কানাডার উপ প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড

অনলাইন ডেস্ক : কানাডার উপ প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড গত ৩ ফেব্রæয়ারি, শুক্রবার প্রভিন্সের অর্থমন্ত্রীদের সাথে বৈঠকের পর বলেছেন, মন্থর বিশ্ব অর্থনীতি, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং ক্রমাগত সুদের হার বৃদ্ধির ফলে বর্তমান সময়ে ফেডারেল সরকার অতিরিক্ত ব্যয় করার মত অবস্থায় নেই। তিনি টরন্টোতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ফেডারেল সরকারের আর্থিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রভিন্সগুলোর অর্থমন্ত্রীদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। বৈঠকের পর ফ্রিল্যান্ড এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘এর মানে হল আমাদের সত্যিকারের আর্থিক দায়বদ্ধতাকে সামনে রেখে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এই বাস্তবতা সম্পর্কে প্রাদেশিক এবং আঞ্চলিক অর্থমন্ত্রীদের সাথে খোলামেলা হওয়া আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
উল্লেখ্য, ৭ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো কানাডা হেলথ ট্রান্সফার (সিএইচটি) বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রভিন্সের প্রিমিয়ারদের দাবি নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করতে অটোয়াতে বৈঠক করবেন। প্রভিন্সের প্রিমিয়াররা প্রত্যাশা করছেন, অটোয়া স্বাস্থ্যসেবার ব্যয়ের যে ২২ শতাংশ বর্তমানে দিয়ে থাকে; সেটা এবার বৃদ্ধি করে ৩৫ শতাংশে নিয়ে যাবে। প্রিমিয়াররা স্বাস্থ্যখাতে ফেডারেল সরকারের ব্যয় প্রায় ২৮ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারে উন্নীত করার দাবি করছেন।

ফেডারেলের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তিনি প্রভিন্সের অর্থমন্ত্রীদের কাছে সিএইচটির কোন প্রস্তাব দেননি। তিনি বলেন, ‘আমি সুনির্দিষ্ট কিছু উপস্থাপন করিনি। আমরা সবাই এটি প্রধানমন্ত্রী এবং প্রভিন্স ও টেরিটোরির প্রধানদের উপর ছেড়ে দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি যে ফেডারেল সরকার বর্তমানে যে আর্থিক সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হয়েছে, সে সম্পর্কে সবার সামনে খোলা এবং স্বচ্ছ হওয়া আমার জন্য দরকারী।’ অর্থমন্ত্রী ফ্রিল্যান্ড জানান, ফেডারেল ব্যয় বৃদ্ধি ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতিতে কাজে লাগতে পারে, তবে এটি ব্যাংক অফ কানাডাকে সুদের হার বাড়াতে প্ররোচিত করতে পারে বলেও জানান তিনি।

ব্যাংক তার বেঞ্চমার্ক সুদের হার এক বছরেরও কম সময়ে আট বার বাড়িয়েছে, খুব স¤প্রতি জানুয়ারিতে হার ৪.৫ শতাংশে নিয়ে এসেছে। ব্যাংক অফ কানাডার গভর্নর টিফ ম্যাকলেম সর্বশেষ বৃদ্ধির পরে বলেছেন, ব্যাংক ফেডারেল সরকারের দুই শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার মূল্যস্ফীতি নামিয়ে আনতে সুদ হার বাড়াতে পারে। এদিকে ব্যাংক অফ কানাডা সতর্ক করেছে, কানাডার অর্থনীতি এই বছর সামান্য মন্দার মুখোমুখি হতে পারে। ফ্রিল্যান্ড বলেন, মন্ত্রীরা কীভাবে বাইডেন প্রশাসনের মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইনে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে এবং কানাডায় বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে তা নিয়েও তিনি আলোচনা করেছেন।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন প্রভিন্সের প্রিমিয়ারদের চাপের মুখে গত মাসে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক করতে সম্মত হন। অন্টারিও’র অর্থমন্ত্রী পিটার বেথলেনফালভি বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি, শুধু অন্টারিও’তে নয়, সারাদেশের সব প্রভিন্স ও টেরিটোরির প্রধানদের প্রধানমন্ত্রীর সাথে এক টেবিলে বসে বিষয়টা নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা করা প্রয়োজন, কারণ এর সাথে জড়িত আছে দেশের আপামর মানুষের স্বাস্থ্যসেবা। আপনি যদি টেবিলে না থাকেন তাহলে আলোচনা করতে পারবেন না।’ গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। অন্টারিও’র অর্থমন্ত্রীর সেই টেবিলের আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী মঙ্গলবার অর্থাৎ ৭ই ফেব্রুয়ারি।

বেথলেনফালভি বলেছেন, ফেডারেল সরকার এবং প্রদেশগুলো স্বাস্থ্য-সেবা তহবিলের বিষয়ে একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি। কুইবেকের অর্থমন্ত্রী এরিক গিরার্ড একই সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তিনি ট্রুডোর কাছ থেকে একটি প্রস্তাব দেখতে প্রস্তুত। আলবার্টার অর্থমন্ত্রী ট্র্যাভিস টোয়েস, বেথলেনফালভি এবং গিরার্ডের পরে বক্তব্য রেখে বলেছেন, তিনি আশাবাদী প্রভিন্সের প্রিমিয়াররা এবং ফেডারেল সরকার একটি চুক্তিতে আসতে পারেন। তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, আমরা আলবার্টাতে আশাবাদী যে আমাদের প্রিমিয়ার একটি ভাল প্রস্তাব নিয়ে আমাদের কাছে আসবেন, যা জনগণকে দেওয়া আমাদের প্রতিশ্রæতিগুলি বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।
সূত্র : সিবিসি নিউজ