অনলাইন ডেস্ক : কোভিড-১৯ এর তৃতীয় ধাপের ধাক্কা লেগেছে কানাডায়। ইতোমধ্যে দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকাদান কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। কিন্তু মহামারীর তৃতীয় প্রবাহের ধাক্কা শুরুর পরও ওই কর্মসূচী সম্পন্ন হয়নি। এটি এক ধরনের ব্যর্থতাই বলা চলে।
গত ডিসেম্বরে কানাডার ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে সরকার এক বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার বিনিয়োগ করবে। সেই লক্ষ্যে সরকার ৭টি ভিন্ন ভিন্ন টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিও সম্পন্ন করে। সে সময় মন্ত্রী আরো বলেছিলেন, প্রত্যেক কানাডিয়ান যাতে বিনামূল্যে ১০ ডোজ টিকা পেতে পারে সরকার সেই ব্যবস্থা করবে। কিন্তু মন্ত্রীর বক্তব্যের চার মাস পর পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। অধিকাংশ পশ্চিমা দেশ থেকে কানাডার টিকাদান কর্মসূচী অনেক পিছিয়ে আছে। জনসাধারণকে টিকা দেয়ার হারের হিসেবে কানাডার অবস্থান এখন ৪৪তম। বøুমবার্গের এক জরিপ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ফাইজার বায়োটেক থেকে ৫ মিলিয়ন টিকা পাওয়ার ঘোষণাকে মানুষ স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু ওই টিকার সম্পূর্ণ চালান দেশে পৌঁছতে পৌঁছতে জুন মাস পেরিয়ে যাবে।
এই মুহূর্তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড ১৯-এর নতুন নতুন ধরন আঘাত হানছে। কানাডাও এই ঝুঁকির মধ্যে আছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত ২৩ হাজারের বেশি লোক ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১০ লাখ। প্রতিদিনই মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তবে কি দেশটি কোভিডের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে?
ভ্যাকসিন প্রতিবন্ধকতা
গত বছরের শেষ দিকে টিকা সংগ্রহ করা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে কানাডা সরকার। পরে মডার্না, ফাইজার, অস্ট্রাজেনেকা ও জনসন অ্যান্ড জনসনসহ ৭টি টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে মন্ট্রিল প্রশাসন। চুক্তি অনুযায়ী ওই ৭ কোম্পানী থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডোজ টিকা পাওয়ার কথা।
নিজেরা উৎপাদন না করে কানাডা টিকার জন্য বাইরের প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের উপর বেশি নির্ভর করেছে। কিন্তু ভ্যাকসিন আবিষ্কারে বিলম্ব, উৎপাদনের সীমাবদ্ধতা ও রফতানি জটিলতাসহ নানা কারণে সময় মতো টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে এ পর্যন্ত মাত্র ১২% কানাডিয়ান টিকার ১ম ডোজ পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ৩০% এবং ব্রিটেনে ৪৬%। অস্ট্রাজেনেকার টিকা নেয়ার গাইড লাইন নিয়েও হতাশাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গত ফেব্রæয়ারিতে হেলথ কানাডা কর্তৃপক্ষ ১৮ বছরের বেশি সবার জন্য ওই টিকান নিরাপদ বলে ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে সরকার নতুন এক ঘোষণায় বলেছে ৫৫ বছরের নিচে কাউকে অস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া যাবে না।
প্রসঙ্গত ওই কোম্পানীর ৫ লাখ টিকা কানাডায় পৌছেছে। আর গত সপ্তাহে ১.৫ মিলিয়ন ডোজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আগামী জুনের মধ্যে ৪.৪ মিলিয়ন ডোজ কানাডায় পৌছবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে গত সপ্তাহের কিছু ঘটনা থেকে মনে হচ্ছে কানাডার টিকাদান কর্মসূচীতে কিছু পরিবর্তন আনা হতে পারে। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো ঘোষণা দিয়েছেন যে, কানাডাকে ৫ মিলিয়ন ডোজ টিকা দেয়ার জন্য ফাইজার তাদের উৎপাদনের গতি বাড়াবে। এর ফলে আগামী জুনের মধ্যে প্রায় ১৮ মিলিয়ন ডোজ টিকা পাওয়া যাবে। এর মধ্যে জনসন অ্যান্ড জনসনের প্রথম চালান আসবে চলতি মাসের মধ্যে। কানাডা তাদের কাছে প্রাথমিকভাবে ১০ মিলিয়ন ডোজ টিকা চেয়েছে। পরবর্তীতে এই সংখ্যা ২৮ মিলিয়নে পৌছতে পারে। মোট কথা কানাডা সরকার ভবিষ্যতে যাতে টিকার কোনো সঙ্কট না হয় সে বিষয়ে যথেষ্ট সজাগ।
কানাডার সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ অন্টারিওর প্রাদেশিক সরকার এবং ফেডারেল সরকার ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিতরণ কার্যক্রমে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। বৃহৎ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানী সানোফি এসএ পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ মাসের মধ্যে কানাডার সব মানুষের জন্য টিকা উৎপাদন সম্ভব হবে। ২০২৭ সালের মধ্যে ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
করোনার তৃতীয় ঢেউ
অনেক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, করোনার তৃতীয় দফার লক্ষণ থেকে মনে হচ্ছে চলমান টিকা কর্মসূচী এই ভাইরাস ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট নয়। কানাডার প্রধান গণস্বাস্থ্য কর্মকর্তা থেরেসা ট্যাম বলেছেন, আক্রান্ত এখন আবার বাড়ছে। মারাত্মকভাবে আক্রান্তদের নিয়ে হাসপাতালগুলো হিশশিম খাচ্ছে। নতুন ধরনটি চিকিৎসকদের সত্যিই চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।
কানাডার পাবলিক হেলথ এজেন্সির নিরীক্ষায় দেখা গেছে, করোনায় তৃতীয় ওয়েভ আঘাত হানার পর দেশটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্তের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছেছে। ডা. ট্যামের মতে গত ১ সপ্তাহেই আক্রান্তের হার বেড়েছে ৬৪%। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নতুন ধরন আসার পর মৃত্যুর হার ৫৬% বেড়ে গেছে। তিন মাস আগের তুলনায় হাসপাতালে কোভিড রোগী ২১% বেড়েছে। আর আইসিইউ ব্যবহারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮%। সূত্র : বিবিসি