শিউলী জাহান: বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, কানাডা সংসদের বিজয় দিবস উদযাপন হলো গত ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ টরন্টোর ৩০০০ ড্যানফোর্থ এভিনিউ-এর টরন্টো ফিল্ম ফোরাম মিলনায়তনে।
হৃদয়ে বাংলাদেশ ও বিজয়ের পুরো উষ্ণতাটুকু নিয়ে ছোট পরিসরে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি শুরু হয় সাধারণ সম্পাদক মিনারা বেগমের স্বাগত বক্তব্য এবং সমবেত জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে।
“আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” – আমরা বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকি না কেন, আমরা ভালোবাসি আমাদের সোনার বাংলাকে। দেশের সরকার পরিবর্তন হবে, দল পরিবর্তন হবে, কিন্তু দেশের প্রতি আমাদের ভালোবাসা চির অমলিন। সেই প্রত্যয়ই যেন প্রতিফলিত হচ্ছিল সবার চোখে মুখে।
অনুষ্ঠানে শিল্পীরা পরিবেশন করেন দেশাত্ববোধক সমবেত ও একক সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি ও আলোচনা।
দেশাত্মবোধক সমবেত ও একক সঙ্গীতে শিল্পীরা ছিলেন সুভাষ দাশ, ড. মমতাজ মমতা, জয় দাশ, কাবেরী দত্ত, ইকবাল আহমেদ, নুরজাহান বানু, রোকেয়া পারভিন, পরেশ রায় চৌধুরী ও চঞ্চলা বিশ্বাস। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ ও দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করেন মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল মালিক এবং মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক।
মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল মালিক বলেন, স্বাধীনতা বলতে যা আমরা বুঝি, স্বাধীনতা হচ্ছে মানুষ সৃষ্ট যেসব প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা, তাকে অতিক্রম করে তার স্বাভাবিক ও মৌলিক বিষয়গুলো যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন তাকে স্বাধীনতা বলা যায়।
তিনি আরও বলেন, মানুষের মুক্তির সংগ্রাম, মুক্তির লড়াই একদিনে হঠাৎ করে ঘটা কোনো ঘটনা নয়, এটি প্রবহমান একটি ঘটনা। এটি আদি-অন্তকাল ধরে চলবে যতদিন পর্যন্ত মানুষ মানুষের ওপর শোষণের পরিসমাপ্তি না করবে। অন্ততপক্ষে মানুষের যখন মৌলিক চাহিদাগুলোর কিছুটা হলেও নিষ্পত্তি হবে, যেমন খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা তার আয়ত্বের মধ্যে আসবে, তখন আমরা বলতে পারি আমরা কিছুটা হলেও মুক্ত হতে পেরেছি।
মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হকের মতে, এই দিনকে শুধুমাত্র স্মরণ করা নয়, একে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন অতীত ও বর্তমান প্রেক্ষাপট মিলিয়ে। যুদ্ধে পাকিস্তানি বন্দীশিবিরে নির্যাতিত নারীদের মূল্যায়ন ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী ড. নীলিমা ইব্রাহিম-এর ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ বইটি নিয়ে আলোচনা ও পাঠ করেন শিউলী জাহান। একাত্তরের চিঠি থেকে আবেগময় আবৃত্তি করেন ইকবাল আহমেদ এবং নির্মলেন্দু গুণ-এর ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতার বলিষ্ঠ আবৃত্তি করেন রেজা অনিরুদ্ধ।
উদীচীর তরূণ প্রজন্মের শিল্পী সুকন্যার নৃত্যের ছন্দে ছন্দময় হয়ে উঠল আনন্দ ও বেদনার মিশ্র আবহ।
সভাপতি সুভাষ দাশ বিজয় দিবসের এই আয়োজনে অংশগ্রহণ ও সাফল্যের সাথে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং অনুষ্ঠানে উদীচীর পাশে থেকে আয়োজনকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলবার জন্য উপস্থিত দর্শকমণ্ডলীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।