অনলাইন ডেস্ক : করোনা ভয়ংকর দাপট থেকে যখন কানাডার জন জীবন অনেকটা স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসছিল, তখন আবার ওমিক্রন নামক করোনার ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টটি কানাডাসহ পৃথিবীর অনেক দেশের জন জীবনকে কঠিন হুমকির দিকে ঠেলে দিয়েছে। শুধু অন্টারিও’তে এখন প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজারের মত মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। গত রবিবার অন্টারিও’তে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের এবং হাসপাতালগুলোর আইসিইউ’তে বর্তমান করোনা আক্রান্ত রুগী ভর্তি হয়েছে ৪০০ জনের বেশি। গত ৬ মাসের বেশি সময় হাসপাতালগুলো চিত্র এমন ছিল না। করোনার এই ক্রমশ বেড়ে যাওয়া রুগীদের চাপে হাসপাতালগুলোতে কিছুটা কম জরুরী সব ধরনের অপারেশন এবং সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবারে করোনায় আক্রান্ত ১১,৯৫৯ জনের মধ্যে ১,৬৪৩ জন একেবারে কোভিড টিকা নেন নি। ৪১৪ জন একটি ডোজ নিয়েছেন এবং ৯,৫২২ জন দুটি ডোজই নিয়েছেন। বাকী ৩৮০ জনের টিকা নেবার তথ্য পাওয়া যায় নি। মোট ৪৯,৪২২ জনকে পরীক্ষা করা হয় এবং ভাইরাসের উপস্থিতির হার হচ্ছে শতকরা ২৭.৭ ভাগ। নিঃসন্দেহে এই হার খুবই ভয়ংকর। আক্রান্ত রুগীদের মধ্যে ২,৪১৯ জনকে অন্টারিও’র বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গত রবিবার টরন্টো প্যারামেডিকস ইউনিয়ন থেকে জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্য পরিষেবা একেবারে ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে যাচ্ছে। প্যারামেডিকস এর ৪১৬ ইউনিটের প্রধান মাইক মেরিম্যান জানান, গত শনিবার রাতে মরণাপন্ন কোন রুগীকে হাসপাতালে বহন করার মত কোন এম্বুলেন্স ফাঁকা ছিল না। বিরতিহীনভাবে রুগী বহনে ক্লান্ত প্যারামেডিকসকর্মী এবং কর্মীদের অনেকেই ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য সেবা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা গভীর চিন্তার বিষয়। এদিকে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের মত জরুরী বিভাগও নিজেদের কর্মীদের ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ায় তারাও তাদের স্বাভাবিক সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ওমিক্রনের আক্রান্তের ফলে জরুরী বিভাগের শতকরা ১২.৭ ভাগ কর্মী কাজ থেকে ছুটিতে আছেন।
ওমিক্রনের স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের ফলে হাসপাতাল, লং টার্ম কেয়ার হোম এবং বয়স্ক সেবা কেন্দ্রগুলো কর্মী সংকটে ভুগছে। সেই সাথে তাদের প্রচণ্ড কাজের চাপ এবং কম পারিশ্রমিকের জন্য অনেকেই স্বাস্থ্যকর্মীর কাজ ছেড়ে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছেন। কুইবেকের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, করোনার শুরু হবার পর প্রায় ২০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নিজেদের পেশা পরিবর্তন করেছেন। খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রধানতম উপায় হচ্ছে, করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। কুইবেকে এর বৃদ্ধির হার কমাতে কয়েকটি শহরে সান্ধ্য আইন জারি করা হয়েছে। অন্টারিও’তে কঠোরভাবে বিধি নিষেধ মেনে চলার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। কানাডার অন্যান্য প্রভিন্স এবং টেরিটরি’তেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রায় দুই বছর সারা বিশ্বের মানুষ করোনার আগ্রাসনে একেবারে পর্যদুস্ত। মানুষের পূর্বের স্বাভাবিক জীবন যাপন একেবারে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। সেই সাথে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেকটা থেমে গেছে। মানুষের চলাচল এবং মেলামেশায় একটা বিরাট পরিবর্তন হয়ে গেছে। করোনার নতুন নতুন সব ভ্যারিয়েন্ট পৃথিবীকে কোন দিকে নিয়ে যায় সেটা দেখা ছাড়া মানুষের খুব বেশী কিছু করার নেই।