন্ট করেননি বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। দেশটিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও পরাজিত প্রার্থীরা পরাজয় স্বীকার করে বিজয়ী প্রতিদ্বন্দ্বীকে অভিনন্দন জানান। ট্রাম্প বলেন, ডেমোক্র্যাটরা অন্যদের চেয়ে বেশি জানেন যে ডাক ব্যালট নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠেছে। প্রায় ছয় মাস আগে থেকেই ট্রাম্প ডাকযোগে ভোট নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আসছেন। করোনা মহামারির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার বেশি ভোট ডাকযোগে দেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিছু রাজ্যে ইতোমধ্যে ডাকযোগে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার ডাক ভোট নিয়ে সন্দেহের কথা বললেও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা সংশয়ের কোনো কারণ আছে বলে মনে করেন না। ডাক ভোটের কারণে ফলাফল চূড়ান্ত হতে বিলম্ব হলে এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঝামেলা পাকাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ফলাফল আদালতে গড়াবে। এ জন্যই ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টের শূন্য পদে তার প্রতি সহানুভূতিশীল বিচারপতি নিয়োগ দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। রুথ বাডের গিন্সবার্গের মৃত্যুর পর সুপ্রিম কোর্টে বর্তমানে বিচারপতি আছেন ৮ জন। নির্বাচনী ফলাফল আদালতে চ্যালেঞ্জ হলে রায় ৪-৪ এ বিভক্ত হতে পারে। এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, নির্বাচনী ফলাফল সুপ্রিম কোর্টে গড়াবে। এ জন্য ৯ জন বিচারপতি থাকা খুবই জরুরি।’
শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহার ব্যাপারে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির আমেরিকান পলিটিক্যাল হিস্ট্রির অধ্যাপক জুলিয়ান ই জেলিজার বলেন, ট্রাম্প নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে হুমকিতে ফেলছেন। তিনি বারবার এ কথা বলে এটাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের পরপরই এক সময় তার দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী সিনেটর মিট রমনি টুইটারে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘গণতন্ত্রের মৌলিকত্ব হলো শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর। এটা না থাকলে হবে বেলারুশ। প্রেসিডেন্ট সাংবিধানিক নিশ্চয়তাকে শ্রদ্ধা করবেন না- এমন ইঙ্গিত অচিন্তনীয় ও অগ্রহণযোগ্য।’
বিশ্নেষকরা বলছেন, করোনা সংকটসহ নানা ব্যর্থতার কারণে ট্রাম্প এবার হেরে যেতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। এ জন্য আগে থেকেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কৌশল হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এসব কথা বলছেন। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক টাইমসের এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় এগিয়ে আছেন। বাইডেনকে সমর্থন দিচ্ছেন ৫০ শতাংশ নিবন্ধিত ভোটার। অন্যদিকে ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন ৩৬ শতাংশ। বাইডেন ট্রাম্পের চেয়ে ১৪ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন।