অনলাইন ডেস্ক : যেসব ক্রেতা বছর খানেক আগে স্টেইনার অন্ট-এ একটি হাউজিং ডেভেলপমেন্টে স্থাপনা কিনেছিলেন তাদের বাড়ির নির্মাণ কাজ শেষ করার আগে ডেভেলপারের সাথে যে আর্থিক চুক্তি হয়েছিল তার থেকে তাদের অতিরিক্ত ১ লাখ ৭৫ হাজার ডলারের বেশি দিতে হবে বলে জানানো হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তে ওইসব ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এবং সরকারকে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
সিবিসি নিউজ একাধিক লোকের সাথে কথা বলেছে, যারা টরন্টো থেকে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার উত্তরে অ্যাশটন মেডোজ ডেভেলপমেন্টে বাড়ি কিনেছে। তারা বলেছেন যে, সা¤প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ব্রায়ারউড ডেভেলপমেন্ট গ্রæপ তাদের বলেছে, বাড়ি নির্মাণ করতে হয় তাদের আরও বেশি অর্থ প্রদান করতে হবে অথবা বাড়ি ছাড়ানো ও আমানত ফিরিয়ে নিতে একটি পারস্পরিক খালাস চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে হবে।
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে শ্রমের উচ্চ মূল্য ও উপকরণের অস্বাভাবিক খরচের পাশাপাশি সরবরাহ চেইন সমস্যার কারণে ব্রায়ারউড ডেভেলপমেন্ট গ্রæপকে হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধির সাথে মানিয়ে চলতে হচ্ছে। সংস্থাটি একটি বিবৃতিতে বলেছে যে, তারা এই চ্যালেঞ্জগুলো পারি দেয়ার চেষ্টা করছে এবং গঠনমূলক উপায়ে কোম্পানিকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে ক্রেতারা যেটি বলছে তা হল, তারা কর্পোরেট লোভের একটি টোপে ধরা পড়েছে। ক্রেতাদের ভাষ্য, অন্টারিও সরকারকে তাদের অবস্থানে থাকা লোকদের রক্ষা করার জন্য আরও কিছু করতে হবে। যদিও প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড আগে বলেছিলেন যে, প্রদেশটি এই ধরনের পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের সাহায্য করার জন্য পদক্ষেপ নেবে। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার যথেষ্ট কাজ করেনি।
জেনিফার লেফিউভর নামে একজন ক্রেতা মহামারীর আগে ২০১৯ সালে তার স্বামীর সাথে একটি বাড়ির ওপর আমানত রেখেছিলেন। জেনিফাে বলেন, আমার মনে হচ্ছে তারা (ডেভেলপার কোম্পানি) আমার ওপর জোর-জবরদস্থি করার চেষ্টা করছে এবং আমার কাছে ফিরে যাওয়ার কোন জায়গা নেই। আমার কেউ নেই। তিনি আরো বলেন, এ কারণে আমি আমার চাকরিতেও ভালোভাবে মনোযোগ দিতে পারছি না। এই লোকেরা খুন করে পালিয়ে যাবে এবং আমার করার কিছুই থাকবে না। জেনিফার মূলত ৬২ হাজার ৫০০ ডলারের বেশি ডিপোজিট জমা দিয়ে মাত্র ৬ লাখ ৫ হাজার ডলারে তার বাড়িটি কিনেছিলেন। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে তার বাড়ি নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার তারিখ ছিলো ৩১ আগস্ট, ২০২১ সালে। কিন্তু ব্রায়ারউড কোম্পানি মহামারী চলাকালীন বিলম্বের নোটিশ পাঠাতে শুরু করে।
মে মাসের শুরুতে জেনিফারকে কোম্পানি মারফত নোটিশ পাঠিয়ে জানানো হয় যে, তার বাড়ির নির্মাণ কাজ ২০২২ সালেও শেষ হবে না। তাকে একটি পারস্পরিক নিষ্পত্তি প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল যেখানে তাদের চুক্তি ভঙ্গ করা যেতে পারে এবং সে তার আমানত ফেরত পাবে বলে উল্লেখ ছিলো। জেনিফার সে নোটিশে স্বাক্ষর করেননি – তিনি ও তার স্বামী কেবল তাদের বাড়িটি তৈরি করতে চেয়েছিলেন।
জুলাই মাসে এই জুটিকে ব্রায়ারউডের সাথে বৈঠকের জন্য ডাকা হয়। জেনিফার বলেছেন, তাদের দুটি বিকল্পের কথা বলা হয়। একটি হল, হয় অতিরিক্ত ১ লাখ ৭৫ হাজার ডলার প্রদান করুন অথবা একটি পারস্পরিক রিলিজ ফর্ম স্বাক্ষর করুন। বাড়ি নির্মাণে প্রাথমিকভাবে তাদের চুক্তিতে স্বাক্ষর করার প্রায় তিন বছর পর এমনটি করা হয়।
মূলত তারা আমাদেরকে যা বলছিলেন তা হল, তারা আমাদের এই বাড়িটি বিক্রি করতে চায় না। তারা এই নতুন দামে অন্য কারো কাছে এটি বিক্রি করতে চায়, বলেন জেনিফার। জেনিফার বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিবিসি নিউজে পাঠানো একটি ইমেল বিবৃতিতে, ব্রায়ারউডের মুখপাত্র স্বিতলানা মান্দ্রাস এমন পরিস্থিতির জন্য মহামারীকে দায়ী করে বলেছেন, এটি উন্নয়ন শিল্পের জন্য “সত্যিই ধ্বংসাত্মক” হয়েছে। অনেক ডেভেলপারদের মতো আমরা এই চ্যালেঞ্জগুলো উৎরে উঠার চেষ্টা করছি এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে গঠনমূলক উপায়গুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি, বলেন মান্দ্রুস।
টরন্টোর রিয়েল এস্টেট আইনজীবী বব অ্যারন সিবিসি নিউজকে বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে ডেভেলপাররা মহামারীকে একটি অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করছেন। গত নভেম্বরে প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড ব্যারিতে একটি কনডো ডেভেলপমেন্টের সাথে যুক্ত অনুরূপ কর্মকাণ্ডের নিন্দা করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, ডেভেলপাররা যদি ইতিমধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং চূড়ান্ত মূল্যে সম্মত হয় তবে তাদের মূল্য বৃদ্ধির খরচও বহন করা উচিত।
তিনি এই প্রক্রিয়াটি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, “কারণ এটি সম্পূর্ণ অন্যায়।” গত শুক্রবার একটি সংবাদ সম্মেলনে আবারও এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ফোর্ড বলেন যে, ডেভেলপারদের ফি নিয়ে কাজ করার জন্য তার “জিরো টলারেন্স” নীতি রয়েছে। সূত্র : সিবিসি