অনলাইন ডেস্ক : বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এক অনাড়ম্বর আয়োজনে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অথচ ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে ছোটখাটো যেকোনো উৎসব আয়োজনের নামেও অপব্যয় ও লুট করা হতো রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থ। মহৎ এই দৃষ্টান্ত দেখিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন প্রধান উপদেষ্টা।
এবার সরকারি অর্থ অপচয় না করে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার আউটডোরে অনাড়ম্বর আয়োজনে প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রধান উপদেষ্টার নববর্ষের শুভেচ্ছা বাণী রেকর্ড করা হয়। আজ পহেলা বৈশাখে এই শুভেচ্ছা বাণী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ড. ইউনূসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন নেটাগরিকরা।
এদিকে, শুভেচ্ছা বাণী রেকর্ডের সময় কী ঘটেছিল, সে প্রসঙ্গে আজ সোমবার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় প্রধান উপদেষ্টার নববর্ষের শুভেচ্ছা বাণী রেকর্ড করা হবে আউট ডোরে। সব ঠিকঠাক করে যখন রেকর্ডিংয়ের সময় আসে, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দেখা যায় এক কোকিলের আশ্চর্যজনক উপস্থিতি। প্রধান উপদেষ্টা নিজেই রসিকতা করে বলে বসেন, তোমরা এই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক কীভাবে জোগাড় করলে।’
উপ-প্রেস সচিব আরও লিখেছেন, ‘আজ যারা টিভি কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উনার শুভেচ্ছা বাণী শুনেছেন, নিশ্চিতভাবেই এই কোকিলের ডাকও খেয়াল করেছেন। যে-রকম হাসি আনন্দের মাঝে এই শুভেচ্ছা বার্তা ধারণ করা হয়েছে, আশা করছি আপনাদের সবার নতুন বছরও এ রকম হাসি আনন্দে ভরে থাকবে।
ফেসবুক ব্যবহারকারী আমিনুজ্জামান মোহাম্মদ লিখেছেন, ইউনুস সরকার যেভাবে নববর্ষ উদযাপন করেছেন—দুইশো টাকার গামছা, চটের বস্তা, আর ২০ টাকার ককশিটে সাল লেখা—তা নিঃসন্দেহে আমাদের সমাজ ও রাজনীতিতে এক গভীর বার্তা বহন করে। এটা ছিল নিছক এক অনুষ্ঠান নয়; বরং তা ছিল এক প্রতিবাদের ভাষা, এক আদর্শিক অবস্থান। এ আয়োজন আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে উৎসবের সৌন্দর্য বা গভীরতা ধন-সম্পদে নির্ধারিত হয় না; বরং সেটি নির্ভর করে উপলব্ধি, আন্তরিকতা ও চিন্তার শুদ্ধতায়।
বর্তমান সমাজে যখন কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে আয়োজন করা হয় তথাকথিত ‘লোকদেখানো’ উৎসব, তখন ইউনুস সরকারের এ ধরনের সরল, স্বচ্ছ ও মাটির কাছাকাছি থাকা উদযাপন এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এটি সাধারণ মানুষের আবেগ ও স্বপ্নের প্রতিফলন, যেখানে গণতন্ত্র মানে ক্ষমতার অপচয় নয়, বরং জনগণের পাশে দাঁড়ানো, জনগণের জীবনধারার সাথে নিজের জীবনধারাকে এক করে তোলা।
আমরা সত্যিই এমন একজন রাষ্ট্রনায়ককেই কামনা করেছি—যিনি লাল গালিচা, দামী স্যুট কিংবা বিলাসবহুল গাড়িতে নয়, বরং সাধারণ গামছায়, চটের বস্তায় মানুষের ভালোবাসায় নিজেকে আবৃত রাখেন। ইউনুস সরকারের এ পদক্ষেপ ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।এই দেশপ্রেমিকের জন্য আমাদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর আশীর্বাদ—কারণ তিনিই প্রমাণ করেছেন যে নেতৃত্ব মানে প্রতীকী প্রাচুর্য নয়, অন্তরের বিশুদ্ধতা।
তারেক আহমেদ লিখেছেন, এক মুজিববর্ষ পালনে হাসিনা খরচ করেছিলো ৪ হাজার কোটি টাকা! ইউনুসের এই স্টেজের দিকে তাকান…বেশি হলে এখানে খরচ হইসে ১০ হাজার! অথচ কি সুন্দর! রুচি অনেক বড় ব্যাপার। রুচির সম্পর্ক মানুষের ব্যক্তিত্বের সাথে, টাকার সাথে নয়। সবচে বড় কথা এখানে জনগণের টাকা মেরে খাওয়ার কোন ধান্ধা নেই। ইউনুস সরকার মুগ্ধ হওয়ার মত সব কাজ করছে।
নাজমুল আলম লিখেছেন, শুভ নববর্ষ ১৪৩২!আসসালামু আলাইকুম স্যার,
এত অল্প খরচে এত সুন্দর কিছু করা যায়—আমরা ভাবতেই পারিনি। আপনি দেখিয়ে দিচ্ছেন, মার্জিতভাবে ভালো কিছু করা কাকে বলে।আল্লাহ আপনাকে সুস্থ ও দীর্ঘজীবী রাখুন।শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা।
উল্লেখ্য, মুজিববর্ষ উদযাপন ও সারাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই তদন্তে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানাসহ আরও অনেকের নাম রয়েছে।