FILE PHOTO: Passengers arrive at Toronto's Pearson airport after mandatory coronavirus disease (COVID-19) testing took effect for international arrivals in Mississauga, Ontario, Canada February 1, 2021. REUTERS/Carlos Osorio/File Photo

অনলাইন ডেস্ক : করোনা সংক্রমণ রোধে ভারত ও পাকিস্তানের সাথে বিমান চলাচলে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কানাডা। গত ২২ এপ্রিল দক্ষিণ এশিয়ার এই দুটি দেশের সাথে এক মাসের জন্য যাত্রীবাহী বিমানের সব ধরনের ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দেয় কানাডা। ওই ঘোষণার ফলে আগামী এক মাস ভারত ও পাকিস্তান থেকে যাত্রীবাহী কোনো ফ্লাইট কানডার কোনো বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে না। পরিস্থিতি বিবেচনায় এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরো বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। তবে কার্গো বা পণ্যবাহী বিমান এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।

অটোয়ার ডানপন্থী বিরোধী রাজনীতিকদের তীব্র সমালোচনার মুখে জাস্টিন ট্রুডোর কেন্দ্রীয় লিবারেল সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কানাডায় সা¤প্রতিক করোনা বিস্তার রোধে সরকার যথাযথ ও সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে বিরোধীরা সমালোচনা করে আসছিল। বৃহস্পতিবার জারি করা সরকারি নির্দেশে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভারত ও পাকিস্তানের যাত্রীবাহী সব ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। ওই দিন থেকে আগামী একমাস এই নির্দেশ বলবৎ থাকবে। পরবর্তী প্রয়োজনে সময়সীমা আরো বাড়ানো হতে পারে।

কানডার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স¤প্রতি কানাডায় আসা বিদেশী যাত্রীদের ২০% ভারতীয়। কিন্তু এদের মধ্যে করোনা শনাক্ত হওয়াদের অর্ধেকেরই বেশি ভারতীয়। অর্থাৎ বিমানবন্দরে বিদেশি যাত্রীদের বাধ্যতামূলক করোনা পরিক্ষার পর দেখাগেছে মোট আক্রান্তের ৫০% ই ভারতীয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী পেটি হাজডু বলেন, বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের মধ্যে আক্রান্ত ভারতীয়দের সংখ্যা সত্যিই উদ্বেগজনক। এছাড়া ভারত ও পাকিস্তানের করোনা পরিস্থিতির দিকেও আমাদের নজর আছে। দেশ দু’টিতে বিশেষ করে ভারতে এই মুহূর্তে পরিস্থিতি সত্যিই ভয়াবহ। আমাদের গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ভারতের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে ভারতে গত বৃহস্পতিবার সংক্রমণের বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে। ওই দিন দেশটিতে সরকারি হিসেবেই ৩ লাখ ১৪ হাজার ৮ শত ৩৫ জন করোনা রোগি শনাক্ত হয়। এর আগে একদিনে সর্বোচ্চ রোগি শনাক্তের রেকর্ড হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। গত জানুয়ারিতে সেখানে ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩০ জন রোগি শনাক্ত হয়েছিল। ভারতে সংক্রমনের ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি মৃত্যুর হারও বেড়েছে। দেশটিতে ইতোমধ্যে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ২ লাখের কাছাকাছি। সংক্রমণ ও মৃত্যুহার ঠেকাতে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অক্সিজেন ও টিকা সংকটের জন্য সৌদি সরকারকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।

এদিকে করোনার ‘ডাবল মিউট্যান্টের’ আতংকের রেশ শেষ না হতেই ভারতে থাবা বসিয়েছে ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট’। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯ ভাইরাসের ৩টি আলাদা ধরণ মিলে তৈরি হওয়া এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি। এছাড়া আক্রান্ত রোগীর অবস্থাও দ্রæত অবনতি হচ্ছে এই নতুন ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণে। ফলে আক্রান্তদের অনেকে চিকিৎসা নেয়ার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। দ্রুত এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া গেলে সংক্রমণ সুনামীর আকার ধারণ করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নতুন স্ট্রেনটি সব বয়সীদের এমনকি শিশুদেরও সংক্রমিত করছে। যার ফলে সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়ছে।

ভারতে করোনার এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যে দেশটির সাথে যোগাযোগ বাতিল করেছে। ব্রিটেন ভারতকে ‘রেড জোন এরিয়া’ ঘোষণা করে সেখান থেকে বিমানের সব ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে। ফ্রান্স তাদের দেশে ভ্রমণকারী সব ভারতীয়দের জন্য বিমানবন্দরে ১০ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের নির্দেশ দিয়েছে। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতও তাদের দেশে ভারতীয় ফ্লাইট নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশও ভারতের সাথে ১৪ দিনের সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।

অন্টারিও ও কুইবেকসহ কানাডার সবচেয়ে জনবহুল ১০টি প্রদেশের চিফ মিনিস্টাররা স¤প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারকে এক চিঠিতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ওপর বিধি নিষেধ আরোপের দাবি জানিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় যোগাযোগমন্ত্রী ওমর আলযাবরা বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের ফ্লাইট আপাতত ১ মাসের জন্য বাতিল করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে অন্য যে কোনো দেশের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নিতে তার সরকার কোনো প্রকার দ্বিধা করবে না। সূত্র : ঢাকা ট্রিবিউন