অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড সংখ্যক মানুষের চাকরি ছাড়ার এক বছরের কিছু কম সময় পর এসে সেই একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে কানাডাকে। যুক্তরাষ্ট্রে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষ চাকরি ছেড়েছিলেন। দেশটিতে সেটিই ছিলো এক মাসে সর্বোচ্চ চাকরি ছাড়ার রেকর্ড।
পরিসংখ্যান কানাডা জানিয়েছে, আগস্টে ৩ লাখ ৭ হাজার কানাডিয়ান ছিলেন যারা গত বছরের কোনো এক সময়ে অবসর নেওয়ার জন্য তাদের চাকরি ছেড়েছেন। চাকরি ছাড়ার এ হার এক বছর আগের তুলনায় ৩১.৮ শতাংশ এবং মহামারী শুরুর পূর্বে ২০১৯ সালের আগস্টের তুলনায় ১২.৫ শতাংশ বেশি।
এর সাথে আরো যে সমস্যা যুক্ত হয়েছে তা হল, মহামারী চলাকালীন ৬ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি কানাডিয়ান ৬৫ বছর বয়সে পদার্পণ করেছেন, যা আগের তুলনায় ৯.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
কানাডার শ্রমশক্তি আগস্টে বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে এটি আগের দুই মাসে কমেছে এবং গ্রীষ্মের আগের তুলনায় কমই ছিলো, কারণ কয়েক হাজার লোক সম্পূর্ণভাবে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
পরিসংখ্যান কানাডার তথ্য অনুসারে, এটি এমন নয় যে কেবল ৬৫ বা তার বেশি বয়সী লোকেরা কাজ থেকে অবসরে যাচ্ছেন বরং ৫৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী রেকর্ড সংখ্যক কানাডিয়ান জানিয়েছেন যে, তারা গত ১২ মাসের মধ্যে অবসরে গিয়েছেন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিষয়টি কানাডার সবচেয়ে উচ্চ দক্ষ কর্মীদের ব্যাপকহারে দেশত্যাগকে ত্বরান্বিত করছে — ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব ফেলেছে, মজুরি দ্রুত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছে এবং দেশের ক্ষয়িষ্ণু উত্পাদনশীলতা আরও অধপতনে নেওয়ার শঙ্কা তৈরী করেছে।
ডেসজার্ডিনস গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ জিমি জিন বলেছেন, আমরা অনেক আগে থেকেই জানতাম যে এমন একটি ঝড় আসছে এবং আগামী বছরগুলোতে এটি তীব্র হতে চলেছে। এর ফলে ঝুঁকি যে রয়েছে তা কিছু সেক্টরে আপনারা ইতিমধ্যে দেখতে পাচ্ছেন। দায়িত্ব নেওয়ার জন্য যথেষ্ট কম বয়সী কর্মী না থাকায় লোকেরা চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। অতএব, এখানে মানব পুঁজি ও জ্ঞানের ক্ষতি হচ্ছে।
কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন অনেক কানাডিয়ান তাদের চাকরিতে আরও বেশি দিন থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় অবসর গ্রহণ কমে গিয়েছিলো। এখন বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করার কারণে অনেকে নষ্ট হওয়া সময় পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন এবং ভ্রমণে ও পরিবারের সাথে আরও বেশি সময় কাটাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
তাদের অবসরে যাওয়া শ্রমশক্তিকে সঙ্কুচিত করছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। আর এটি এমন সময় ঘটছে যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আক্রমনাত্মকভাবে মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় সুদের হার বাড়াচ্ছে; অর্থনীতি মন্দার মধ্যে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে।
বাণিজ্য ও নার্সিংয়ের মতো দক্ষ ক্ষেত্রগুলোতে অবসরের সমস্যাটি বিশেষত মারাত্মক। মে মাস থেকে কানাডা স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রায় সাড়ে ৩৪ হাজার কর্মী হারিয়েছে, এমনকি রেকর্ড সংখ্যক নার্সকে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হয়েছে। অন্টারিও নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাথরিন হোয় বলেন, ”এখানে কেউ চাকরি হারাচ্ছে না বরং লোকেরা অবসর নিচ্ছে।” তিনি মহামারী, কাজের পরিস্থিতি এবং কানাডার বৃহত্তম প্রদেশের সাথে মজুরি বিরোধের কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি এখন একটি বিশাল সমস্যা, কারণ আমাদের অনেক কর্মী ছিল যারা অপ্রত্যাশিতভাবে অবসর নিয়েছে। সূত্র : সিবিসি