অনলাইন ডেস্ক : অন্টারিওর সাউদাম্পটন এলাকার ক্রিস্টিনের ফার্মেসিতে এখন দিন শুরু হয় করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা শত শত নারী-পুরুষ আর শিশুদের তাপমাত্রা মাপা, করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা আর নতুন রোগীদের নাম নিবন্ধন করার মধ্য দিয়ে। সকাল ৯টায় ফার্মেসির দরজা খোলা আর টেলিফোন লাইনগুলো চালুর পর থেকে বিকাল পর্যন্ত বিরামহীন চলতে থাকে এই কার্যক্রম। কানাডার সর্বত্রই এখন একই চিত্র। ওমিক্রনের বিস্তার বাড়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা পরীক্ষা আর ভ্যাকসিন নেয়ার ভিড়।
স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। ফার্মাসিস্ট ক্রিস্টেন ওয়াট বলেন, দেশে এখন আবার ‘পুরোপুরি মহামারি’ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আমার ফার্মেসির ৮ টি ফোন বিরামহীনভাবে বেজেই চলছে, অনেকে সরাসরি এসে নাম নিবন্ধন করছে। কেউ কেউ ৭০/৮০ মাইল গাড়ি চালিয়ে এসেছে করোনা পরীক্ষা করাতে। কেননা তারা তাদের বাড়ির কাছে কোন ফার্মেসিতে নাম নিবন্ধনের সুযোগ পায়নি। দেশ জুড়ে ব্যস্ত ফার্মেসি ওয়ার্কাররা দম ফেলার সুযোগ পাচ্ছেন না। অসহনীয় কাজের চাপে তারা ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ছেন।
বিশেষ করে কয়েক সপ্তাহ ধরে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে এক দিকে সরকার বুস্টার ডোজের বয়স ও সময় সীমা কমিয়েছে অন্য দিকে আক্রান্তও বাড়ছে। সরকার বিভিন্ন প্রদেশে বুস্টার রোল আউট ত্বরান্বিত করায় কাজের চাপ বহুগুণ বেড়ে গেছে।
যে সব ফার্মেসিতে করোনা পরীক্ষা করা যায়, পরীক্ষার জন্য ‘টেস্ট কিট’ পাওয়া যায় এবং করোনার টিকা নেয়া যায় সেগুলোতে ভিড় বেশি। টেলিফোনে যারা এপয়েন্টম্যান্ট পাচ্ছেন তারা সৌভাগ্যবান। আর যারা স্বশরীরে এসে নাম নিবন্ধন করছেন তাদের সব কাজ সারতে কয়েক ঘন্টা লেগে যাচ্ছে। মহামারির কারণে ফার্মাসিস্টদের এখন এসব বাড়তি কাজ করতে হচ্ছে। ক্রিস্টেন ওয়াট বলেন, আমাদের এখন এসব দায়িত্ব পালন করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। কাজের চাপে মরে গেলেও আমাদের দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে।
তিনি আরো বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সামর্থ দিয়ে চেষ্টা করছি। করোনার কারণে বাড়তি কাজের পাশাপাশি ফার্মাসিস্ট হিসেবে আমরা আমাদের নিয়মিত দায়িত্ব ও পালন করে যাচ্ছি। রোগীদের যতœ নেয়া, ওষুধ সরবরাহ করাসহ আমাদের কোন কাজই বন্ধ নেই। অন্টারিও ফার্মাসিস্ট অ্যাসেসিয়েশনের সিইও জাস্টিন বেটস বলেছেন, গত শরতে এখানে ফার্মেসিগুলোর কার্যকলাপে বলতে গেলে স্থবিরতা ছিল। কেননা ৯০% লোকের টিকা দেয়া হয়ে গিয়েছিল। করোনা পরিস্থিতিও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল। সবকিছুই প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসছিল। ব্যাপকভাবে বুস্টার ডোজের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি হচ্ছিল না।
কিন্তু প্রথমে ডেল্টা ও পরে ওমিক্রন এসে সব কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। এই মুহূর্তে সংক্রমণ পরিস্থিতি আবার ‘উত্থানের শিখরের’ দিকে ধাবিত হচ্ছে। দেশে ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। কিন্তু এগুলো প্রতিটি বাহুতে পুশ করার মতো সময় বের করাই কঠিন হয়ে পড়ছে। মানুষ ভ্যাকসিনের এপয়েন্টম্যান্ট পেতে হন্যে হয়ে এক কেন্দ্র থেকে আরেক কেন্দ্রে ঘুরছে। স্বাস্থ্যকর্মীরাও তাদের চাহিদা পূরণে গলদঘর্ম হচ্ছেন। সত্যিকার অর্থে তারা এমন পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়েননি। সূত্র : সিবিসি