আহমেদ আমিন : স¤প্রতি ব্যাংক অফ কানাডা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য পূর্ণ শতাংশ পয়েন্টের সুদের হার বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। ৫০ লাখ ডলার পরিবর্তনশীল মর্টগেজ রেটসহ যে কারো জন্য এই সর্বশেষ বৃদ্ধির অর্থ হল, মার্চ মাসে রেট বাড়তে শুরু করার আগে তারা যা পরিশোধ করত তার তুলনায় তাদের মাসিক পেমেন্ট ৫৫০ ডলার বেড়ে যাবে।

যে কোনভাবেই এখানে ট্রুডোর দোষ কোথায়? কারণ তিনি এখন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মুদ্রাস্ফীতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন এবং এটি মোকাবেলায় কিছুই করেননি!
গত বছরের আগষ্টে যখন ট্রুডোকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, তিনি মনে করেন কিনা ব্যাংক অফ কানাডার সুদের হার এবং অন্যান্য আর্থিক নীতির সরঞ্জামগুলোর মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি কম রাখার উপর মনোযোগ দেয়া উচিত? তিনি সুবিদিতভাবে বলেছিলেন, “আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন যদি আমি আর্থিক নীতির কথা না ভাবি। আপনারা বুঝতে পারবেন যে আমি পরিবার সম্পর্কে চিন্তা করি।” ট্রুডো অর্থনীতি বা তার কাজই বোঝেন না, যদি তিনি বুঝতঈ না পারেন যে মুদ্রানীতি মুদ্রাস্ফীতিকে প্রভাবিত করে এবং মুদ্রাস্ফীতি পরিবারকে প্রভাবিত করে।

কানাডা এখন মূল্যস্ফীতির উচ্চ হার মোকাবেলা করছে যা ৪০ বছরে দেখা যায়নি। পেট্রল, খাদ্য ও পোশাকের দাম সবই বেড়ে যাচ্ছে – এগুলো মৌলিক প্রয়োজনীয়তা, বিলাসিতা নয়; যা ছাড়া মানুষ থাকতে পারে। এখন মুদ্রাস্ফীতি অনেক বেশি, সুদের হার নাটকীয়ভাবে বেড়েই চলেছে। এমন সময় যখন জীবনযাত্রার এই ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, ট্রুডো আবারো গর্ব করে বলছেন যে তিনি শিশু যত্নের খরচ কমিয়েছেন।

“একটি সরকার হিসাবে, আমরা জনগণকে সবসময় সমর্থন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আমরা প্রবীণদের সমর্থনে সিসিবি বৃদ্ধির সাথে ধাপে ধাপে শিশু যত্নের খরচ অর্ধেকে কমিয়ে এনেছি, পরিবারগুলোকে সমর্থন করার জন্য বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছি,” স¤প্রতি বলেছেন ট্রুডো।

সাপ্লাই চেইন ইস্যু, চীনের কোভিড জিরো নীতি, ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং অন্যান্য কারণে মুদ্রাস্ফীতি একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হতে পারে, তবে এর পেছনে কানাডার ফেডারেল সরকারের ব্যয় সহ অভ্যন্তরীণ কারণও রয়েছে। বেসরকারি খাতের জোষ্ঠ্য অর্থনীতিবিদরা কয়েক মাস ধরে সতর্ক করেছেন যে যদি সরকারী ব্যয় কমানো না হয়, তাহলে এটি ব্যাংক অফ কানাডার উপর সুদের হার বাড়ানোর জন্য আরও চাপ সৃষ্টি করবে এবং ফলস্বরূপ এটি পারিবারিক বাজেটের উপর চাপ সৃষ্টি করবে।

ব্যাংক অফ মন্ট্রিলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডগ পোর্টার গত মাসে বলেছিলেন, “মুদ্রাস্ফীতি কমাতে আর্থিক নীতির মতোই রাজস্ব নীতির ভূমিকা রয়েছে।” ট্রুডো তার নেতৃত্বে কানাডার অর্থনীতি নিয়ে বড়াই করে বলেছেন যে, এখন মহামারীর আগের চেয়ে বেশি লোক কাজ করছে। কিন্তু তিনি যেটা বলেননি তা হল, চাকরির এই বৃদ্ধির বেশিরভাগই সরকারি চাকরি।
এটিও উল্লেখ করা উচিত যে, ফেডারেল সরকার বর্তমানে পাসপোর্ট থেকে শুরু করে অভিবাসন প্রক্রিয়াকরণ, ভিসা বা বিমানবন্দরে দ্রুত স্ক্রিনিং পর্যন্ত মৌলিক পরিষেবাগুলো এত সব অতিরিক্ত সরকারি কর্মী থাকা সত্তে¡ও দিতে পারছে না। জাস্টিন ট্রুডোর মত আমাদের এমন একজন প্রধানমন্ত্রী আছেন, যার সরকার তার নিজের খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না বরং নিজেদের কর্মের মাধ্যমে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়াতে সাহায্য করে।

তথাপি ট্রুডো সরকার এখনও মৌলিক পরিষেবাগুলো সরবরাহ করতে পারছে না, যার জন্য জনগণ অর্থ প্রদান করে এবং তার উপর নির্ভর করে। বেসরকারি খাতে এমনটা হলে আপনি চাকরি হারাবেন। কিন্তু ট্রুডো বিমানে করে সারা দেশ জুড়ে ঘুরে ঘুরে আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে বক্তৃতা দিচ্ছেন এবং সামজিক ফটো অপে একেরপর এক ছবি শেয়ার দিয়েই যাচ্ছেন। গত আগস্টে নির্বাচনের সময় ট্রুডো তার অজ্ঞতা প্রদর্শন করার পরেও আমরা সবাই এখন তাকে নির্বাচিত করার জন্য মূল্য পরিশোধ করছি। লিবারেলরা এমনকি সবচেয়ে প্রাথমিক সরকারি পরিষেবাগুলোও সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

ইতিমধ্যে, কানাডা জুড়ে লোকেরা পাসপোর্ট সুরক্ষিত করার প্রয়াসে আক্ষরিক অর্থে সার্ভিস কানাডা লোকেশনের বাইরে অবস্থান করছে। বিমানবন্দরগুলো ফ্লাইট বিলম্ব ও বাতিল, হারানো লাগেজ, দীর্ঘ লাইন এবং কর্মীদের ঘাটতিতে ভুগছে। পাইলটরা প্রত্যয়িত বা পুনরায় প্রত্যয়িত হতে পারছে না। কারণ, কানাডিয়ান ফ্লাইয়ার্স এভিয়েশন কলেজের সভাপতি দারিও ম্যাট্রুনডোলার মতে, ট্রান্সপোর্ট কানাডা “সম্পূর্ণভাবে সুযোগ হাতছাড়া করেছে।” কুইবেকে বিচারকের স্বল্পতার কারণে শত শত আদালতের মামলা স্থগিত করা হচ্ছে।

জরুরী বিভাগগুলো কর্মী এবং সক্ষমতার সমস্যার কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেন্ট জন, এন.বি.-তে উভয় হাসপাতালই গত সপ্তাহান্তে সক্ষমতায় বিশাল প্রভাব পড়েছে। কিছু বাসিন্দা জরুরী সেবা নেয়ার জন্য এক ঘন্টার বেশি গাড়ি চালাতে বাধ্য হয়েছে। মন্ট্রিলে একটি শিশু হাসপাতাল স¤প্রতি রোগীদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়।

তালিকায় থাকা ২.৭ মিলিয়নেরও বেশি আবেদন সহ অভিবাসন ব্যবস্থা জমা পড়ে আছে। যারা কানাডার বাহিনীকে সাহায্য করেছিল সেসব আফগানদের পুনর্বাসনের জন্য নতুন আবেদন গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অনেক আদিবাসী স¤প্রদায়ের এখনও খাওয়ারযোগ্য পানীয় নেই। সরকারের এমন একটি ক্ষেত্র খুঁজে পাওয়া কঠিন, যেখানে সংকট নেই। বিশৃঙ্খলা এবং কর্মহীনতা আপাতদৃষ্টিতে সর্বত্র। এমনকি ট্রুডো উদারপন্থীরা সবচেয়ে মৌলিক সরকারি পরিষেবাগুলোও সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

কানাডিয়ানরা হতাশ যে তারা প্রাথমিক সরকারি পরিষেবাগুলোও যথাসময়ে পাচ্ছেন না এবং দুই বছরেরও বেশি করোনাভাইরাস বিধিনিষেধ মেনে চলার পরে তাদের ছুটির পরিকল্পনাগুলো ব্যাহত হচ্ছে। কিন্তু উদারপন্থীরা তা দেখতে পাচ্ছে না কারণ তারা তাদের কথিত নৈতিক কর্তৃত্বের জন্য পিঠ চাপড়াতে ব্যস্ত।

তাছাড়া ট্রুডো দেশের গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্প ভ্রমণ করার সময় এসব শুনতে চান না। সূত্র : ন্যাশনাল পোস্ট