অনলাইন ডেস্ক : ভেনেজুয়েলা সম্ভাব্য মার্কিন আগ্রাসনের মুখে নিজেদের সুরক্ষায় গেরিলা কৌশলে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। রয়টার্সের হাতে আসা একাধিক নথি ও সূত্রে জানা গেছে, দেশটি ইতোমধ্যে পুরোনো রুশ অস্ত্র মোতায়েনের মাধ্যমে প্রস্তুতি শুরু করেছে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির সামরিক সরঞ্জাম ও জনবলের ঘাটতির এক নিঃশব্দ স্বীকারোক্তি।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট, ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযান চালানোর সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘পরবর্তী লক্ষ্য হবে স্থল।’ তাঁর এই মন্তব্যের পর ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে সন্দেহভাজন মাদকবাহী একাধিক জাহাজে হামলা চালানো হয় এবং ওই এলাকায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়। পরে অবশ্য ট্রাম্প জানান, ভেনেজুয়েলায় সরাসরি হামলার কোনো পরিকল্পনা তার নেই।
অন্যদিকে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট, নিকোলাস মাদুরো, অভিযোগ করেছেন—ট্রাম্প সরকার তাঁকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে। তিনি দাবি করেছেন, দেশের নাগরিক ও সেনারা একযোগে সেই ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করবে। তবে প্রশিক্ষণের ঘাটতি, কম বেতন ও পুরোনো সরঞ্জামের কারণে ভেনেজুয়েলার সামরিক শক্তি যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক দুর্বল।
দেশটির সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে অবগত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সরবরাহ সংকটের কারণে কিছু কমান্ডার স্থানীয় খাদ্য উৎপাদকদের সঙ্গে সমঝোতা করে সৈন্যদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছেন।
এই বাস্তবতায় মাদুরো সরকার দুইটি কৌশলে ভরসা রাখছে—এর একটি হলো গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিরোধ। এই পরিকল্পনা ইতোমধ্যে শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রকাশ করেছেন, যদিও বিস্তারিত জানা যায়নি। অন্য কৌশলটি কী, তা এখনো অজানা।
মাদুরো জানিয়েছেন, ভেনেজুয়েলার প্রায় ৮০ লাখ নাগরিক মিলিশিয়ায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাঁদের অনেকে জানিয়েছেন—দেশ রক্ষায় প্রাণ উৎসর্গ করতেও তারা প্রস্তুত। তবে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, বাস্তবে খুব অল্প সংখ্যক মানুষই সক্রিয়ভাবে প্রতিরোধে নামবে।
ভেনেজুয়েলার সেনা ও ন্যাশনাল গার্ড মিলে প্রায় ৬০ হাজার সদস্য রয়েছে, যাদের ওপরই গেরিলা কৌশল বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব পড়বে। তবে এই বাহিনীর বেশিরভাগ সরঞ্জামই রাশিয়ার তৈরি এবং পুরোনো। দেশটি ২০০০-এর দশকে রাশিয়া থেকে প্রায় ২০টি সুখোই ফাইটার জেট কিনেছিল, কিন্তু প্রতিরক্ষা সূত্রের মতে, এগুলোর সক্ষমতা মার্কিন বি–২ বোমারু বিমানের তুলনায় খুবই সীমিত।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে জানিয়েছে, তারা ভেনেজুয়েলাকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত, তবে উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে। মাদুরো এরই মধ্যে মস্কোর কাছে সুখোই জেট মেরামত, রাডার সিস্টেম উন্নয়ন এবং ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের আবেদন করেছেন। এক সূত্র জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলা ইতোমধ্যে রাশিয়ার তৈরি ৫ হাজার ‘ইগলা’ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে।
সূত্র: রয়টার্স