আরিফ হোসেন বনি : আগামী ২৫শে মার্চ সন্ধ্যা ৮:৩০টায় টরন্টো ফিল্ম ফোরামের আয়োজনে ২০২১ সালে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘বধ্যভ‚মিতে একদিন’ প্রদর্শিত হবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য কাওসার চৌধুরী নির্মিত চলচ্চিত্রটি ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশে সুধিজনের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে।
প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটির কাহিনী সংক্ষেপ হচ্ছে, ১৯৪৭ সাল। ভ্রান্ত দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতে ভারত-বিভাগ এই উপমহাদেশে তীব্র সা¤প্রদায়িকতার জন্ম দেয়। এক হাজার মাইল ব্যবধানের দু’টি ভ‚খন্ড নিয়ে গঠিত পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের ওপরে পশ্চিম পাকিস্তানের আধিপত্য এবং শোষণ নির্যাতনের শুরু তখোন থেকেই। পূর্ব বাংলার মানুষ সেই সময়েই রুখে দাঁড়ায় পাকিস্তানিদের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে। পূর্ব বাংলার ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের শোষন নির্যাতনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামশেষে, একাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে, দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। যুদ্ধের এই নয় মাসে- দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের দোসর রাজাকার আলবদর আলশামসএর হাতে শহীদ হন ৩০ লক্ষ বাঙ্গালি, ধর্ষিত হয় ২ লক্ষ বাঙ্গালি নারী। দখলদারদের অত্যাচারে বাংলাদেশের ১ কোটি মানুষ দেশত্যাগ করে ভারতে শরণার্থীর অসহায় জীবনযাপন করে এই সময়ে। সনাতন ধর্মের অগণিত মানুষ ধর্মান্তরে বাধ্য হয়। বাঙ্গালিদের কয়েক লক্ষ বাড়িঘর এবং বিভিন্ন স্থাপনা পুড়িয়ে দেয় দখলদারদের সম্মিলিত বাহিনী। নির্বিচারে লুন্ঠন করে বাঙালিদের ধন-সম্পদ। একাত্তরে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের দোসর রাজাকার আলবদর আলশামসদের সেই গণহত্যা, লুন্ঠন, নির্যাতন-নিপীড়ন, যুদ্ধাপরাধ এবং তাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের কাহিনীগুলোই এই প্রামাণ্যচিত্রের মূল উপজীব্য।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুদানপ্রাপ্ত এই প্রামাণ্যচিত্র ‘বধ্যভ‚মিতে একদিন’ নির্মাণে নীলফামারি থেকে টেকনাফ পর্যন্ত- বাংলাদেশের ১৪৮টি বধ্যভ‚মিতে- মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা মানুষ, গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী, শহীদ পরিবারের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গণাদের ‘কথন’ ধারণ করে এই প্রামাণ্যচিত্রে সংযোজন করা হয়েছে।
‘বধ্যভ‚মিতে একদিন’ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নিয়ে বলতে গিয়ে টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সভাপতি এনায়েত করিম বাবুল বলেন, টরন্টো ফিল্ম ফোরাম ২০১৪ সালে তার যাত্রার শুরু থেকেই প্রতি বছর ২৫শে মার্চের কালো রাত্রিতে ফোরামের সদস্যরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ হারানো ও ত্যাগী সব মানুষদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। এ বছর এর অংশ হিসেবে সন্ধ্যা ৮টায় ৩০০০ ড্যানফোর্থের রাস্তায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে কিছু সময় দাঁড়ানো হবে। তারপর ৩০০০ ড্যানফোর্থের ৪ নং ইউনিটে টরন্টো ফিল্ম ফোরামের মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রিনিং সেন্টারে আলোচনা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হবে।
এনায়েত করিম বাবুল বলেন, কাওসার চৌধুরীর এই চলচ্চিত্রটি মুক্তিযুদ্ধের এক অসামান্য দলিল। তিনি কয়েক বছর ধরে অনেক নিষ্ঠা, ধৈর্য এবং পরিশ্রম করে এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে জানতে হলে এই চলচ্চিত্রটি দেখা সবার জন্য খুবই জরুরী। তিনি আরও জানান, চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী শেষে পরিচালক কাওসার চৌধুরী অনলাইনে উপস্থিত দর্শদের সাথে চলচ্চিত্রটির নির্মাণ নিয়ে কথা বলবেন। চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।