অনলাইন ডেস্ক : অন্টারিওর প্রিমিয়ার ডোগ ফোর্ড বলেছেন, তার প্রভিন্সে বৈদ্যুতিক গাড়ি বা ইলেকট্রিক ভিহিকলের (ই ভি) বিক্রয় কমে যাওয়া সত্বেও এই গাড়ির দামে আর কোনো রিবেট বা ছাড় দেয়া হবে না। অর্থাৎ পরিবেশ বান্ধব এই গাড়ির বিক্রয় বাড়াতে দাম কমানোর নীতির পথে ফিরে যাবে না ফোর্ড প্রসাশন। গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। অন্টারিওতে বিদ্যুত চালিত গাড়ির ব্যবহার বাড়াতে ‘মূল্য ছাড়ের’ নীতি ফিরিয়ে না আনার ঘোষণা দিয়ে ডোগ ফোর্ড বলেন, যে সব মিলিয়নিয়ার এক লাখ ডলার ব্যয় করে ইলেকট্রিক কার ক্রয় করতে পারেন তাদের জন্য আমি আবার মূল্য ছাড় দেব না। প্রসঙ্গত লিবারেল প্রিমিয়ার ক্যাথলিন ওয়েনি গ্রিণহাউস গ্যাসের নির্গমন কমানোর জন্য পেট্রল চালিত গাড়ির বদলে বৈদ্যুতিক গাড়ি ক্রয়কে উৎসাহিত করতে এই গাড়ির দামে ছাড় দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে ফোর্ড সরকার ‘ইলেকট্রিক অ্যান্ড হাইড্রোজেন ভিহিকল ইনসেনটিভ প্রোগ্রাম’ নামে ওই কর্মসূচী বাতিল করে।

বর্তমানে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ও কুইবেকে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার যে হারে বাড়ছে অন্টারিওতে তা হচ্ছে না। পরিবেশ দুষণ কমাতে মূলত সারা বিশ্বেই বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ানোর দিকে জোর দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এক্ষেত্রে মূল সমস্যা গাড়ির উচ্চ মূল্য। এই গাড়ি পরিবেশ বান্ধব ও এর জ্বালানী খরচ অনেক কম হলেও এই গাড়ি তৈরিতে যে বিশেষ ব্যাটারি লাগে সেই লিথিয়াম আয়রন ব্যাটারির দাম আকাশ ছোঁয়া। তাই এই গাড়ির দামও বেশি।

সরকারের খরচ কমানোর নীতির আওতায় ফোর্ড প্রশাসন গাড়ির ভর্তুকির নীতি বাতিল করার পর অন্যান্য প্রভিন্সের তুলনায় অন্টারিওতে ইভির বিক্রয় কমে গেছে। সমালোচকেরা বলছেন এতে পরিবেশ দূষণও বেড়ে যাবে। সরকারি হিসাবেই দেখা গেছে যে, বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহারের ফলে বায়ু দূষণ অনেকটাই হ্রাস পায়। কিন্তু যে সব প্রভিন্সে এই গাড়ি ক্রয়ে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে সেখানে এর বিক্রয় বাড়লেও অন্টারিওতে কমছে। ২০২১ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় ইলেকট্রিক কারের বিক্রয় বেড়েছে সর্বোচ্চ ১৩%। এছাড়া কুইবেকে ৯.৯ শতাংশ এবং উয়কুনে ৪.৭ শতাংশ বিক্রয় বাড়লেও অন্টারিওতে এই গাড়ির বিক্রয় বেড়েছে মাত্র ৩%।
শহর কেন্দ্রিক হিসেবেও অন্টারিওর রাজধানী টরন্টো ইলেকট্রিক কারের ব্যবহার বৃদ্ধির হারে অনেক পিছিয়ে আছে। ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার রাজধানী ও প্রধান শহর ভ্যাঙ্কুবারে ইভির ব্যবহার ১৫.৬%, কুইবেকের মন্ট্রিলে ১০.৯% আর টরন্টোতে মাত্র ৪%।

ফোর্ড প্রশাসন বলছে তারা ইলেকট্রিক কারের ব্যবহার বাড়াতে দাম কমানোর পরিবর্তে ব্যাটারির উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়েছে। এছাড়া এই গাড়ির ব্যবহার সহজ করতে চার্জিং পয়েন্টও বাড়ানো হবে। সরকারের যুক্তি হচ্ছে, লিথিয়াম-আয়রন ব্যাটারির উৎপাদন ও চার্জিং পয়েন্টের সংখ্যা বাড়ানো হলে গাড়ির দাম এমনিতেই কমে আসবে। তখন সবাই পরিবেশ বান্ধব এই গাড়ি ক্রয়ে আগ্রহী হবে।

তবে সরকারের এই নীতির সমালোচনা করেছে বিরোধী দল এনডিপি লিবারেল পার্টি ও গ্রিণ পার্টি। তারা বলছে ব্যাটারি উৎপাদন বাড়িয়ে গাড়ির দাম কমানোর নীতি একটি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা। কিন্তু পরিবেশ রক্ষায় আমাদের হাতে এত সময় নেই। বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে যা করার তা এখনই শুরু করতে হবে। অন্যথায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। বিরোধী দলগুলো আরো বলছে, আগামী নির্বাচনে তারা জয়ী হলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দামে ছাড় পুনরায় চালু করবে। সূত্র : সিবিসি