সুহেল ইবনে ইসহাক, টরন্টো, কানাডা : বছরে প্রায় আট মাস কানাডা বরফে আচ্ছাদিত থাকলেও ভালোবাসার রং, আড্ডার রং, লোকজ ভাবনা, বাংলার ঐতিহ্য ভালোবাসা বিনিময়ে এখানকার প্রবাসী বাঙালিরা কখনও পিছিয়ে থাকেন না। তবে এবারের দৃশ্যটা ভিন্ন। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সব কিছুই বন্ধ হয়ে আছে। এ কারণে এবার প্রবাসী জীবনের আনন্দ জয়গান আর পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ভিডিও কনফারেন্সের মধ্য দিয়ে। কানাডাবাসী যতটা পারছেন মেনে চলছেন নিয়মকানুন আর সামাজিক দূরত্ব। মুসলিম স¤প্রদায়ও রমজান মাসে ঘরে বসেই তারাবীহ নামায আদায় করছেন। কোথাও যাওয়া থেকে বিরত থেকেই ঘরে বসেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ইফতারি আয়োজন করছেন। তবে সরকারের দেয়া বিধি-নিষেধ, সামাজিক দূরত্ব আর ঘরে বসে থাকলেও বাঙালির চিরাচরিত ঈদুল ফিতরের উৎসব যেন মনের গহীনে ধাবমান। বাইরে বের হয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে না পারলেও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম অনেক কিছু সহজ করে দিচ্ছে। ক্রেতাদের সুবিধার্থে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বেচাকেনা করছেন অনলাইনে। বাহারি রকমের শাড়ি, চুড়ি, কানের দুলসহ সাজগোজের নানা রকমের সরঞ্জাম পাওয়া যাচ্ছে সেখানে। পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবি আর ছোট ছোট শিশুদের জামা কাপড়ও পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে। সব মিলিয়ে আসন্ন ঈদুল ফিতরে অনলাইন কেনাকাটা ও কার্বসাইড পিকআপ পদ্ধতিতে কানাডা এখন জমজমাট। বাহারি রঙের শাড়ি-কাপড়ে শিশু থেকে শুরু করে মধ্যবয়সীরা মডেল সেজে পরিবেশন করছেন তাদের বিভিন্ন পণ্যর সমাহার। বিভিন্ন মাধ্যমে চলছে ডেলিভারির ব্যবস্থা। আর এসব পুরোপুরি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলেই করা হচ্ছে।
টরন্টোবাসী গৃহকর্ত্রী মাহবুবা জানান, বাচ্চাদের জন্য কিছু অনলাইনে অর্ডার করেছি। কিন্তু বাচ্চাদের জন্য পোশাকের মাপঝোক ঠিকমতো পাওয়া যায় না।” তারপরও এই পরিস্থিতিতে নিরাপদ থেকে এভাবেই ঘরে বসে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতিতে তিনি তৃপ্ত।

আরেক গৃহকর্ত্রী সাবরিনা এই প্রতিবেদককে বলেন, “এই মুহূর্তে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য সচেতনতা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেঁচে থাকলে ঈদ অনেক আসবে, কিন্তু সময়টা আমাদের অনুধাবন করতে হবে। অনলাইনে কেনাকাটার অর্ডার দিয়েছি। ঘরে বসেই পরিবার-পরিজন নিয়ে এবার ঈদ করব, ইনশাআল্লাহ।”

টরন্টোবাসী নাঈম জানালেন, “সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটার ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল এবং সামাজিক মিডিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই মুহূর্তে কেনাকাটার চাইতে এই মহামারিকে কিভাবে অতিক্রম করব এটাই আমাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয়।”

অশোয়ার এক সচেতন গৃহকর্ত্রী সুরাইয়া জানান, “সরাসরি না দেখতে পেলেও ভার্চুয়াল পদ্ধতির মাধ্যমে তিনি এবার ঈদের জামা কাপড় কিনেছেন। তিনি বলেন, বাস্তবে কেনার যে আনন্দ তা ভীষণভাবে মিস করছি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে কোথাও না গিয়ে ঘরে বসেই ঈদ পালন করার পরিকল্পনা নিয়েছি।”

টরন্টোর একটি অভিজাত পোশাক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার বাংলা কাগজকে জানালেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে বেচাকেনা তেমন নেই। তবে অনলাইনে কিছু কিছু অর্ডার পাচ্ছেন। নিয়মিত ক্রেতার পাশাপাশি নতুন ক্রেতারাও অর্ডার দিচ্ছেন। তিনি আরও জানান, সবই সম্ভব হচ্ছে ভার্চুয়াল পদ্ধতির কারণে।”

টরন্টোবাসী বাংলাদেশের এক সাবেক জনপ্রতিনিধি মিসবাহুল কাদির ফাহিম বাংলা কাগজকে বলেন, “আশা করি বৈশ্বিক মহামারি খুব দ্রæত কমে যাবে, সবকিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠবে, করণামুক্ত পরিবেশে পরবর্তী ঈদ উদযাপন করবো” বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।

বাঙালি কানাডার মুসলমানেরা দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের করোনাকালীন প্রচলিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দ উপভোগ করবে, এমনটাই প্রত্যাশা কানাডায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের।