অনলাইন ডেস্ক : যদিও অটোয়া মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবায় ব্যয় বাড়িয়েছে। তবে সরকার যদি আরও ভাল পদ্ধতি বেছে না নেয় তাহলে এ ক্ষেত্রে কানাডার পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে- বলছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ২০২১ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় লিবারেলরা কানাডা মেন্টাল হেল্থ ট্রান্সফার (সিএমএইচটি) চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। প্রতিশ্রুতি অনুসারে পাঁচ বছরে প্রদেশ এবং অঞ্চলগুলোতে মোট ৪.৫ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার বরাদ্দ দেয়ার কথা।
তবে মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো বলেছে, তারা সেই প্রতিশ্রুত অর্থের খুব কমই হাতে পেয়েছে। অন্যদিকে কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে ‘মুড ডিসঅর্ডার’ অর্থাৎ মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থাজনিত রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে রিপোর্ট করা হয়েছে।
অটোয়া তার অঙ্গীকার থেকে সরে এসেছে বলে মনে হচ্ছে। ফেডারেল সরকার এর পরিবর্তে মানসিক স্বাস্থ্য তহবিলকে স্বাস্থ্যসেবা তহবিল চুক্তিতে বৃদ্ধি করছে যা এটি প্রদেশ এবং অঞ্চলগুলোর সাথে মিলে তৈরি করছে। প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, মেন্টাল হেল্থ এন্ড এডিকশন মন্ত্রী ক্যারোলিন বেনেট কানাডা হেলথ ট্রান্সফারে (সিএইচটি) অটোয়ার বরাদ্দকৃত নতুন ২৫ বিলিয়ন ব্যয়ের দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
মানসিক স্বাস্থ্য হল ফেডারেল সরকার কর্তৃক প্রদেশ এবং অঞ্চলগুলোর সাথে স্বাস্থ্যসেবা তহবিলের লেনদেনে চিহ্নিত চারটি ভাগ করা অগ্রাধিকারের মধ্যে একটি; সুতরাং সেই ২৫ বিলিয়ন ডলারের পুরোটাই মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং সহায়তায় ব্যয় করা হবে না।
গত সপ্তাহে একটি সংবাদ সম্মেলনে বেনেট বলেছিলেন, এই ২৫ বিলিয়ন ডলার এখন প্রাথমিক পরিচর্যা পক্ষগুলোতে আরও ভাল মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করবে এবং কানাডিয়ানদের অতিরিক্ত মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা সহ একটি প্রাথমিক সেবা পক্ষের সাথে সংযুক্ত করবে।
ক্যারোলিন বেনেট কানাডার ইতিহাসে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রথম ফেডারেল মন্ত্রী। তিনি স¤প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে শিক্ষক এবং কালো স¤প্রদায়ের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির প্রচেষ্টা পর্যন্ত সবকিছুর জন্য তহবিল ঘোষণা করছেন।
তবে কানাডার মেন্টাল হেলথ কমিশনের নীতি পরিচালক মেরি বারট্রাম বলেছেন, ‘মহামারীর নেতিবাচক মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাবের কারণে এ তহবিল যথেষ্ট নয়। সুতরাং মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় অগ্রাধিকারের উন্নতিতে অতিরিক্ত বিনিয়োগের জন্য এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, বিশেষত যারা মহামারীর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাদের জন্য।
পরিসংখ্যান কানাডার তথ্য অনুসারে, ১২ বছরের বেশি বয়সী ১১.৭ শতাংশ কানাডিয়ান ২০২১ সালে ভালো বা খারাপ মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে রিপোর্ট করেছে; যা ২০২০ সালের তুলনায় দুই শতাংশ বেশি ছিলো। ২০২১ সালে আনুমানিক ৩১ লাখ উত্তরদাতার মানসিক ব্যাধি নথিভুক্ত করা হয়েছে যা ২০২০ সালে যা ২৯ লাখ ছিলো, অর্থাৎ ২ লাখ বেড়েছে।
পরিসংখ্যান সংস্থা কানাডিয়ানদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কোভিড-১৯ -এর প্রভাবগুলো মূল্যায়ন করতে একটি নতুন সমীক্ষা চালাচ্ছে।
টরন্টোভিত্তিক ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট ডাঃ তসলিম অ্যালানি-ভার্জি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কোভিড-১৯ -এর নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি দেখেছেন। মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে ডাঃ তসলিমের কাছে মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা নিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তার অনুমান। আমরা আরও অনেক সংস্থা দেখতে পাচ্ছি যেগুলো আমাদের কাছে তাদের কর্মীদের পরিষেবা দিতে বলার জন্য আমাদের কাছে আসছে, বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা এ বিষয়ে আরও তৎপর হচ্ছি এবং আমি মনে করি সরকারের কাছে আসলে আরও বেশি কিছু পাওয়ার জন্য আরও প্রত্যাশা থাকবে।
কানাডিয়ান মেন্টাল হেলথ অ্যাসোসিয়েশন (সিএমএইচএ) এর পাবলিক পলিসির জাতীয় পরিচালক সারাহ কেনেল বলেছেন, একটি সত্যিকারের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রবর্তন করতে না পারার সরকারী ব্যর্থতা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় একটি বড় ফাঁক তৈরী করেছে। কেনেল বলেন, সিএমএইচএ আশা করে যে ফেডারেল সরকার তার আসন্ন বাজেটে মানসিক স্বাস্থ্য প্রবর্তনকে পুনরুজ্জীবিত করবে।
মানসিক স্বাস্থ্য ছাড়া কোন স্বাস্থ্য নেই, এবং এটি অর্জন করতে সক্ষম হওয়ার জন্য আমাদের সত্যিকারের তহবিল দরকার, বলেন কানাডার মেন্টাল হেলথ কমিশনের নীতি পরিচালক মেরি বারট্রাম।
মহামারীর নেতিবাচক মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাবের প্রতিক্রিয়া হিসাবে ট্রুডো সরকার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি ওয়েলনেস টুগেদার কানাডা অনলাইন পোর্টালে বিনিয়োগ করেছে। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার এবং অন্যান্য পদার্থ ব্যবহারের সমস্যা মোকাবেলায় এটি হেলথ কানাডার সাবস্ট্যান্স ইউজ অ্যান্ড অ্যাডিকশনস প্রোগ্রামে (এসইউএপি) অর্থও ব্যয় করেছে। সূত্র : সিবিসি নিউজ