স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের এ দিনে অর্থাৎ ৭ই মার্চ তারিখে বজ্রকণ্ঠে সমগ্র জাতিকে উদ্বুদ্ধ করে লাখো জনতার মাঝে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। এ ভাষণের মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতির স্বাধীন বাংলাদেশের রূপরেখার পরিপূর্ণতা লাভ করে। এটি বাঙালি জাতির জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দিনগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দিন। বাংলাদেশ হাইকমিশন অটোয়া এ উপলক্ষে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করে এবং যথাযথ মর্যাদায় এ দিবসটি উদযাপন করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মান্যবর হাইকমিশনার এবং অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে সকাল ১১.০০ ঘটিকায় অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এরপরই ঐতিহাসিক এ দিবস উপলক্ষে ঢাকা থেকে প্রেরিত মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। এরপর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং এ ভাষণটি UNESCO কর্তৃক “World documentary Heritage” এর অংশ হিসাবে “Memory of the World Register” এ অন্তর্ভুক্ত হওয়া বিষয়ক ডকুমেন্টরি প্রদর্শন করা হয়। অত:পর অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশ ভার্চুয়াল আলোচনা সভা শুরু হয়। উক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন মান্যবর হাইকমিশনার। উক্ত ভার্চুয়াল বিশেষ আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে ছিলেন মাননীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জনাব মাহবুবউল আলম হানিফ এবং একুশে পদক প্রাপ্ত ও যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ড. নুরুন নবী।

ড. নুরুন নবী তাঁর বক্তব্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন যে, তিনি একজন সৌভাগ্যবান যে, তিনি ৭ই মার্চের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পেরেছিলেন। তিনি পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে জনাব মাহবুব উল আলম হানিফ, এমপি বলেন যে, স্বাধীনতা যেমন হঠাৎ একদিনে হয়নি তেমনি ৭ই মার্চ একদিনে হয়নি। ৭ই মার্চের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি জাতিকে কিভাবে স্বাধীনতা এনে দিতে হয় তা বঙ্গবন্ধু জানতেন এবং ৭ই মার্চের ভাষণ তারই প্রতিফলন বহন করে। ১৮ মিনিটের ভাষণটির মধ্যে কোন কিছুর কমতি ছিল না এবং এটি বঙ্গবন্ধুর উপস্থিত বক্তৃতা হিসাবে পৃথিবীর ইতিহাসে চিরকাল একটি অন্যতম ভাষণ হয়ে থাকবে বলে মত প্রকাশ করেন। আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য ও বিখ্যাত লেখক ড. জ্যাকব এফ ফিল্ড কর্তৃক সংকলিত পুস্তক “We shall fight on the beaches; the speeches that inspired History” এর ভূমিকায় তিনজন রাষ্ট্রনায়কের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণটিও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা বাঙালি জাতির জন্য খুবই গর্বের বিষয়। তিনি আরো বলেন যে, বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ব নেতাদের ভাষণগুলো ছিল তাদের দেশের মানুষের একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপরে কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ছিল একটি জাতির জাতি বা রাষ্ট্র গঠনের জন্য পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে যা সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসাবেই ধরা যায়। তিনি উল্লেখ করেন যে, ১৮ মিনিটের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণটি যতবার মানুষ শুনবে ততবারই নতুন নতুন বিষয় জানতে পারবে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণটিতে দু’টি দিকের নির্দেশনা রয়েছে, যার একটি হলো স্বাধীনতার ঘোষণা এবং অন্যটি সকল মানুষের জন্য মুক্তি অর্থাৎ এখানে মুক্তি বলতে বঙ্গবন্ধু সকল মানুষের সমান অধিকার ও মুক্তির কথা বলেছেন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

মান্যবর হাইকমিশনার সভাপতির বক্তব্যে শুরুতেই জাতির পিতাসহ সকল শহিদকে বিনম্র চিত্তে স্মরণ করেন। তিনি সকল আমন্ত্রিত অতিথিসহ ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে সংযুক্ত সকল দর্শকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন যে, ৫১ বছর আগে বঙ্গবন্ধুর যে ভাষণের কারণে দেশ স্বাধীন হয়েছিল তার ফলেই আজ তিনি এ দেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন।

তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ৭ই মার্চই ছিল স্বাধীনতার একটি অনানুষ্ঠানিক ঘোষণা। তিনি বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন, ভাষা আন্দোলনসহ বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে অন্যান্য বক্তারা যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন তাদের তিনি ভূঁয়সী প্রশংসা করেছেন। একই সাথে সকলকে অবহিত করেন যে, বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধু প্রীতম রাষ্ট্র কানাডা যারা স্বাধীনতার পর পরই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। কানাডা বাংলাদেশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন শিক্ষা-সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অন্যান্য বিষয়ে সাহায্য ও সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এ জন্য তিনি কানাডার সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

মান্যবর হাইকমিশনার তাঁর বক্তবে বলেন যে, অটোয়াস্থ বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের জন্য কানাডার সরকারের কাছে ডিপ্লোমেটিক জোনে একটি প্লটের জন্য আবেদন করা হয়েছে দূতাবাস ভবন নির্মাণ সাপেক্ষে সেখানে বঙ্গবন্ধুর সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। তিনি উপস্থিত সকলকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ইতিবাচকভাবে তুলে ধরার জন্য এবং একইসাথে নেতিবাচক প্রচারণায় বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য সকলকে আহ্বান জানান। কিছু কিছু বাংলাদেশি কানাডিয়ান এখানে বসে বাংলাদেশ বিরোধী বিভিন্ন অপপ্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্ট করছে তাদের বিষয়ে সজাগ থাকার জন্য সকলকে আহ্বান জানান।

তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত করতে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মিশনের কনস্যুলার সেবাকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা হয়েছে এবং বিষয়টি নতুন বলে এ বিষয়ে কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে সরাসরি হাইকমিশনে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেন। পরিশেষে মান্যবর হাইকমিশনার আবারও বঙ্গবন্ধুসহ সকল শহিদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি