অনলাইন ডেস্ক : সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) তৈরি করতে যাচ্ছে ভাসমান এক জাদুঘর। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘দুবাই মিউজিয়াম অব আর্ট’ (ডুমা)। আল ফুতাইম গ্রুপের উদ্যোগে এটি ‘দুবাই ক্রিক’-এর পানির ওপর নির্মাণ করা হবে। এ জাদুঘর দুবাইয়ের সৃজনশীল অর্থনীতির বৈশ্বিক রাজধানী হওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি এবং শহরটির সংস্কৃতি ও শিল্পচর্চার ধারাবাহিক বিকাশের প্রতিফলন ঘটাবে। পুরো স্থাপত্য এমনভাবে তৈরি হবে, যা দর্শনার্থীদের দেবে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। গালফ নিউজ

সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম ‘দুবাই মিউজিয়াম অব আর্ট’ (ডুমা) প্রকল্পের নকশা উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ মোহাম্মদ বলেন, সংস্কৃতি ও শিল্প একটি শহরের প্রাণ, এবং এর অগ্রগতির প্রতিচ্ছবি। এগুলো শহরের দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবিক মিশনের গভীরতা প্রকাশ করে। দুবাই মিউজিয়াম অফ আর্ট হবে শহরের নতুন আলোকবর্তিকা, যা শিল্পচর্চাকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং দুবাইয়ের বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে।

তিনি আরও বলেন, দুবাই এখন বিশ্বের সৃজনশীল মানুষদের অন্যতম গন্তব্য। এখানে সৃজনশীল শিল্প ও সম্প্রদায় একসাথে কাজ করছে সৃজনশীল অর্থনীতির বিকাশে। এই নতুন সাংস্কৃতিক নিদর্শন আমাদের কৌশলগত লক্ষ্যকে এগিয়ে নিচ্ছে দুবাইকে একটি বৈশ্বিক সৃজনশীলতার কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।

শেখ মোহাম্মদ আরও বলেন, দুবাই মিউজিয়াম অফ আর্ট প্রমাণ করে যে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের শক্তি কীভাবে সাহসী ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে এবং দুবাইয়ের মর্যাদার উপযুক্ত বিশ্বমানের নিদর্শন তৈরি করতে পারে। আমরা আল ফুতাইম গ্রুপকে ধন্যবাদ জানাই তাদের অবদানের জন্য।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শেখ মনসুর বিন মোহাম্মদ বিন রাশেদ আল মাকতুম (ইউএই ন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির সভাপতি), শেখা লতিফা বিনত মোহাম্মদ বিন রাশেদ আল মাকতুম (দুবাই কালচার অ্যান্ড আর্টস অথরিটির চেয়ারপার্সন), মন্ত্রী মোহাম্মদ আল গারগাভি, ড. আনোয়ার গারগাশ, আবদুর রহমান আল ওয়াইস, মোহাম্মদ আহমেদ আল মুর এবং আল ফুতাইম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও ওমর আল ফুতাইম।

বিশ্বখ্যাত জাপানি স্থপতি তাদাও আন্দোর নকশায় তৈরি এই জাদুঘর স্থানীয় ঐতিহ্য ও আধুনিক স্থাপত্যের এক অনন্য সংমিশ্রণ। ভবনটি প্রতীকী অর্থ, মানবকেন্দ্রিক নকশা, গতিশীল উদ্দেশ্য ও নান্দনিক আকর্ষণকে ফুটিয়ে তুলবে। এটি হবে এমন এক ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতার স্থান, যা ভৌত সীমা অতিক্রম করে।

পানির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এই পাঁচতলা জাদুঘরের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় থাকবে পরিবর্তনযোগ্য প্রদর্শনী গ্যালারি। তৃতীয় তলায় থাকবে রেস্টুরেন্ট ও ভিআইপি লাউঞ্জ, এছাড়া থাকবে ভূমিতল ও বেইসমেন্ট।

প্রদর্শনীর পাশাপাশি এখানে থাকবে শিল্পীদের আলোচনাসভা, প্যানেল আলোচনা, শিক্ষা কর্মসূচি ও আর্ট ফেয়ার। বিশেষভাবে তৈরি ইভেন্ট স্পেস ও ভিআইপি লাউঞ্জে হবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মসূচি। যা শিক্ষা, সংলাপ ও সৃজনশীল উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে।

এই জাদুঘরটি সমুদ্র ও মুক্তোর প্রতীক থেকে অনুপ্রাণিত। জাদুঘরের বাঁকানো শেল আকৃতির বাইরের অংশ ঘিরে রেখেছে বৃত্তাকার প্রদর্শনী হলকে। যা ঐক্য, অনুসন্ধান ও ধারাবাহিকতার প্রতীক। এর কেন্দ্রে একটি নলাকার খোলা জায়গা থাকবে, যার মাধ্যমে প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করে মুক্তোর মতো ঝলমল করবে।

তাদাও আন্দো বিশ্ববিখ্যাত জাপানি স্থপতি, যিনি ১৯৯৫ সালে প্রিৎসকার আর্কিটেকচার পুরস্কার (যা স্থাপত্যের নোবেল নামে পরিচিত) অর্জন করেন। তার নকশা সাধারণত কংক্রিট, আলো ও ছায়ার সূক্ষ্ম সমন্বয়ে তৈরি হয়, যা প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গতি রাখে। তার উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে চিচু আর্ট মিউজিয়াম (জাপান), বোর্স দ্য কমার্স (প্যারিস, ফ্রান্স), এবং মডার্ন আর্ট মিউজিয়াম অফ ফোর্ট ওয়ার্থ (টেক্সাস, যুক্তরাষ্ট্র)।