অনলাইন ডেস্ক : কোভিট-১৯ তথা করোনা ভাইরাসের ছোবলে পৃথিবী জুড়ে মৃত্যুর মিছিলের সাথে সাথে দেখা দিচ্ছে নানা সংকট। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যের এসব সমস্যা গিয়ে চূড়ান্ত আঘাত হানছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। সব দেশই এই অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে নানা পদক্ষেপ হাতে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে কানাডা অন্যদের চাইতে কিছুটা পিছিয়ে আছে বলে মনে হচ্ছে। করোনা মহামারি মোকাবেলায় ব্যর্থতার প্রভাব পড়ছে দেশটির জীবন-যাত্রার মানে। গত কয়েক মাসে কানাডায় জীবন যাত্রার মান কমে গেছে।
প্রাকৃতিক সম্পদের দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী দেশ হওয়া সত্বেও কানাডা ইউরোপ-আমেরিকার অন্যান্য দেশের মতো তার দেশের জনগণকে সঠিক সময়ে করোনার টিকা দিতে পারেনি। টিকা সংগ্রহ ও বিতরণে এখন কিছুটা শৃঙ্খলা এলেও শুরুতে এক্ষেত্রে ব্যর্থতা ছিল অমার্জনীয়। খোদ প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নিজে তার সরকারের এই ব্যর্থতার দায় স্বীকার করেছেন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসব নিয়ে আলোচনা সমালোচনা চলছে। ক্ষমতাসিন দলের সমর্থকেরাও শংকা প্রকাশ করে বলছেন, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সবাইকে টিকার ১ম ডোজ দিতে ব্যর্থ হলে আসন্ন নির্বাচনে দলের ভরাডুবি হতে পারে। টিকা কর্মসূচীর ব্যর্থতার পাশাপাশি গত কয়েক মাসে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও কানাডা অনেক পিছিয়ে পড়েছে। স্টে অ্যাট হোম অর্ডারের জন্য শপিংমল, দোকান এসব বন্ধ আছে। পর্যটন শিল্পে বলতে গেলে ধ্বস নেমেছে। পরিবহন সেক্টরেও ক্ষতি হয়েছে বিপুল। গ্রেহাউন্ডের মতো শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান তাদের বাস সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। অথচ একই প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ব্যবসা চালু রেখেছে। বাস সার্ভিস বন্ধের ঘোষণায় কানাডায় সরাসরি বেকার হবে ৪০০ লোক। এভাবে বিভিন্ন সেক্টরে বেকারত্ব আর দারিদ্র্য বৃদ্ধির ফলে কানাডায় জীবন যাত্রার মান কমে গেছে। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের সাথে পাল্লায় পিছিয়ে পড়ছে কানাডা। ইউরোপ- আমেরিকার বিভিন্ন দেশের সাথে তুলনায়তো বটেই এমনকি এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশ থেকেও কানাডার স্বাস্থ্যখাত এখন অনেক দুর্দশাগ্রস্ত। শুধুমাত্র করোনা ভ্যাকসিনেশনের হিসেবেই কানাডার অবস্থান এখন ৬০ নম্বরে। স্বাস্থ্যখাতে এটি গত ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থান।
১৯৪৫ সালে নেদারল্যান্ডস যখন দখলমুক্ত হয় তখন দেশটি যুদ্ধ, বন্যা আর দুর্ভিক্ষে নাস্তানাবুদ। আর ১৯৫৩ সালে যখন কোরিয়া যুদ্ধের অবসান হয় তখন তাদের অবস্থাও শোচনীয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় তখন হাতে গোনা কয়েকটি ভবন দাঁড়িয়ে ছিল। আর সবই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আবার ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের অর্থনৈতিক অবস্থার কথাও সবার জানা। এই সবগুলো দেশের জীবন যাত্রার মান এখন কানাডার চাইতে ভাল।
কানাডার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে হলে এবং জীবন-যাত্রার মান বাড়াতে হলে সবার আগে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে করোনা মহামারি। আর এর জন্য প্রয়োজন দেশের সব মানুষকে যত দ্রুত সম্ভব টিকার আওতায় আনা। টিকা কর্মসূচীর ব্যর্থতা কানাডার সরকার ও জনগণের জন্য আরো বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সূত্র : ন্যাশনাল পোস্ট