শাহনুর চৌধুরী: করোনা মহামারির কারণে কর্মী সঙ্কট দেখা দেয়ায় কানাডা জুড়ে বিভিন্ন জরুরী পরিষেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দেশের বড় বড় শহরগুলিতে পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন জরুরি কার্যক্রমে কর্মী সংকট দেখা দিয়েছে। স্বাভাবিক কর্মকান্ড বজায় রাখতে এসব বিভাগে জরুরী ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগের তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।

ব্যাপক সংক্রমণযোগ্য ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের বিস্তারে ইতোমধ্যে কানাডায় ছোট-বড় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নতুন করে বন্ধ হয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মী করনোয় আক্রান্ত হওয়ায় আবার অনেকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় কর্মস্থলে আশা বাদ দিয়েছেন। ফলে মালিকেরা তাদের ব্যবসা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। একইভাবে দেশের জরুরী পরিষেবাগুলোতেও কর্মী সংকট দেখা দেয়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখা কঠিন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ সারাদেশে অনেক পুলিশ সদস্য তাদের অফিসারদের কাছে ছুটি চেয়েছে। ছুটির কারণ হিসেবে তারা অসুস্থতা বা করোনা আক্রান্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছে। কানাডিয়ান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি টম স্টেমাটাকিস বলেছেন, করোনা নিয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে, কেননা এর প্রভাবে আমাদের বিভাগের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবে সব শহরে এই প্রভাব পড়েনি। যেমন বুধবার ভ্যাঙ্কুভার পুলিশ বিভাগ বলেছে, স্টাফিং লেভেল বা কর্মীসংখ্যা নিয়ে এই মুহূর্তে তাদের কোন সমস্যা নেই। তাই তারা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়। কিন্তু উইনিপেগের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানকার পুলিশ প্রধান ড্যানি স্মিথ বুধবার ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করে বলেছেন, শহরের পুলিশিং কার্যক্রম এখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সামনে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি আমাদের কর্মীদের ব্যাপক প্রভাবিত করেছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ করোনার কারণে ছুটিতে রয়েছেন। তার দেয়া হিসাব অনুযায়ী শহরের ১ হাজার ৯০০ পুলিশ পরিষেবা কর্মচারীর মধ্যে বর্তমানে মাত্র ৯০ টি সক্রিয় রয়েছে। ১৭০ জন পুলিশ সদস্য ইতোমধ্যে করনোয় আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে রয়েছেন। ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণার মাধ্যমে পুলিশে পুন:নিয়োগ দেওয়া ছাড়া তার সামনে এখন অন্য কোন পথ খোলা নেই।

অন্য শহরগুলেতেও পুলিশ কর্মীর স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। এডমন্টনে প্রায় ৮ শতাংশ পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে ছুটিতে রয়েছে। এছাড়া ক্যালগারিতে মহামারি শুরুর পর থেকে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি পুলিশ করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। ক্যালগারি ইমারজেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির প্রধান সুসান হেনরির মতে, জরুরি পুলিশিং কার্যক্রম চালু রাখতে অন্যান্য অঞ্চল থেকে অবসরে যাওয়া অফিসারদের পুনরায় নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।

করোনায় পুলিশের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ও প্যারামেডিক খাতেও কর্মী সংকট দেখা দিয়েছে। উইনিপেগ ফায়ার ও প্যারামেডিক সার্ভিসের মুখপাত্র এরিন মেডেন বলেন, তাদের প্রায় ৫ শতাংশ কর্মী করোনাই আক্রান্ত। যারা এখনো সুস্থ আছেন তারা অতিরিক্ত সময় কাজ করে কোন রকমে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। আক্রান্তের সংখ্যা আরো বাড়লে অবস্থা কি হবে বলা যাচ্ছে না।

এডমন্টন ফায়ার রেসকিউ সার্ভিসের প্রধান জো জেটিলনি বলেন, তার বাহিনীর প্রায় ১০ শতাংশ কর্মী বর্তমানে কাজ বন্ধ রেখেছে। করোনার কারণে তারা কাজে আসতে পারছে না। এতে অন্যদের উপর কাজের চাপ অনেক বেড়ে গেছে। সূত্র : সিবিসি