ফারহানা আজিম শিউলী: টরন্টোভিত্তিক শিল্প-সাহিত্য চর্চার প্ল্যাটফর্ম ‘পাঠশালা’র ৪১তম ভার্চুয়াল আসরটি ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের ২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের শিল্পচর্চার ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বিকাশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য নাম, বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, চিত্রশিল্পী কামরুল হাসানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে, বিজয়ের মাসে, পাঠশালার এ আসরে ‘লড়াকু পটুয়া’সহ আরও প্রাসঙ্গিক তথ্যের সমন্বয়ে সামগ্রিকভাবে কামরুল হাসানের জীবন ও শিল্প নিয়ে আলোচনা করেন বইটির লেখক, বরেণ্য সাহিত্যিক একুশে পদকপ্রাপ্ত হাসনাত আবদুল হাই।

কামরুল হাসান। পটুয়া কামরুল হাসান। পেইন্টার, চিত্রকর, আর্টিস্ট ইত্যাদি সব পদবী বর্জন করে তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন ‘পটুয়া’ বলে। গত শতকের ত্রিশের দশকে ব্রতচারী আন্দোলনে অংশগ্রহণ কামরুল হাসানকে গভীরভাবে দেশপ্রেমে উদবুদ্ধ করে। এই দেশপ্রেম তাঁকে লোকজ শিল্পের কাছে টেনে আনে। লোকজ চিত্রধারাকে তিনি তাঁর ক্যানভাসে তুলে আনেন, আধুনিক চিত্রকলার আঙ্গিকে তাকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেন, নিজ চিত্রশৈলীর ব্যাকরণ তৈরি করেন, জন্ম দেন আরেক নতুন চিত্রধারার – যার শেকড় প্রোথিত লোকজ শিল্পধারার জমিনে এবং লোকশিল্পধারার প্রতি বিশ্বস্ত থেকেও তিনি আন্তর্জাতিক চিত্রকলায় অবগাহন করেন সার্থকভাবে।

বাংলাদেশের স্বাধিকার ও অসহযোগ আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ যে কোনো সংকটময় পরিস্থিতিতে কামরুল হাসান ছিলেন প্রতিবাদে সোচ্চার। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক শাসক ইয়াহিয়ার দানবীয় মুখাবয়ব নিয়ে তাঁর আঁকা পোস্টার ‘এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে’ বিশেষভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল সবার মধ্যে, হয়ে উঠেছিলো সব গণহত্যার প্রতিবাদের প্রতীক। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও তাঁর আঁকা ‘দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার খপ্পরে’ হয়ে উঠেছিল প্রতিবাদের আইকন।
হাসনাত আবদুল হাইয়ের ডকুমেন্টারি ভঙ্গিতে লেখা ‘লড়াকু পটুয়া’ শিল্পী কামরুল হাসানের জীবনীভিত্তিক উপন্যাস। ‘সুলতান,’ ‘নভেরা’ এবং ‘একজন আরজ আলী’ লেখার অনেক বছর পর এই জীবনীভিত্তিক উপন্যাসটি লেখেন তিনি। হাসনাত আবদুল হাই জীবনীভিত্তিক উপন্যাস লেখেন কেবল প্রধান চরিত্রের জীবনে বৈচিত্র্যের জন্য না, ঘটনাবহুলতার জন্যও না। যাঁরা সমকালে এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সুনির্দিষ্ট বার্তা রেখে গিয়েছেন, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির উত্তরাধিকার রেখে গিয়েছেন – তিনি লেখেন তাঁদেরকে নিয়েই।

অনন্য শিল্পী জীবনের পাশাপাশি প্রাগ্রসর সমাজমনষ্কতা ও সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে আমৃত্যু সম্পৃক্ততার জন্য কামরুল হাসান ‘পটুয়া’র সঙ্গে ‘লড়াকু’র খ্যাতিও পান। কামরুল হাসানকে নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘লড়াকু পটুয়া’য় উঠে আসে আমাদের শিল্পকলার ইতিহাসের উজ্জ্বল-অনিবার্য এক অধ্যায়, সুদীর্ঘ এক সময়ের সমাজ-মানসের চিত্র।
‘লড়াকু পটুয়া’ বইটি আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে ফয়েজ আহমদকে। বইটির প্রচ্ছদের কোলাজ করেছেন লেখক নিজেই।
‘লড়াকু পটুয়া’য় আছে ২৩টি অধ্যায়: শুরুতেই শিরোনামহীন অধ্যায়। তারপর একে একে – তিনকন্যা ও নাইয়র, প্রদর্শনী ও মূল্যায়ন, ঢাকা ১৯৪৮, হরিণের ড্রইং, ঢাকা আর্ট গ্রুপ, কামরুলের প্রেম, ‘আনন্দ উল্লাসে,’ পোস্টার আর আলপনা, কাগমারী, শাহবাগে ইন্সটিটিউট ভবন, ডিজাইন সেন্টার, ছবি আঁকায় হাতেখড়ি, আর্ট স্কুলে পড়া, চিফ ডিজাইনার, পুতুলের ঘর, তাঁর রমণীরা, লড়াকু কামরুল, কাঠখোদাই ও খেরোখাতা, কামরুলের সংসার, মডেল মেয়ে, সুমনার সঙ্গে কথা, বাবার সঙ্গে সন্ধ্যায় ইত্যাদি।
আলোচক হাসনাত আবদুল হাই বলেন, “মোটা দাগে যদি পটুয়া কামরুল হাসানকে পরিচয় করাতে চাই, তাহলে আমি বলব তিনি একজন বড়ো মাপের প্রেমিক ছিলেন। এই মোটা দাগের ভেতর তাঁর প্রেমের বিশেষ ক্ষেত্রগুলোকে আমরা চিহ্নিত করতে পারি। প্রথমে আসে তাঁর দেশপ্রেম। তারপরে আসে আমার বিবেচনায় মানবপ্রেম। তৃতীয়ত আসে প্রকৃতি প্রেম। এরপর আসে পটুয়া কামরুলের নারীপ্রেম। সবশেষে আসে তাঁর শিল্প ও সাহিত্য প্রেম। আমি সংক্ষেপে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর যে প্রেম, তাঁর যে নিবেদন, তাঁর যে আরাধনা, তাঁর যে শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা, তাঁর যে এক্টিভিজম – সেগুলো একে একে সংক্ষেপে বলব।

“প্রথমেই আসা যাক তাঁর দেশপ্রেমে। প্রত্যেকের মধ্যেই দেশপ্রেম কিছু না কিছু আছে। কারো মধ্যে বেশি, কারো মধ্যে কম; কারো মধ্যে খুব জাগ্রত হয়ে আছে, কারো মধ্যে খুব সুপ্ত হয়ে থাকে। কামরুল হাসানের জীবনে দেখা যায় যে, খুব ছোটোবেলায় যখন তিনি আর্টস্কুলে ভর্তি হয়েছেন ১৯৩৮ সালে, সেইসময়ে তাঁর মধ্যে দেশপ্রেমের সূচনা হয়। এবং আমরা দেখি যে ফলশ্রæতিতে তিনি শরীরচর্চা করছেন। কারণ দেশপ্রেম মানে হলো আত্মশক্তি বাড়াতে হবে। আত্মশক্তি না বাড়ালে দেশপ্রেম ধরে রাখা যাবে না এবং দেশপ্রেমের ভিত্তিতে বৃটিশ-বিদেশী শক্তির ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়া যাবে না। এইজন্য পরোক্ষে তিনি তাঁর দেশপ্রেম শুরু করলেন শরীরচর্চার মাধ্যমে। আত্মশক্তি অর্জনের প্রথম ধাপ হলো শারিরীক শক্তি এবং তার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে আসে মানসিক শক্তি। মানসিক শক্তি প্রতিষ্ঠিত করার আগে, জোরদার করার আগে শারিরীক শক্তির দরকার। কামরুল হাসান সেটাই শুরু করলেন সেই তরুণ বয়সে, বলা যায় কিশোর বয়সে। উনি তখন স্কুলের ছাত্র।
“১৯৩৮ সালে কামরুল হাসান আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। এর পরের বছরই তিনি ব্রতচারী আন্দোলনের একটা শিবিরে যোগ দিলেন। আপনারা জানেন যে, ব্রতচারী আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সিভিল সার্ভেন্ট গুরুসদয় দত্ত। তিনিও দেশপ্রেমে উদবুদ্ধ হয়ে ব্রতচারী আন্দোলন করেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি চেয়েছিলেন, যারা ব্রতচারী আন্দোলনে অংশ নেবে তাদের মধ্যে স্বাজাত্যবোধ, দেশহিতৈষণা, সমাজ সচেতনতা এবং বিশেষ করে গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে উঠবে। এর ভিত্তিতেই তাদের দেশপ্রেম গড়ে উঠবে।
গুরুসদয় দত্ত এবং তাঁর মতো যাঁরা দার্শনিক ছিলেন, চিন্তাভাবনা করতেন, তাঁদের কাছে দেশপ্রেম মানে সঙ্গে সঙ্গে একটা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়া নয়। তার জন্য একটা মানসিক প্রস্তুতি আছে, তার জন্য একটা সাংস্কৃতিক আন্দোলনও রয়েছে। সেই সাংস্কৃতিক-মানসিক আন্দোলনেই কামরুল হাসান যোগ দিলেন ব্রতচারীদের শিবিরে গিয়ে। সেখানে গিয়ে তাঁর দেখা হলো দুলে, বাগদি, বাউড়ি, বাউল এইসব স¤প্রদায়ের মানুষের। এরা প্রায় সর্বহারা গ্রামের মানুষ, শ্রমজীবি খেটে খাওয়া মানুষ, দিন আনে দিন খায়। কিন্তু তাদের জীবনযাপনের অংশ হয়ে ছিল গান ও নাচ। তারা যেসব ব্রতচারী গান গাইত কিংবা ব্রতচারী নৃত্য করত, এগুলো গুরুসদয় দত্তের তৈরি করা না। এগুলো তাদের নিজস্ব। তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনে নিজেদের পরিবেশে, গ্রামে এসব গান গায়, এসব নাচে এবং কাজের সঙ্গেই এসব জড়িত। এগুলো তারা পরিকল্পিতভাবে অনুষ্ঠান করে করত তা নয়। দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন পর্বে তারা গান গায়, নাচে। এগুলোকে গুরুসদয় দত্ত লোকচক্ষুর সামনে আনার জন্য, আরো জনপ্রিয় করার জন্য ব্রতচারী আন্দোলনের মাধ্যমে আনলেন। কামরুল হাসান ব্রতচারীদের শিবিরে গিয়ে এইসব শ্রমজীবি গ্রামীণ মানুষের মুখোমুখি হলেন এবং তিনি তাদের শিল্পকলা-পটশিল্পের স্বতঃস্ফূর্ততা, সরলতা, মৃত্তিকা-ঘনিষ্ঠতার দ্বারা মুগ্ধ ও আকর্ষিত হলেন। তিনি আর্ট স্কুলের ছাত্র ছিলেন। মটরু নামে একজন বাউল শিল্পী ছিল। সে নিজের মনে ছবি এঁকে যাচ্ছে ভেজিটেবল কালার দিয়ে। এবং ছাগলের লোম দিয়ে সে সবার সামনেই বানিয়েছে ব্রাশ। ওগুলো দিয়ে সে ছবি আঁকছে। এসব দেখে কামরুল খুব মুগ্ধ হলেন। এটা তাঁর দ্বিতীয় স্তরের দেশপ্রেমের অভিব্যক্তি। প্রথমটা হয়েছিল শরীরচর্চায়। তারপর ব্রতচারী আন্দোলনে যোগ দিলেন।”

“এখানে বলা ভালো, যদিও কামরুল হাসানের পৈতৃক নিবাস গ্রামে, কিন্তু উনি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেননি। উনি জন্মগ্রহণ করেছেন কোলকাতার ভেতরেই বলা যায়, প্রান্তদেশে, তিলতলা বলে একটা গোরস্থানের ভেতর। গোরস্থানের পরিচালক পদে ছিলেন তাঁর বাবা। তাঁর নানা ছিলেন শিল্পী। উনি ছবি আঁকতেন। তিনি আবার কাউন্সিলর ছিলেন, রাজনীতি করতেন। তাঁর প্রভাব ছিল। যেহেতু তাঁর জামাই অর্থাৎ পটুয়া কামরুলের বাবার কোনো সঙ্গতি ছিল না, নিয়মিত আয় ছিল না, উনি কামরুলের বাবাকে গোরস্থানের কেয়ারটেকার করে দিলেন। আর কেয়ারটেকারের একতলা বাসাতেই পটুয়া কামরুলের জন্ম। উনি খুব ঠাট্টা করে পরে বলতেন এবং এটা লেখাতেও আছে যে, ‘মানুষ যেখানে মৃত্যুর পরে যায়, আমার জন্ম সেখানে।’ মানুষ মৃত্যুর পর গোরস্থানে যায়। ওনার জন্ম হয়েছে গোরস্থানে। এবং আমি শেষেরটা আগেই বলি যে, কী আয়রনি! মৃত্যুর পরে মানুষ গোরস্থানে যায়। তিনি সেখানে জন্মেছেন অথচ তাঁর যখন মৃত্যু হলো তিনি কিন্তু গোরস্থানে যাননি। তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে আর্ট স্কুলের পাশে। কেমন একটা চমৎকার আয়রনি না যে, সবাই মৃত্যুর পর যেখানে যায় সেখানে তিনি জন্মগ্রহণ করলেন, কিন্তু মৃত্যুর পর সেখানে গেলেন না! কেমন ব্যতিক্রমী তাঁর জীবন, কেমন ব্যতিক্রমী মানুষ তিনি, এই একটা ঘটনা দিয়েই তা বোঝা যায়।”
“১৯৪৮ সালে কামরুল হাসান যখন ঢাকা এলেন দেশভাগের পর, তখন যেহেতু তাঁর রক্তের মধ্যে রয়েছে আন্দোলন, রয়েছে গণসম্পৃক্ত হবার তাড়না, তাই উনি একটা আন্দোলন গড়ে তুললেন। সেটা ছিল ১৯৫০ এর দাঙ্গা বিরোধী আন্দোলন। তিনি সেটা সংগঠন করলেন, নেতৃত্ব দিলেন এবং তাঁরা বেশ সফল হলেন। এটা ছিল পূর্ব পাকিস্তানে। তখন পূর্ব পাকিস্তান বলা হতো না, বলা হতো পূর্ব বাংলা। পরে নাম হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান। পূর্ব বাংলায় এসে তিনি তাঁর সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫০ সালে দাঙ্গা বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলেন এবং সেটা সফলভাবে হলো। এই বছরই সোশ্যাল ফোর্স হিসেবে গড়ে তুললেন ‘ঢাকা আর্ট গ্রুপ।’ ১৯৫১ সালে তিনি চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যোগ দিলেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনেও তাঁর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৫২ সালে কুমিল্লায় প্রথম সাহিত্য সম্মেলনে তিনি ছাত্রদের নিয়ে গিয়ে ছবি আঁকা সহ নানাকিছু করলেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকার সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও তাঁর ভূমিকা ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে পূর্ব বাংলায় এসে তিনি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে তার সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করলেন। ১৯৫৭ সালে কাগমারি আন্দোলন হয় মাওলানা ভাসানির উদ্যোগে। মাওলানা ভাসানি ছিলেন বামপন্থী। বামপন্থীদের আয়োজিত সম্মেলন ছিল সেটা। সম্মেলনে অনেক সাহিত্যিক এসেছিলেন কোলকাতা থেকে। গানবাজনা হয়েছে সেখানে। রাজনৈতিক বক্তৃতা ওখানে হয়নি। কাগমারি সম্মেলন মূলত ছিল একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তবে পটুয়া কামরুল যে কাগমারি সম্মেলনে গেলেন, সেখানে অংশ নিলেন, এর পটভূমি হলো এই – উনি কোলকাতায় ছাত্রজীবনে বামপন্থী রাজনৈতিক দল ফরোয়ার্ড বøকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্ট ফেডারেশনের পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, গননাট্য আন্দোলনের (আইপিটিএ) সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁর মধ্যে একটা বামপন্থী মতাদর্শ কাজ করতো। উনি সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হননি, কোনো রাজনৈতিক মিটিং এ যাননি। গিয়েছেন রাজনৈতিক দলের সাংস্কৃতিক ফ্রন্টে।”

“এরপর ১৯৬৯ সালে যখন গণজাগরণ হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুকে জেল থেকে নিয়ে আসার আন্দোলন চলছে তখন কামরুল হাসান বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ বলে একটা সংগঠন করলেন। তাঁরা নানান জায়গায় অনুষ্ঠান করলেন। ঐ একই সময়ে তিনি অ আ ক খ এই অক্ষরগুলো লিখে বাংলা একাডেমির ভেতরে বটগাছ থেকে ঝুলিয়ে দিলেন। এর নাম দিলেন অক্ষরবৃক্ষ। এটাও তাঁর দেশপ্রেমের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কিন্তু তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো ৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তান বাহিনী যখন আক্রমণ করবে বলে উদ্যোগ নিচ্ছে সেইসময়কার গণআন্দোলনের সময়। ইয়াহিয়া খান তখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। তার নির্দেশেই সব দমন পীড়ন। কামরুল ইয়াহিয়া খানের ছবি দিয়ে পোস্টার আঁকলেন। বিকট এক দানবের ছবি, দাঁত বেরিয়ে আছে রাক্ষসের মতোন, মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে, রক্তচক্ষু। দেখলে মানুষ মনে হয় না। নাম দিলেন, ‘এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে।’ এটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। এইরকম বিরাট ঘটনা কোনো বক্তৃতা দিয়েও বোধহয় প্রকাশ করা যায় না। তাঁর এই ছবি পোস্টার হয়ে ঢাকার দেয়ালে দেয়ালে ঝুলেছিল। ১৯৭১ এর মার্চের পর তাঁকেও অন্যান্যদের সঙ্গে কোলকাতায় চলে যেতে হয়েছিল। এই ছবি শুধু প্রতীকি নয়, এটা মানুষকে প্রচুর উদ্দীপনা এবং উৎসাহ দিয়েছে, তাদেরকে উদবুদ্ধ করেছে। আমার মনে হয়, শুধু বাংলাদেশে না, মানুষের মধ্যে বিদ্রোহী-বিপ্লবী চেতনা নিয়ে আসে, এই ধরনের পোস্টার পৃথিবীর ইতিহাসে আর দ্বিতীয়টি নেই। এটা একটা শিল্পকর্ম। একইসঙ্গে এটি পলিটিক্যাল টেস্টামেন্ট। এটা একটা রাজনৈতিক দলিল। তিনি কোলকাতায় গিয়ে মুজিবনগর সরকারের সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের দায়িত্ব নিলেন। সেখানে শিল্পীদের নিয়ে সংগঠন করলেন, তাঁদের নিয়ে আন্দোলন করলেন, দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চললেন এবং মুক্তিযুদ্ধ শেষে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এলেন।”
“স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসার পরেও কামরুল হাসানের আন্দোলন শেষ হলো না। উনি দেখলেন, যে বাংলাদেশ তিনি চেয়েছিলেন সে বাংলাদেশ যেন বাস্তবায়িত হচ্ছে না। যারা স্বার্থান্বেষী, ক্ষমতায় আছে, ব্যক্তিস্বার্থ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, তারাই যেন দেশটার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করছে শুধু না, তারাই দেশটার যা কিছু আছে ভোগ করছে, সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। তিনি তখন তাঁর ছবিতে অশুভের প্রতীক সাপ, শেয়াল, পেঁচা, কুমির এইসব হিংস্র জন্তুর ছবি এঁকে মনের ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। এটাই তাঁর ‘খেরো খাতা’র শুরু। অর্থাৎ তাঁর মধ্যে যে বিপ্লবী মানুষ ছিল, সেটা এইভাবে প্রকাশ পেল। তারপরে পট পরিবর্তন হয়ে গেল। সামরিক শক্তি এলো। তিনি তখন একই ধারায় এদেরও বিরুদ্ধে রেখাচিত্র দিয়ে, স্কেচ দিয়ে, সাপ কুমির শেয়াল পেঁচার মাধ্যমে নতুন সামরিক শক্তিকে চিত্রায়িত করলেন। তাঁর দেশপ্রেমের সব তৎপরতার সর্বশেষ নিদর্শন পাওয়া যায় ১৯৮৮ সালে কবিতা সম্মেলনের সভাপতিত্ব করার সময়। সেখানে একটা স্কেচ আঁকলেন এবং স্কেচ আঁকার সঙ্গে সঙ্গে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। সেই স্কেচটা হলো – ‘দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার খপ্পরে।’ একজন সামরিক শাসক তখন দেশের ক্ষমতায় অধিষ্টিত এবং স্বৈরাচার চরমে উঠেছে তার সময়ে। ঐ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন এবং জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ফেলবার আগে তিনি এই ব্যাঙ্গধর্মী স্কেচটি আঁকলেন। আমি এই কথা বলে দেশপ্রেম হিসেবে পটুয়া কামরুলের যেই পরিচিতি সেই অধ্যায়ের ইতি টানছি।”

এ পর্যায়ে ‘এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে’ ও ‘দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার খপ্পরে’র স্থিরচিত্র দর্শকদের দেখানো হয়।
আলোচক হাসনাত আবদুল হাই বলেন, “এরপর আমি চলে যাব কামরুল হাসানের মানবপ্রেমে। একজন শিল্পী হিসেবে মানবপ্রেম দ্বারাই তিনি উদবুদ্ধ হয়েছিলেন। যেজন্য তিনি শরীরচর্চা করেছেন, ব্রতচারী আন্দোলন করেছেন এবং তাঁর এ মানবপ্রেম আরো তীব্র হয়েছে যখন তিনি ব্রতচারী শিবিরে গিয়ে গ্রামের দুলে, বাগদি, বাউড়ি, বাউলদের সঙ্গে পরিচিত হলেন। তাঁর ভেতরে মানবিকতা সবসময়েই ছিল। কিন্তু ঐ শিবিরে তাঁর অভিজ্ঞতা, তাঁর ভেতরের মানবিক প্রেমকে আরো সোচ্চার করে দিলো, আরো স্পষ্ট করে তুলল। উনি সাধারণ পরিবারের সন্তান হলেও শহরে মানুষ, প্রান্তিক মানুষদের সঙ্গে খুব একটা মেশার সুযোগ পাননি। ঐ শিবিরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেশার পর থেকে তাঁর ভেতরের মানবপ্রেম সাধারণ মানুষের দিকে একটু বেশি যেন ঝুঁকে পড়ল। যারা দুখী, যারা নিঃস্ব-দরিদ্র, যারা সংগ্রাম করছে দুবেলা দুমুঠো খাবার জন্য – এদের সঙ্গে তিনি আরো বেশি একাত্মতা অনুভব করলেন। আর ঠিক ঐ সময়টায় কোলকাতা এবং বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। কোলকাতার রাজপথে এসে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষ সব মরে যাচ্ছে। মা শিশুকে নিয়ে মরছে, ডাস্টবিনে খাবার খুঁজছে, কুকুরের সঙ্গে যুদ্ধ করছে উচ্ছিষ্ট খুঁজে পাওয়ার জন্য। জয়নুল আবেদিন এদের ছবি এঁকে বিখ্যাত হয়েছেন। কামরুল হাসানও দুতিনটে ছবি এঁকেছিলেন। জয়নুল আবেদিন ও কামরুল হাসানের আঁকা দুর্ভিক্ষের ছবি প্রদর্শনের আয়োজন করেছিল ফরোয়ার্ড বøক, কোলকাতার কলেজিয়েট স্কুলে। সেখানে জয়নুল আবেদিনের ছবিই ছিল বেশি, সোমনাথ হোর এর কিছু ছবি ছিল। তিনিও দুর্ভিক্ষের ছবি এঁকেছেন। বামপন্থী এই শিল্পীর শেষ জীবন কেটেছে শান্তিনিকেতনে। সেই প্রদর্শনীতে কামরুল হাসানের দুটো ছবি ছিল। তাঁর আঁকা দুর্ভিক্ষের ছবি জয়নুলের ছবির মতো আবেদন জাগাতে পারেনি। জয়নুলের ছবিতে ছিল খুব বোল্ড ব্রাশের স্ট্রোক। বড়ো বড়ো তুলির দাগে তিনি দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জীবনের করুণ আবহ যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন, কামরুল হাসানের সূক্ষ্ণ রেখায় আঁকা ছবি সেটা পারেনি। খুব ভালো ছবি ছিল কামরুলেরটাও। কিন্তু তাঁর শিল্পরীতি ছিল ভিন্ন, একাডেমিক পদ্ধতিতে সূক্ষ্ণ রেখায় আঁকা। জয়নুল একাডেমিক পদ্ধতি অনুসরণ করে আঁকলেও, তাঁর মোটা তুলির দাগে আঁকা ছবি দর্শককে সঙ্গে সঙ্গে খুব সরাসরি স্পর্শ করেছে। সেই তুলনায় কামরুলের এ ছবি মানুষের আবেগের কাছে অতটা আবেদন রাখেনি, যতটা রেখেছে তাদের বুদ্ধিবৃত্তির কাছে, নান্দনিকতার কাছে। ওদিকে জয়নুলের ছবি সরাসরি মানুষের আবেগের কাছে আবেদন রেখেছে, তাদেরকে ক্ষুব্ধ করেছে, প্রতিবাদী করেছে।” এ পর্যায়ে হাসনাত আবদুল হাই প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া কামরুলের আঁকা সেই ছবি বই থেকে দর্শকদের দেখান। তিনি বলেন, “দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের ছবি এঁকে কামরুল তাঁর মানবপ্রেমের স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর মানবপ্রেমের স্বাক্ষর দেখি আমরা তাঁর সমস্ত শিল্পকর্মের ভেতর। তাঁর শিল্পকর্মে সাধারণ মানুষ – গ্রামের জেলে, কামার, কুমোর, কৃষকরাই স্থান পেয়েছে। সেখানে মধ্যবিত্ত, শিক্ষিত, উচ্চশিক্ষিত, উচ্চবিত্তদের কোনো স্থান নেই। এইভাবে তিনি তাঁর শিল্পকর্মের ভেতর দিয়েই বিশেষ করে তাঁর মানবিকতা ও মানবপ্রেম প্রকাশ করেছেন।

“এবারে আসি কামরুল হাসানের প্রকৃতিপ্রেমে। তিনি নাগরিক ছিলেন, জন্মেছেন কোলকাতায় এবং সেইখানে তাঁর কৈশোর ও তারুণ্য কেটেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এসে উনি গ্রামে ঘোরার সুযোগ পেলেন ১৯৬০ সালে বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশন) এর ডিজাইন সেন্টারের প্রধান হবার সুবাদে। সেইসময় তিনি সমস্ত বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে গিয়েছেন পুতুল, মাটির সরা, পটচিত্র ইত্যাদি লোকশিল্প সংগ্রহ করার জন্য। গ্রামে গিয়ে বাংলাদেশের সুজলা সুফলা শ্যামলিমা ও সবুজের সমারোহ দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। কেননা পশ্চিমবঙ্গে গ্রামীণ প্রকৃতি এত সবুজ না, এত স্নিগ্ধ না। এই স্নিগ্ধতা, এই সবুজ শ্যামলিমা কামরুলকে প্রকৃতিপ্রেমী করেছে। যেজন্য তাঁর অসংখ্য জলরঙে আঁকা ছবিতে আমরা গ্রাম দেখি, গ্রামের নিসর্গ দেখি, নীল আকাশ দেখি, বর্ষার মেঘভারে ক্লান্ত আকাশ দেখি, নদী দেখি, গাছপালা দেখি এবং প্রকৃতির কোলে সংগ্রামী মানুষ দেখি। দেখি জেলে-কৃষকরা কাজ করছে, গ্রামীন বধূরা কেউ স্নান করছে কিংবা কলসি ভরছে। এভাবে প্রকৃতি ও মানুষ তাঁর ছবিতে অঙ্গাঙ্গি হয়ে গিয়েছে। প্রকৃতি ও মানুষকে তিনি আলাদা করতে পারেননি বলে মানুষও হয়ে গেছে প্রকৃতির অংশ। তাঁর মানবপ্রেম, প্রকৃতিপ্রেমের মধ্যে এসে মিশে গিয়েছে এবং প্রকৃতিই এখানে প্রধান হয়ে গিয়েছে। এইভাবে আমরা প্রকৃতি প্রেমিক কামরুলকে দেখি।”
“এরপর আসি নারী প্রেমিক কামরুল হাসানের পরিচিতিতে। নারী প্রেমিক বলতে একটা না, নারীর বিভিন্ন রূপে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন ও প্রেমে পড়েছেন। প্রেমে পড়া মানে ব্যক্তিপর্যায়ে নয়। ব্যক্তিপর্যায়েও তিনি প্রেমে পড়েছেন, প্রেম করে বিয়ে করেছেন। সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু ব্যাপক অর্থে বিমূর্ত অর্থে তিনি নারীর প্রেমে পড়েছেন। নারী এখানে একটা আইডিয়া, সৌন্দর্যের আইডিয়া। গ্রামবাংলার সৌন্দর্য, প্রকৃতির সৌন্দর্য তাঁর এই নারীপ্রেমের মধ্যে আছে। এটাকে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার চাইতে বলা যায় দূরবর্তী একটা আকাঙ্ক্ষা, দূরবর্তী একটা তৃষ্ণা। উনি যে রূপ ও সৌন্দর্যের সন্ধান করছেন সেটা যেন নারীর মধ্যেই খুঁজে পেয়েছেন। সেই নারী তাঁর নিজের জীবনে কখনো প্রেয়সী আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জায়া ও জননী এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কন্যা। তিনি নারীকে চার রূপে দেখেছেন – প্রেয়সী, জায়া, জননী ও কন্যা এবং এই চার রূপেরই অসংখ্য নারীচিত্র তিনি এঁকেছেন। তাঁর মতো নারীকে বিষয় করে চিত্র এত বেশি আর কোনো শিল্পী আঁকেননি। পিকাসো অনেক নারীচিত্র এঁকেছেন কিন্তু পিকাসোও এত আঁকেননি, বাংলাদেশের কোনো শিল্পী তো দূরের কথা। তাঁর ছবিতে নারীচিত্রের প্রাধান্য নিয়ে কেউ কেউ ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, তিনি রিপু-আবেগ তাড়িত হয়ে এসব ছবি এঁকেছেন। কোথাও কোথাও হয়ত তাঁর আবেগ ছিল, এরোটিক ফিলিং ছিল কিন্তু সেটা প্রধান নয়। এটা না-বলা হলে সত্যের অপলাপ হবে। কিন্তু এমন ছবি সংখ্যায় খুবই কম। তিনি নারীচিত্র পর্নোগ্রাফি হিসেবে আঁকেননি, শিল্পকর্ম হিসেবে এঁকেছেন। কেউ যদি এমনভাবে নগ্নিকার ছবি আঁকে যেটা দেখে লোকের মনে বেসিক ইন্সটিংক বা কাম অনুভব হয় তাহলে সেটা পর্নেগ্রাফি। কিন্তু নগ্নিকার ছবি দেখে যদি সৌন্দর্যবোধ জাগে তাহলে আমরা তাকে পর্নোগ্রাফি বলব না। এই অর্থে যেসব ন্যুড ছবি তিনি এঁকেছেন, সেগুলোকে কোনোভাবেই এরোটিক ছবি বলা যাবে না, সেগুলো শিল্পকর্ম। তাঁর এসব ছবি অনেকে কিনেছে। পর্নোগ্রাফি হলে লোকে এসব কিনত না। তো এইভাবে তিনি তাঁর নারীপ্রেম অসংখ্য ছবিতে চিত্রায়িত করেছেন, এঁকেছেন। এবং তারপরও যেন নারীর প্রেমের গভীরতা আবিষ্কারে তাঁর আকুতি, অতৃপ্তি, তৃষ্ণা। মানে, পাচ্ছেন না যেন তিনি কিছুতেই আর তাই এঁকে যাচ্ছেন ক্রমাগত। এভাবে আমরা নারীপ্রেমিক কামরুল হাসানকে দেখতে পাই। এটা তাঁর প্রেমিক জীবনের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হয়ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”

এ পর্যায়ে কামরুল হাসানের বিভিন্ন বয়সের কয়েকটি পোর্ট্রেট সহ ব্যক্তিগত আরো কয়েকটি ছবি, কামরুল হাসান কর্তৃক পরিবর্তিত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, কামরুল হাসানের চিত্রকর্ম অবলম্বনে যুগোশ্লাভিয়া (তিন কন্যা ১৯৮৫) ও বাংলাদেশ সরকারের (নাইওর ১৯৮৬ ও তিন কন্যা ১৯৯৭) ডাকবিভাগের করা স্মারক ডাকটিকিট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কামরুলের সমাধি ইত্যাদির স্থিরচিত্র দেখানো হয়।
হাসনাত আবদুল হাই বলেন, “আমি প্রেমিক কামরুল হাসান সম্পর্কে কিছু বলছিলাম এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর প্রেমের বর্ণনা দিচ্ছিলাম। তাঁর সবশেষ প্রেম হলো তাঁর সাহিত্য ও শিল্প প্রেম, সবশেষ হলেও যা গৌণ নয়। আমরা সবাই পটুয়া কামরুলকে শিল্পী হিসেবেই জানি। তিনি যে সাহিত্য চর্চাও করেছেন সেটা আমরা সবাই জানি না কিংবা জানলেও সে সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা নেই আমাদের। কামরুল হাসানের সাহিত্যচর্চার শুরু কোলকাতায় তাঁর ছাত্রজীবনে? তিনি কবি হাবিবুর রহমানের সঙ্গে একটা হাতে লেখা সাহিত্য পত্রিকা বের করতেন ‘আবীর’ নামে। এটা ছিল তাঁর প্রথম সাহিত্য প্রচেষ্টা। এই পত্রিকার মাধ্যমে ছবি আঁকা, লেখা ইত্যাদি হতো। এরপর পূর্ববাংলায় এসে ১৯৪৮ সালে তিনি ‘মুকুল’ নামে একটা পত্রিকার সঙ্গে জড়িত হন। মুকুল ছিল আজাদ পত্রিকার একটা সংগঠন। আজাদ পত্রিকা ‘মুকুল ফৌজ’ নামে কিশোরদের আন্দোলন করত। তাদেরই মুখপত্র হিসেবে মুকুল পত্রিকা বের হতো। তিনি এই পত্রিকার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এরপর তিনি বেশ কিছু প্রবন্ধ লেখেন যা প্রামান্য দলিলের মতো। কেননা ঐ সময় শিল্প সমালোচক বলতে কেউ ছিল না। শিল্পের ওপর লেখা হতো খুব কম। ‘বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলন ও আমার কথা’ (২০১০) বইতে তাঁর প্রবন্ধগুলো সংকলিত আছে। এ বইয়ে তাঁর আত্মজৈবনিক কিছু লেখা আছে কিন্তু বেশিরভাগই বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলনের ওপর। কামরুল হাসানই প্রথম বাংলাদেশে শিল্প আন্দোলন নিয়ে লেখেন। এর অনেক পরে শিল্পী আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলন নিয়ে লিখেছেন। এরপর আরো অনেকে লিখেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলন নিয়ে লেখার পথিকৃৎ কামরুল হাসান। একে তো হাজার হাজার ছবি এঁকেছেন, তার মধ্যে চিন্তাভাবনাকে অক্ষরে রূপ দিয়ে প্রবন্ধের আকারে প্রকাশ করা তাঁর বহুমাত্রিক প্রতিভারই স্বাক্ষর দেয়। এই বইতে তিনি বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলন ও শিল্পচর্চা নিয়ে লিখেছেন। জয়নুল আবেদিনের ওপর দুটো প্রবন্ধ আছে, আছে কামরুলের নিজের কথা, আছে কবি ফররুখ আহমেদ এবং সিকান্দার আবু জাফর আর শিল্পী রশিদ চৌধুরীর ওপর তিনটা প্রবন্ধ। শিল্প নিয়ে সমালোচনা লিখলে সেটা সাহিত্য হয়। সেই হিসেবে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেছেন। সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি স্বীকৃতি পেতে পারেন, পাওয়া উচিত এবং পেয়েছেনও। না হলে প্রথমা তাঁর এই বই ছাপবে কেন? তাঁর নিজের লেখা আত্মজীবনী বলি অথবা শিল্পের ওপর লেখা বলি, তা একমাত্র এই বইতেই আছে। বইয়ের সূচিতে আছে – আমার কথা, বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলন, রূপসী বাংলার চালচিত্র, আমার মাস্টারমশাই জয়নুল আবেদিন, শিল্পী জয়নুল আবেদিন, আমার স্কেচ ও প্রেমের ভ্রমরেরা, আমার কিছু কথা, ফেরা, বিবিধ: ফররুখ ভাই (কবি ফররুখ আহমেদ), জাফর ভাই (কবি সিকান্দার আবু জাফর) আর রসমণ্ডিত রশিদ চৌধুরী। রশিদ চৌধুরী কামরুল হাসানের ছাত্র ছিলেন। রশিদ চৌধুরী বিখ্যাত তাঁর টেপেস্ট্রির জন্য, আমরা জানি। উল্লেখ্য, কামরুল শিল্পকলার ওপর যে প্রবন্ধগুলো লিখেছেন এগুলো প্রথমে ছাপা হয়নি। উনি এসব প্রবন্ধের আকারে পাঠ করেছেন নানা সম্মেলনে। কুমিল্লায় প্রথম সাহিত্য সম্মেলনে পাঠ করেছেন, পাঠ করেছেন কাগমারি সম্মেলনে। সেখানে অন্নদাশঙ্কর রায় সহ কোলকাতার অন্যান্য লেখকরা এসেছিলেন।

কামরুল প্রবন্ধ পড়েন বাংলাদেশের শিল্পকলার চালচিত্র নিয়ে। দেখা যায়, প্রথমে তিনি এইসব সম্মেলনের জন্য প্রবন্ধ লেখেন ও পরে সেগুলো হয়ত কোনো পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। আমার সেসব পত্রিকার নাম মনে নেই। আর এখন এইসব লেখা সংকলিত হয়ে বইয়ের মধ্যে এসেছে, যেখানে আমরা তাঁর সব সাহিত্যকর্ম একসঙ্গে পাই। আমি বলেছি কামরুল হাসানের সাহিত্য ও শিল্প প্রেম। আমি দুটোকে আলাদা করতে পারতাম কিন্তু তা না-করে এক করে দিয়েছি। শিল্পকর্মটা তাঁর সাহিত্যকর্মের তুলনায় অনেক বেশি, অনেক ব্যাপ্ত। তিনি তো প্রধানত শিল্পী হিসেবেই পরিচিত, তারপরে তাঁর বাকি সব ক্ষেত্রের অবদান, তাঁর চর্চা, তার সৃষ্টি? সেগুলো বাড়তি বলা যায়, কিন্তু বাড়তি বললেও নগন্য নয় এবং গুরুত্বেও প্রায় সমান।
“আমরা কামরুল হাসানকে ‘পটুয়া’ কামরুল বলি। এবং তাঁর এই পরিচিতি হয় যখন তিনি প্রথম ব্রতচারীদের শিবির থেকে এসে গ্রামের লোকজ শিল্পশৈলীতে ছবি আঁকেন তখন থেকেই। অর্থাৎ গ্রামের পটুয়াদের যে শৈলী, সরলরেখায় স্বতঃস্ফূর্ত রেখায় প্রাইমারি কালারে উজ্জ্বল রঙে যে ছবি আঁকা, তিনি ঐ লোকজ শিল্পপদ্ধতির অনুসরণে প্রথম ছবি আঁকেন কোলকাতা থাকতেই। যেগুলো ঐ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছিল। কোলকাতায় থাকতেই তিনি একাডেমিক পদ্ধতিতে ছবি আঁকেন। একাডেমিক পদ্ধতিতে তখন সবাই আঁকছে কেননা আর্ট স্কুলের ওটাই ছিল অফিসিয়াল স্ট্যান্ডার্ড। তারপরে হেবলক এলিস, নন্দলাল রায়, অবনীন্দ্রনাথ এঁরা এসে বেঙ্গল স্কুলের প্রবর্তন করলেন। কিন্তু কোলকাতা আর্ট স্কুলের জন্মলগ্নে অফিসিয়াল স্টাইল, অফিসিয়াল নর্ম ছিল একাডেমিক। একাডেমিক হচ্ছে ইউরোপের একাডেমি অফ ফাইন আর্টস নির্ধারিত শিল্পরীতি। ড্রইং এর সেই একাডেমিক রীতি কোলকাতা আর্ট স্কুলেও ছিল। সেভাবেই কামরুল অন্যান্যদের মত এঁকেছেন।” কামরুল হাসানের আঁকা একাডেমিক শিল্পরীতির দুটো ছবি এ পর্যায়ে দর্শকদের দেখান হাসনাত আবদুল হাই। তিনি বলেন, “এ দুটো ছবি খুব কম মানুষই দেখেছে। একটা হলো সিরাজ-উ-দৌলা, আরেকটা ঈদের মোনাজাত। এ দুটোই মিল্লাত পত্রিকা ঈদ সংখ্যায় ছেপেছিল, কোলকাতায়। এ ছবিগুলো একাডেমিক পদ্ধতির। পটুয়াদের মতো তুলির বেগে অসম্পূর্ণ আঁকা কিংবা উজ্জ্বল রঙের না। এদের রঙগুলো উজ্জ্বল না, বেশ সাবডিউড, অবদমিত। কামরুল একাডেমিক পদ্ধতি দিয়ে শুরু করলেও একইসময় তিনি ব্যতিক্রম হিসেবে পটুয়া শিল্পরীতির চর্চাও করলেন। ব্রতচারী আন্দোলনে গিয়ে পটশিল্পের প্রতি তাঁর আকর্ষণ তৈরি হলো, যা তাঁর ভেতরে ভেতরে থাকল। অন্যান্য শিল্পীর মতো তাঁর মধ্যেও দ্ব›দ্ব ছিল যে, তিনি কি ইউরোপিয়ান বা একাডেমিক বা পাশ্চাত্যের শিল্পপদ্ধতিতে নাকি বাংলাদেশের গ্রামের লোকজ শিল্পপদ্ধতিতে ছবি আঁকবেন। যাই হোক, তিনি পূর্ববাংলায় এসে পটুয়া রীতিতে কিছু ছবি আঁকলেন। জয়নুল আবেদিন ৫০ এর দশকে, ৫৫ সালে, ইংল্যান্ড থেকে ফিরে এসে বলেন, ‘আরে আমরা তো পটশিল্পকে, গ্রামীন শিল্পকে পাত্তা দিচ্ছি না। কিন্তু লন্ডনে দেখলাম ভিক্টোরিয়া এলবার্ট মিউজিয়ামের পার্মানেন্ট কালেকশনে এইসব পটশিল্প প্রদর্শিত। ওরা কদর করছে অথচ আমরা কদর করছি না। কামরুল, তুমি পটশিল্প আবার শুরু করো।’ উৎসাহ পেয়ে কামরুল আবার পটশিল্প শুরু করলেন। ১৯৬০ সালে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ডিজাইন সেন্টারে যোগ দেওয়ায়, গ্রামে গিয়ে পুতুল, সরা, পটচিত্র দেখা ও সংগ্রহ করার সুযোগ হয়ে গেল। উনি এগুলো দেখে ছবি আঁকলেন। এইভাবে পটুয়া শিল্পী হিসেবে পরিচিত হলো তাঁর। পটশিল্প যামিনী রায়ও করেছেন। কিন্তু যামিনী রায়ের সঙ্গে পটুয়ার কাজের দারুণ একটা পার্থক্য আছে। যামিনী রায় প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পটশিল্পের অনুকরণই করে গেছেন। সেখানে কোনো সংযোজন পরিবর্ধন সংশোধন করেননি। কিন্তু কামরুল হাসান ‘পটুয়া’ অভিধা সগৌরবে ও সানন্দে গ্রহণ করেও পটশিল্পের শৈলীর সঙ্গে পাশ্চাত্যের শিল্প যোগ করলেন। এটা কীভাবে হলো? পার্থক্য কী? পটশিল্পের মধ্যে কোনো দাগ, লাইন বা ছবি সম্পূর্ণ হবে না। কিন্তু পাশ্চাত্যের শিল্পে তা সম্পূর্ণ করতে হবে। খালি একটা দাগ দিলে হবে না, একটা রেখা দিলে হবে না, একটা ফিগার আংশিকভাবে দেখিয়ে বাকিটা উহ্য রাখা যাবে না, পুরোটা করতে হবে। তিনি এই দুয়ের মধ্যে সম্মিলন করলেন। পটশিল্পের আরেকটা বৈশিষ্ট্য হলো দ্বিমাত্রিকতা, থার্ড ডিমেনশন নেই। এখানে কামরুল যোগ করলেন। উনি রঙ অন্যভাবে ব্যবহার করলেন, মাঝখানে রঙের পাশে আবার অন্য রঙ দিলেন। রঙের যে সারফেস, যে টেক্সচার তৈরি হলো তার ফলে ছবির মধ্যে ত্রিমাত্রিকতা এসে গেল। পটশিল্পের মধ্যেই। লোকজধারার শিল্পের মধ্যেই রঙের ব্যবহার দিয়ে তিনি পাশ্চাত্য শিল্পরীতি নিয়ে এলেন, যেখানে আমরা পার্সপেক্টিভ পেলাম, পরিপ্রেক্ষিত পেলাম, ত্রিমাত্রিকতা পেলাম। যামিনী রায়ের পটশিল্পে কিংবা মৌলিক পটশিল্পে ত্রিমাত্রিকতা নেই। আরো একটা জিনিস তিনি করলেন পিকাসোর অনুসরণে। ফিগার আঁকায় উনি সামনে দিয়ে দেখালেন, আবার সাইড দিয়েও দেখালেন। অর্থাৎ সম্মুখভাগ এবং পার্শ্বভাগ দুটো একসঙ্গে দেখালেন, যেটা পিকাসো তাঁর অনেক ছবিতে করেছেন। আবার পিকাসোর মতোন কোনো কোনো ছবিতে যেখানে পার্শ্ব ছবি দেখা যাচ্ছে, সেখানটায় চোখটাকে মুখের বাইরে নিয়ে গেলেন। এটা আদর্শায়িত বা স্টাইলাইজড ছবি। এইভাবে তিনি পটশিল্পকে অবলম্বন করেছেন কিন্তু অনুকরণ করেননি। সেখানে তিনি পাশ্চাত্যের শিল্প ঐতিহ্যর ওপর ভিত্তি করে থাকা তাঁর নিজস্ব শিল্পবোধের তিনি সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন এবং এই পদ্ধতিতেই আমৃত্যু ছবি এঁকে গিয়েছেন। যেমন তিনকন্যা। এটি কামরুল হাসানের বিখ্যাত ছবি। তিনকন্যায় দেখা যায় যে, সামনের ফিগার আমাদের লোকজ শিল্প অনুযায়ী কিন্তু পেছনের দিকটায় কিউবিজমের প্রভাব এসে গেছে। পেছনের কলাগাছ কিউবে বিভক্ত হয়ে গেছে। কিউবিজম হলো কিউব। দেখলে মনে হবে কতগুলো কিউব এখানে একসঙ্গে সমবেত হয়েছে। সামনের কচুগাছও অনেকটা কিউবের মতো ফর্ম নিয়েছে। এভাবে তিনি তাঁর ছবিতে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মিল ঘটিয়েছেন। পটুয়া নাম নিয়েও তিনি আধুনিক শিল্পীর পরিচিতি রাখতে পেরেছেন। যামিনী রায় যেখানে কেবলই পটশিল্পী হিসেবে পরিচিত, কামরুল সেখানটায় পটুয়া হলেও আধুনিক শিল্পীও বটে। তাঁর অসংখ্য জলরঙের ছবিতে আমরা সম্পূর্ণ কিছু পাই না, আংশিক পাই, ই¤েপ্রশনিস্টিক বা এক্সপ্রেশনিস্টিক, আভাস দেওয়া হচ্ছে, সব কিছু বলছে না, ইঙ্গিত দিচ্ছে, পূর্ণাঙ্গতা নেই। এভাবে তিনি আধুনিকায়ন করেছেন। এবং তাঁর ছবিতে বিষয়বস্তু হিসেবে গ্রামীন দৃশ্য প্রাধান্য পেয়েছে।”

এ পর্যায়ে পটুয়া কামরুল হাসানের অজস্র সৃষ্টিসম্ভারের মধ্য থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে আঁকা প্রতিনিধিত্বমূলক ৩২টি চিত্রকর্মের স্থিরচিত্র দেখানো হয় এবং এর সঙ্গে চলে আলোচক হাসনাত আবদুল হাইয়ের প্রাসঙ্গিক আলোচনা। ছবিগুলোর মধ্যে আছে – তিনকন্যা (১৯৫৫, ১৯৮৩), নাইওর, উঁকি (১৯৬৭), নারী ও বৃক্ষ, কলসি কাঁখে নারী (১৯৭৩, ১৯৭৪, ১৯৮৭), মা ও শিশু (১৯৫০), তিন নারী (১৯৭৯), বিষন্ন নারী (১৯৮৭), ফুল ও নারী (১৯৭৭), দুই নারী (১৯৮৭, ১৯৮৩), নারী নিসর্গ ও পাখি, নবান্ন (১৯৭৮), মাছধরা (১৯৫০), বাউল (১৯৬৮, ১৯৮৪), মোরগ (১৯৮১), বক (১৯৭৪), বাঘ (১৯৪৭), গণবিদ্রোহ (১৯৭৯), রায়বেঁশে নৃত্য (১৯৭৪) ও মাছের স্বপ্ন। এছাড়াও আরো কয়েকটি চিত্রকর্মের স্থিরচিত্র দেখানো হয় যেগুলোর শিরোনাম উল্লেখ ছিল না।
হাসনাত আবদুল হাই বলেন, “কামরুল হাসানের অন্যতম বিখ্যাত ছবি ‘তিন কন্যা।’ তিন কন্যা ৭-৮টা আঁকা হয়েছে। তবে এদের মধ্যে পার্থক্য আছে। মিল শুধু এক জায়গায়, শাড়ির রঙে। প্রত্যেকটা তিন কন্যাতেই ডানদিকের শাড়ি নীল, মাঝখানে লাল আর বামে হলুদ। ১৯৮৩ সালে আঁকা তিনকন্যায় একজনের হাতে কলস, ১৯৫৫ সালে প্রথম আঁকা ছবিতে কারো হাতেই কলস নেই, সবাই আঁচলে দিয়ে মুখ চাপা দিয়ে রেখেছে। তিন কন্যা একই বিষয় নিয়ে আঁকলেও এদের মধ্যে ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য আছে। কামরুল এগুলো ফটোকপির মতো করে আঁকেননি। প্রত্যেকটারই নিজস্বতা আছে।
“ ‘নাইওর’ কামরুল হাসানের আরেক বিখ্যাত ছবি। এই ছবির সঙ্গে আমার একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে। আমি যখন শিল্প সচিবের দায়িত্বকালে খুলনা গিয়েছিলাম। ওখানে নিউজপ্রিন্ট মিলের গেস্টহাউসে আমি ছিলাম। গেস্টহাউসের ড্রইংরুমে দেখি দেয়ালে নাইওর ঝুলছে। আমি মনে করলাম, খুলনায় নিউজপ্রিন্ট মিলের গেস্টহাউসে রাখা এই ছবি নিশ্চয়ই রিপ্রডাকশন হবে। কাছে গিয়ে দেখি, এ তো অরিজিনাল পেইন্টিং! আমি নিউজপ্রিন্টের ম্যানেজারকে বললাম, ‘এটা জানেন কার ছবি?’ তিনি বলেন, ‘না স্যার, এটা আমার আগে কেউ ঝুলিয়েছে।’ আমি বললাম, ‘এটা কামরুল হাসানের বিখ্যাত ছবি নাইওর। এখানে থাকলে কেউ এর মূল্য বুঝবে না। আমি আমার মন্ত্রীকে বলব আপনাদের হেড অফিসে, মতিঝিলে কেমিক্যাল কর্পোরেশনের বিশ তলা দালানের গেস্ট হাউসে একটা গ্যালারি হবে। সেই গ্যালারিতে আপনি এই ছবিটা ঝোলাবেন এবং আমি অন্যান্য শিল্পীর ছবিও যোগাড় করবো।’ এটা করা হয়েছিল। মিনিস্টার ছিলেন জহির উদ্দিন খান। এ কে খান নামে শিল্পপতির ছেলে। খুব সৌখিন মানুষ তিনি। নিজে ছবি আঁকতেন, গান শুনতেন, বাঁশি বাজাতেন। উনি শিশুর মতো আবদার করলেন, ‘সচিব হাসেব আমার ছবিও টানাতে হবে।’ আমি বললাম, ‘ঠিক আছে স্যার। আপনার ছবিও থাকবে।’ ওনার ছবিও ছিল। সর্বশেষ কী হয়েছে সেই ছবির তা আমি জানি না। আমাকে কেউ বলেছিল, এই ছবি জহির উদ্দিন খানের পরের শিল্পমন্ত্রীর অফিসে নাকি ছিল। তার মানে গ্যালারি থেকে নিয়ে এসে শিল্পমন্ত্রীর অফিসে রাখা ছিল। ওখান থেকে ছবিটা কোথায় গেল, বাসায় গেল না কোথায় গেল, এর খবর আমি রাখি না। এই ছবির কিন্তু কোনো কপি নাই। এটাই একমাত্র ছবি।”

“ ‘উঁকি’ কামরুল হাসানের বিখ্যাত ছবির একটি। ছবিতে উঁকি দিচ্ছে একটা গ্রামের মেয়ে। সে ঘরের চার দেয়ালে আবদ্ধ থাকে সারাদিন রাত। তার কৌতূহল আছে বাইরের পৃথিবী নিয়ে। এই অবরুদ্ধ নারী একটা প্রতীক। গ্রামের মেয়েরা এইভাবে ঘরের মধ্যে জীবন কাটায়। তারা এইভাবেই দেখে। এই ছবিতে একটা গল্প বলা হচ্ছে। এটা ছবি ঠিক না। মেয়েটা সারাদিন সংসারের কাজ করে। তার সামনে দেখা যাচ্ছে কলস, তার পাশে রয়েছে দৈনন্দিন কাজের অন্যান্য জিনিস। কিন্তু তার মধ্যেও বাইরের জগত সম্পর্কে তার কৌতূহল আছে। সেই কৌতূহল সে কীভাবে মেটায়? বাইরে যেতে পারে না সে। সে তো ঘরনি। তাই সে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখছে। এটা খুব প্রতীকধর্মী একটা ছবি। এটা আমাদের গ্রামের মেয়েদের সম্পর্কে অনেক কিছু বলে। এখন হয়ত গ্রামের মেয়েরা এতটা অবরুদ্ধ নয়, তারা হয়ত বাইরে আরেকটু বেশিই ঘোরে। কিন্তু ষাটের দশকে যখন ছবিটা আঁকা হয়, তখন গ্রামীন কেন, শহরের অনেক মেয়েরাও এরকম পর্দানশীন থাকতো, ঘরের মধ্যে থাকত।”
১৯৮৩ সালে জলরঙে আঁকা ‘দুই নারী’ ছবিটি স্বয়ং কামরুল হাসান হাসনাতকে উপহার দেন। হাসনাত বলেন, “১৯৮২র দিকে বোধহয় একটা দল কামরুল ভাইকে প্রাণনাশের হুমকি দিলো। তিনি ঢাকা ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকছেন। আমি তখন কুমিল্লা একাডেমিতে। উনি ওখানে এলে আমি বললাম, ‘থাকেন, যতদিন ইচ্ছা।’ উনি মাঝে মধ্যে আমার ওখানে আসতেন। আমার দেয়াল খালি দেখে জিজ্ঞেস করলেন। আমি বললাম, ‘আছে কিছু ছবি ঢাকায়।’ তিনি বললেন, ‘আমার ছবি আছে?’ আমি বললাম, ‘না আপনার ছবি নাই।’ শুনে কিছু বললেন না। উনি ৫-৬ দিন ছিলেন। যাবার আগে আমাকে এই ছবিটা দিলেন। তিনি এর নাম দিলেন ‘মা লক্ষ্ণী।’ একসময় আমি ঢাকায় ফিরে এলে উনি মাঝে মাঝে আসতেন আমার বাসায়। আমি মাঝে মাঝে দাওয়াত করতাম। দাওয়াত ছাড়াও তিনি আসতেন। উনি তখন একা থাকেন। আর থাকতামও আমরা কাছাকাছি। এসেই বলতেন, ‘আমার মা লক্ষ্ণী কেমন আছে?’ আমি বলতাম, ‘ঐ যে দেওয়ালে ঝুলছে, দেখেন।’ এই ছবিটা আমার খুব প্রিয় ছিল। এই ছবি সহ জয়নুল, সুলতানের ছবিও আমাকে বিক্রি করে দিতে হলো ২০১২ সালে আমার স্ত্রী যখন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলো এবং তাঁকে বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলো, তখন। এসব ছবির তো দাম হয় না। একদম পানির দামে বিক্রি করতে হলো। যারা কিনল তারাও সুযোগ নিলো। এটা খুব দুঃখের বিষয়। এত প্রিয় আমার একটা ছবি এবং তিনি আমাকে ভালোবেসে উপহার দিলেন অথচ আমি এটা রাখতে পারলাম না।

” ‘নবান্ন’ (১৯৭৮) ছবিতে কামরুল ফসল তোলার ঋতুতে গ্রামের প্রকৃতির ছবি এঁকেছেন। এখানে ধান কাটছে কৃষক। ধান কাটার সময় পরিবারের মেয়েরাও যে অংশ নিতো, সেই দৃশ্যটা এখানে এসেছে। এটা গ্রামীন বাংলার একটা চিরায়ত ছবি।”
“ ‘মাছধরা’ (১৯৫০) ছবিটিতে ফিগারের যে স্টাইলাইজেশন ও অতিরঞ্জন সেখানে পটুয়া শিল্পরীতির গুরুত্ব স্পষ্ট। নবান্ন এবং এই ছবিতে দ্বিমাত্রিকতা প্রাধান্য পেয়েছে, এখানে থ্রি ডিমেনশন নাই, পার্স্পেক্টিভ নাই। এ ছবিগুলোতে কামরুল পটশিল্পের ঐতিহ্য শতভাগ অনুসরণ করেছেন। শস্যক্ষেত্র, নদী, মাছ সবই এক সমতলে এসে গেছে। বাউল (১৯৬৮) ছবিটিতেও লোকজ ফর্ম প্রাধান্য পেয়েছে।”
লিনোকাট মাধ্যমে কামরুল হাসানের আঁকা ‘রায়বেঁশে নৃত্য’ (১৯৭৪) ছবিটি সম্পর্কে হাসনাত বলেন, “এই ছবিটা খুব ইন্টারেস্টিং। উনি এঁকেছেন ৭৪ সালে। কিন্তু এ ছবির ধারণা নিশ্চয়ই তাঁর মাথায় এসেছে ১৯৩৮ সালে। উনি যখন গ্রামে ব্রতচারী শিবিরে গেলেন অংশ নিতে, সেখানে এই নাচ দেখেছিলেন। এটা কল্পনার জিনিস না। তিনি এই নাচ স্বচক্ষে দেখেছেন। তবে কম্পোজিশনে তাঁর কল্পনার স্থান আছে। এইভাবে তো তারা নাচেনি কিন্তু উনি সাজিয়েছেন এভাবে। ব্রতচারী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত হবার সূচনালগ্নেই তিনি তাঁদের নাচ-গানের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। এই ছবিটা কোনো পটশিল্পীর আঁকা নয়। এটা এঁকেছেন তিনি পটুয়াদের নিয়ে অর্থাৎ যারা গ্রামে থাকে, পটছবি আঁকে তাদের নিয়ে। তিনি ব্রতচারী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার পর এটা নিয়ে ১২টা এই ধরনের নাচ শিখেছেন। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে রায়বেঁশে স¤প্রদায়ের জনপ্রিয় নাচ এটা। রায়বেঁশে নাচের মধ্যে বোল, ডাক, হুঙ্কার ৩টাই তিনি শিখেছিলেন। এর সঙ্গে বাজনা হিসেবে ৪টা বাদনযন্ত্র বাজানো শিখেছিলেন – বাঁশি, ঢোল, মাদল, খমক। কাজেই এই ছবি ৭৪ এ আঁকলেও এর আইডিয়া এসেছে যখন তিনি গুরুসদয় দত্তের ব্রতচারীদের শিবিরে গিয়েছিলেন তখন। এটা একটা বিখ্যাত ছবি। এই ছবির কম্পোজিশন চমৎকার। এর মধ্যে গতিময়তা আছে, চাঞ্চল্য আছে, স্বতঃস্ফূর্ততা আছে। ওরা ওদের জীবন উদযাপন করছে। ওরা গরীব হতে পারে কিন্তু তারা জীবনকে উপভোগ করছে। এবং জীবনকে উপভোগ করছে স্বার্থপরের মতো না, একা না, করছে সম্মিলিতভাবে। যারা নাচছে তারা উপভোগ করছে, যারা এটা দেখছে তারাও উপভোগ করছে। কাজেই এটা একটা যৌথ অভিজ্ঞতা। এইদিক দিয়ে এই ছবিটা অনেককিছু বলে। এর মধ্যে একটা গল্প রয়েছে।”

‘মাছের স্বপ্ন’ ছবি নিয়ে আলোচক বলেন, “ছবিতে জেলে আসলে মাছটা ধরেনি। কিন্তু তার স্বপ্ন যে এরকম একটা মাছ ধরবে। ছবিটা লিনোকাট মাধ্যমে আঁকা, মানে খোদাই করে করে আঁকা। কী চমৎকার ব্যাকগ্রাউন্ড! অন্ধকার রাতটা কী সুন্দর বোঝা যাচ্ছে! জেলের মুখের এক্সপ্রেশন দেখার মতো খোদাই করে আঁকা। জেলে কী ব্যগ্রভাবে, কী আগ্রহের সঙ্গে, কীরকম তীব্রতায়, কীরকম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাছটার দিকে। তার দৃষ্টির মধ্যে আবেগ আছে। দেখে মনে হচ্ছে সে যেন একটা প্রিয় বস্তু পেয়েছে, অনেক দিনের প্রতীক্ষিত কিছু পেয়েছে, একটা আকাঙ্ক্ষিত জিনিস পেয়েছে। এই চোখের দৃষ্টি অনেক কিছু বলে। জেলের চোখের দৃষ্টিটা এখানে সবচেয়ে বড়ো। এমনকি মাছটাও যেন সন্তানের মতো জেলের দিকে তাকিয়ে আছে, হাসছে। একটা শিশুকে যেন জেলে কোলে তুলে ধরেছে এবং তাকে দেখে খুব অবাক হয়ে বলছে, তুই এতদিন পরে এলি! মাছটাও যেন খুব আবেগ ভরে জেলের দিকে তাকিয়ে আছে। এরকম বাঙ্ময় ছবি লিনোকাটে-উডকাটে এইভাবে করা খুব কঠিন। আমার মতে, এটা কামরুলের অন্যতম সেরা ছবি।”
এ পর্যায়ে কামরুল হাসানের আঁকা ৩০টি ড্রইং ও স্কেচের (মূলত ৭০ ও ৮০র দশকের) স্থিরচিত্র দেখানো হয়।

হাসনাত বলেন, “কামরুল হাসান খেরোখাতা লেখা শুরু করেন ৮০র দশকের শুরু থেকে। কিন্তু এর সূচনা হয়েছিল আগেই। খেরোখাতায় লেখা আছে তাঁর দিনপঞ্জি, আর দিনপঞ্জির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কিংবা সম্পর্কহীন ইলাসট্রেশন। ইলাসট্রেশনের মতোই কিছু স্কেচ তিনি করেছেন। অশুভের প্রতিনিধিত্ব করে যেইসব ফিগার যেমন শেয়াল সাপ কুমির পেঁচা এগুলো তাঁর ৭৩ সালের স্কেচে আমরা প্রথম দেখতে পাই। ৭৩ সালে তিনি কিছুটা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন, সেইসময়। খেরোখাতায় নির্দোষ লতাপাতার মোটিফও আছে। কিন্তু যেগুলো উনি ব্যঙ্গ হিসেবে বিদ্রæপের সঙ্গে এঁকেছেন খেরোখাতার কোনো কোনো পাতায়, সেইসব ছবি আমরা ৭৩ সালেই দেখতে পাই। তাঁর খেরোখাতার বিষয় বিচিত্র। সেখানে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা আছে, পরিবার সম্বন্ধে কিছু কথা আছে, পরিচিতজনদের কথা আছে, বন্ধুবান্ধবদের কথা আছে, রাজনীতি নিয়ে কথা আছে, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা আছে। মানে যেদিনই তিনি লিখেছেন, সেদিন তাঁর মনে যে অনুভূতি এসেছে, যে আবেগ এসেছে, যে চিন্তার উদ্রেক হয়েছে সেগুলো উনি খেরোখাতায় সুন্দর গোটা গোটা অক্ষরে অল্পকথায় লিখেছেন। আর এগুলোর অলঙ্করণের জন্য অনেকটা বলা যায় তিনি স্কেচের মতো ছবিগুলো এঁকেছেন। এই ছবি কোথাও আভূমি নত, কোথাও আবার উল্লম্ব। ছবিগুলোর ফর্ম এবং সাইজ এক না। কোথাও যদি লেখা বেশি হয়ে থাকে তাহলে উনি ছবির আকার কমিয়ে দিয়ে বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছেন। খেরোখাতাগুলো সব কামরুল হাসানের মেয়ে নাকি পেয়েছে। এই খেরোখাতা শুধু কামরুলের ব্যক্তিগত অনুভূতির ব্যাপার না বা শুধু তাঁর চিন্তাভাবনা না, এগুলো ঐ সময়ের বেশ নির্ভরযোগ্য দলিলও। উনি যেরকম প্রবন্ধ লিখেছেন শিল্পকলার ওপর, এটা শুধু শিল্প না। পুরো যাপিত জীবনের ওপর, পরিস্থিতির ওপর, পরিবেশের ওপর তিনি মন্তব্য করেছেন। টেস্টামেন্ট অফ হিজ টাইম – তাঁর সময়ের সাক্ষী হিসেবে রয়ে গেছে এই খেরোখাতা। খেরোখাতা তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই খেরোখাতার ছবি দিয়েই কিন্তু শেষ। কেননা তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তে আঁকা ‘দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার খপ্পরে’ খেরোখাতারই ধারাবাহিকতায় আঁকা। এটা খেরোখাতারই একটা এন্ট্রি বলা যায়। খেরোখাতায় তিনি যে মন্তব্য করেছেন তারই ধারাবাহিকতায় ‘দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার খপ্পরে’ আঁকা হয়েছে।”

পটুয়া কামরুল হাসানের সান্নিধ্যধন্য হাসনাত আবদুল হাইয়ের অভিজ্ঞতালব্ধ, তথ্যবহুল ও আন্তরিক আলোচনা এবং আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে কামরুল হাসানের চিত্রকর্মের নমুনা উপস্থাপন সবাইকে মুগ্ধ করে। দর্শক-শ্রোতা পুরোটা সময় উপভোগ করেছেন এবং মন্তব্য করে সক্রিয় থেকেছেন। সামগ্রিকভাবে পটুয়া কামরুল হাসানের জীবন ও শিল্প নিয়ে হাসনাত আবদুল হাইয়ের আলোচনায় সত্যিকার অর্থেই জন্মশতবর্ষে এক পূর্ণাঙ্গ কামরুল হাসানকে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়েছে খুব সীমিত পরিসরে হলেও? পটুয়া কামরুল হাসানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে নিবেদিত, বিজয়ের মাসে পাঠশালার এ আসরের সঞ্চালনায় ছিলেন ফারহানা আজিম শিউলী।






