হাসান আমিন: কানাডার সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ অন্টারিও’র রিয়েল এস্টেট শিল্প নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ভোক্তাদের পর্যাপ্তভাবে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। গত ৮ই ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত অন্টারিও’র অডিটর জেনারেলের এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। অথচ একটি ফ্ল্যাট বা বাড়ি ক্রয় একজন ব্যক্তির জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান একটি সম্পদ নিজের করে নেয়ার সাথে সম্পর্কিত।
অডিটর জেনারেল বনি লাইসিকের ‘ভ্যালু ফর মানি’ অডিট কার্যক্রম ‘রিয়েল এস্টেট কাউন্সিল অফ অন্টারিও’ (আরইসিও) এবং পাবলিক অ্যান্ড বিজনেস সার্ভিস ডেলিভারি মন্ত্রণালয়ের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করেছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠান অন্টারিওর বহু বিলিয়ন ডলারের রিয়েল এস্টেট শিল্পের তত্ত¡াবধান করে থাকে।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত সমালোচনামূলক অডিট প্রতিবেদনে আরইসিও- এর পরিসর নিয়ে উদ্বেগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে আরো যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে তা হল, অভিযোগসমূহ পদ্ধতিগতভাবে চিহ্নিত এবং বিশ্লেষণে আরইসিও- এর ব্যর্থতা থেকে শুরু করে নিয়মিত ব্রোকারেজ পরিদর্শনের অভাব এবং তদন্ত শেষ হয়েছে কিনা এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা বা আদৌ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য কোনো প্রক্রিয়ার অনুপস্থিতি। প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা অনেকগুলো সমস্যা অন্টারিওর বাড়ির ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের জন্য হতাশাজনক। যারা বছরের পর বছর ধরে অভিযোগের তদারক এবং নিয়ন্ত্রণে আরইসিও- এর কঠোরতার অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
অডিট রিপোর্টের প্রতিক্রিয়ায় স্বাতী ধওয়ালে বলেন, “দেখে মনে হচ্ছে আরইসিও শুধুমাত্র রিয়েলটরদের, রিয়েলটরদের দ্বারা, রিয়েলটরদের জন্য; কেবল নিজেদের রক্ষা করার জন্য কাজ করছে।” ধওয়ালে ও তার স্বামী অমল ওয়ালঞ্জ গ্রেটার টরন্টো এলাকায় একটি সন্দেহজনক রিয়েল এস্টেট লেনদেনে কয়েক হাজার ডলার খুঁইয়েছেন। তাদের ওই লেনদেনের সাথে ব্রোকারেজ হোমলাইফ মিরাকল রিয়েলটি লিমিটেডের একজন এজেন্ট জড়িত ছিলো। এ ঘটনার পর তারা গত ফেব্রæয়ারিতে আরইসিও-তে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
ব্রাম্পটন, ওন্ট. এর বাসিন্দা ক্রিস ও বিবি হার্ডিং একই ব্রোকারেজের সাথে তাদের নিজস্ব লেনদেনের বিষয়ে প্রায় দুই মাস পরে গত এপ্রিলে আরইসিও-তে একটি অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন। উভয় দম্পতি রিয়েল এস্টেট এজেন্টদের বন্ধকী জালিয়াতির সাথে জড়িত একটি সা¤প্রতিক সিবিসির মার্কেটপ্লেস তদন্তের অংশ হিসাবে কথা বলেছেন।
তাদের অভিযোগ জমা দেওয়ার পর উভয় দম্পতি আরইসিও থেকে প্রতিক্রিয়া পাওয়ার জন্য কয়েক মাস অপেক্ষা করেছেন। বিবি হার্ডিং বলেন, একজন তদন্তকারী কল করে যা বলেছে তার অর্থ দাঁড়ায় আমরাই দোষী ছিলাম, রিয়েল এস্টেট এজেন্ট নয়।
ধওয়ালে এবং ওয়ালঞ্জের বেলায় আরইসিওর পক্ষ থেকে একটি নোটিশ ই-মেইল করার সাত মাস আগে বলা হয়েছিল যে তাদের অভিযোগ ফাইলটি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, কারণ রিয়েল এস্টেট এজেন্টের বিরুদ্ধে তাদের দায়ের করা অসদাচরণের অভিযোগগুলো “প্রমাণ করা যায়নি।”
যখন সিবিসি নিউজের অনুসন্ধানী দল ‘মার্কেটপ্লেস’ তার গোপন ক্যামেরা তদন্তের অংশ হিসাবে একই ব্রোকারেজ তদন্ত করে তখন এটি ব্রোকারেজ হোমলাইফ মিরাকল রিয়েলটি লিমিটেডের জন্য কাজ করা কিছু রিয়েল এস্টেট এজেন্টদের দ্বারা সন্দেহজনক আচরণের একটি ধরণ খুঁজে পায়।
সে সময় মার্কেটপ্লেসের গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা একটি রেকর্ডে হোমলাইফ মিরাকল রিয়েলটি লিমিটেডের ব্রোকার অজয় শাহ বলেছিলেন, নথিভুক্ত এজেন্টরা ব্রোকারেজের বিক্রয়ের মাত্র একটি অংশ এবং তার তত্ত¡াবধানে তিন হাজার এজেন্ট কাজ করে।
আরইসিও কীভাবে অভিযোগগুলো পরিচালনা করে এবং তদন্ত করে তা অডিটর জেনারেলের রিপোর্টে হাইলাইট করা বিষয়গুলোর মধ্যে একটি ছিল। এতে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে আরইসিও রিয়েল এস্টেট এজেন্ট এবং দালালদের বিরুদ্ধে প্রায় ১১ হাজার ৭০০টি অভিযোগ পেয়েছে। কিন্তু লাইসিক দেখেছেন যে, পদ্ধতিগত প্রবণতা এবং এটির সমাধান করা উচিত এমন সমস্যাগুলো সনাক্ত করার জন্য আরইসিও-এর কোনও ব্যবস্থা নেই। তিনি আরো দেখেছেন যে, আরইসিও প্রাপ্ত অভিযোগগুলোর ৫৫ শতাংশের শ্রেণীবদ্ধ বা কোনো বিবরণ রেকর্ড করেনি।
আরইসিও মার্কেটপ্লেসকে বলেছে, ব্রোকার শাহ তাদের নিজস্ব তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে যা মার্কেটপ্লেসের তদন্তের পর শুরু হয়েছে। যাইহোক, ভোক্তাদের সুরক্ষার জন্য এর ম্যান্ডেট থাকা সত্তে¡ও, আরইসিও- এর পরিচালনা পর্ষদ প্রায় একচেটিয়াভাবে শিল্প প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত বলে অডিটর জেনারেলের রিপোর্টে মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে।
লাইসিক বলেছেন, ভোক্তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে মনোযোগ দেওয়ার জন্য বোর্ডের একটি প্রক্রিয়া থাকা প্রয়োজন, তবে আরইসিও-এর অস্তিত্বের জন্য এটি করা হয়নি। প্রতিবেদনের বিপরিতে আরইসিও তার সামগ্রিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, এটি তার আদেশ প্রদান করতে এবং একটি স্বচ্ছ উপায়ে এর অগ্রগতি এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাবলিক অ্যান্ড বিজনেস সার্ভিস ডেলিভারি মন্ত্রণালয় যোগ করেছে যে, রিয়েল এস্টেট পেশাদারদের নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু আইনী হালনাগাদ ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং আগামী ১ এপ্রিল, ২০২৩ থেকে তা কার্যকর করা হবে। সূত্র : সিবিসি