অনলাইন ডেস্ক : গত ৬ই অক্টোবর, বৃহস্পতিবার, অন্টারিও’র প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড অন্টারিও’র শিক্ষা কর্মীদের কোন রকম ধর্মঘটে না যাবার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, বেতন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে কানাডিয়ান ইউনিয়ন অব পাবলিক এমপ্লিয়জ (সিইউপিই), অন্টারিও’র ৫৫,০০০ শিক্ষা কর্মীর শতকরা ৯৬.৫ ভাগ সদস্য ধর্মঘটে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার প্রিমিয়ার ফোর্ড তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, আমরা কখনও স্কুলের কার্যক্রমে কোনরূপ বিঘ্নতা চাই না। আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা সব সময় তাদের স্কুলে ভালো অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করুক, তারা ভালোভাবে স্কুল থেকে জ্ঞান অর্জন করুক। সেই কারণেই আমি শিক্ষা কর্মীদের ইউনিয়নসহ শিক্ষকদের ইউনিয়নের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি, আপনারা কোন ধরনের ধর্মঘটে যাবেন না।’ প্রিমিয়ার তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, ‘যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য সব সময় আলোচনার পথ উন্মুক্ত আছে, এবং আমি সব সময় বিশ্বাস করি, আলোচনার মাধ্যমে যে কোন সমস্যার সমাধান হতে পারে। আপনাদের সমস্যা অবশ্যই নিয়ম নীতির মধ্যে থেকে যতটুকু সমাধান করা সম্ভব সেটা আলোচনার মাধ্যমেই ঠিক হতে পারে। আমি আশা করি, আপনারা আমার এই আহ্বানকে উপেক্ষা করে আমাকে কঠোর হতে বাধ্য করবেন না।’

তবে প্রিমিয়ার শিক্ষা কর্মীদের কাজে ফিরানোর জন্য কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন বা কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলেন নি। তিনি বিশেষ জোর দিয়ে বলেন, করোনা মহামারীর জন্য দুই বছর শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, করোনা পরবর্তী সময়ের বর্তমানের এই কঠিন সময়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা খুবই অবিবেচকের মত কাজ হবে।

কানাডিয়ান ইউনিয়ন অব পাবলিক এমপ্লিয়জ এর অন্টারিও স্কুল বোর্ডস কাউন্সিল অব ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট লরা ওয়ালটন এক বিবৃতিতে বলেন, শিক্ষা কর্মীদের বিষয়ে ইউনিয়ন যে সব প্রস্তাব দিয়েছে, সেগুলো সবই যুক্তিযুক্ত, প্রাসঙ্গিক এবং প্রয়োজনীয়। ওয়ালটন বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য ডগ ফোর্ডের ক্ষমতা এবং সম্পদ দুটোই আছে। তিনি যদি একটু গুরুত্বের সাথে বিষয়টি অনুধাবন করেন এবং শিক্ষা কর্মী যারা বছরে গড়ে মাত্র ৩৯ হাজার ডলার বেতন পেয়ে থাকেন, তাদের দিকে একটু দৃষ্টি দিলে তাদের ধর্মঘটের মত কোন বিষয়ে যাবার কোন প্রশ্নই আসে না।’

কানাডিয়ান ইউনিয়ন অব পাবলিক এমপ্লিয়জ, অন্টারিও’র ইউনিয়নের দাবী এই সব শিক্ষা কর্মীদের বেতন বছরে মোট বেতনের শতকরা ১১.৭ ভাগ বৃদ্ধি করতে, অন্যদিকে ফোর্ড সরকার এই বৃদ্ধি শতকরা ২ ভাগে রাজি আছে এবং যাদের বেতন ৩৯ হাজারের বেশী, তাদের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধি ১.২৫ ভাগে সম্মত আছে।

প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড বলেন, যদিও ইউনিয়ন যে পরিমাণ আর্থিক বৃদ্ধির কথা প্রস্তাব দিয়েছে, সেটা একেবারে অযৌক্তিক, তার পরেও এ বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসা যেতে পারে এবং আলোচনার মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে। প্রিমিয়ার বার বার তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, আমরা যে কোন যৌক্তিক দাবীকে সমর্থন করি। তবে অযৌক্তিক দাবীর মুখে কোনভাবেই যেন স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা এবং স্কুলের বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড বাঁধার সৃষ্টি না হয়, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে।

অন্টারিও’র শিক্ষামন্ত্রী স্টিফেন লীসে বলেন, দীর্ঘ দুই বছর করোনা মহামারীর জন্য আমরা সুষ্ঠুভাবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে সমর্থ হই নি। দীর্ঘ সময় স্কুলে এবং সহপাঠীদের সাথে স্বাভাবিক মেলামেশার করতে না পারার ফলে অনেক শিক্ষার্থীই এখনও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আছে। এ অবস্থায় শিক্ষা ক্ষেত্রে কোন ধরনের বিঘ্নতা সৃষ্টি করা চরম অবিবেচনাপ্রসূত হবে। সেই সাথে বেতনের যে শতকরা ১১.৭ ভাগ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে, সেটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত সেটাও আমাদের ভাবতে হবে। তিনি জানান, অন্টারিও’র শিক্ষা কর্মীদের এই দাবী মানতে হলে প্রভিন্সকে প্রতি বছর কয়েক বিলিয়ন ডলার গুনতে হবে।
এ ব্যাপারে ১৭ এবং ১৮ অক্টোবর কানাডিয়ান ইউনিয়ন অব পাবলিক এমপ্লিয়জ (সিইউপিই) এবং অন্টারিও’র সরকারের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।