অনলাইন ডেস্ক : প্রবাসে বাংলা ভাষা ও শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চা-প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে কানাডার মন্ট্রিয়ল শহরে ‘ধ্রুবপদ পারফর্মিং আর্টস অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’ এর যাত্রা শুরু হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে মঞ্চে সরাসরি দর্শকের উপস্থিতিতে গত ১২ই নভেম্বর, শনিবার ‘বাংলাদেশ কানাডা হিন্দু কালচারাল মন্দির অডিটরিয়াম’ এ অনুষ্ঠিত হয় সুরের আলাপন এর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। অনুষ্ঠানটি দুটি পর্বে বিভক্ত ছিলো। প্রথম পর্বে নতুন প্রজন্মের সংগীত পরিবেশনা এবং দ্বিতীয় পর্ব গীতি আলেখ্য। পরিবেশনায় ছিলেন ড: ইখতিয়ার ওমর, নাদিরা ওমর, শেখর গোমেজ এবং নাজমা কাজী।

শাস্ত্রীয় সংগীতের বিশুদ্ধ রূপ বা গীতশৈলী হলো ধ্রুপদ গীতরীতি। “ধ্রুবপদ” এর বিবর্তিত রূপই হলো ‘ধ্রুপদ’ বা ‘ধুরপদ’, যা শাস্ত্রীয় গীতরীতি পর্যায়ভুক্ত। ধ্রুবপদ বা ধ্রুপদের সাথে বিশুদ্ধতার সম্পর্ক অতি নিবিড়। “ধ্রæবপদ পারফর্মিং আর্টস অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার” বাংলা সংস্কৃতির বিশুদ্ধতা রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলা ভাষা চর্চা, পঠন-পাঠন, উৎকর্ষ, সাহিত্য পাঠ এবং শাস্ত্রীয় সংগীতের পাশাপাশি মূল ধারার সংগীত যেমন রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত, তিন কবির গান- লোক সংগীত বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের প্রশিক্ষণ, নৃত্যের বিভিন্ন শাখায় প্রশিক্ষণসহ চর্চা, সাধনা, প্রচার ও প্রসার এর বিষয়টি ধ্রæবপদ প্রতিষ্ঠানের মুখ্য উদ্দেশ্য। আমরা সকলেই জানি গীত-বাদ্য -নৃত্য এই তিনটি কলার সমন্বয়ে গঠিত সংগীত।


এগারো জন নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীর তবলা লহড়ার মধ্য দিয়ে শুভ সূচনা হয় সুরের আলাপন এর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা’র প্রথম পর্ব। গুরু নকুল দের তত্ত¡াবধানে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা সত্যিকারের প্রশংসার দাবি রাখে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডঃ মমতাজ মমতা’র পরিচালনায় একে একে সম্মেলক গান, একক গান, একক নৃত্য পরিবেশন, একক আবৃত্তি অনুষ্ঠানে অনন্য মাত্রা যোগ করে। অংশগ্রহণে ছিলেন আরোহন, দেবষ্মিতা, দিব্যজিৎ ,মিথিলা, সুকন্যা, শায়েরী, এথিনা, অ্যান্ড্রিয়া, নিলয়, সৌহার্দ্য, ঋদ, আদিত, সরূপ, আদীপ, দিব্যজৎ, অয়ন, আবীর, সৌরভ।

দ্বিতীয় পর্বে ডঃ ইখতিয়ার ওমর, নাদিরা ওমর, শেখর গোমেজ এবং নাজমা কাজী কবিগুরুর গান, কবিতা, পুরাতনী গান ও স্বর্ণযুগের গানের সম্ভারে সাজানো গীতিআলেখ্য সমৃদ্ধ করেছেন সম্মাননীয় সকলদর্শক শ্রোতা সুধীজন প্রিয় জনকে। গীতিআলেখ্য গ্রন্থনা করেছেন শেখর গোমেজ।

শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রেখেছেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী কানাডা সংসদের সভাপতি সুভাষ দাস, বাংলামেইল পত্রিকার সম্পাদক ও এন আর বি টেলিভিশনের কর্ণধার শহিদুল ইসলাম মিন্টু, এ ওয়ান টিউটোরিয়াল, বাংলামেইল পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক কাজী আলম বাবু। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানকারী সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রতিষ্ঠানের নির্দেশক অভিভাবক ডঃ ইখতিয়ার ওমর।
অনুষ্ঠানের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল সহযোগী বাদ্যযন্ত্র, ধ্বনি নিয়ন্ত্রণ, যাদের সহযোগিতা সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাকে এক অপূর্ব স্তরে নিয়ে যায়। অনুষ্ঠানে কী বোর্ডে ছিলেন বাংলাদেশ কানাডাসহ গুণী শিল্পীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়বাদ্যযন্ত্র শিল্পী জাহিদ হোসেন। তবলায় ছিলেন শিল্পী রনি পালমার যিনি কানাডায় অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি নাম এবং যিনি অনেক সিনিয়র গুণী শিল্পী’র সাথে তবলা সঙ্গত করে অত্যন্ত প্রশংসা অর্জন করেছেন।
পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন দু’ই বাংলায় অতি পরিচিত মুখ শ্রীজিৎ চৌধুরী এবং জনপ্রিয় বাচিক শিল্পী নাজমা কাজী। ধ্বনি নিয়ন্ত্রণে ছিলেন মামুন উর রশিদ যিনি বর্তমানে টরন্টোর অতি পরিচিত একটি নাম। মামুন ধ্রæবপদ পারফর্মিং আর্টস অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার পরিবারের অন্যতম সদস্য। অনুষ্ঠানের নান্দনিক মঞ্চ সজ্জায় ছিলেন প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক নাদিরা ওমর।

পুরো অনুষ্ঠানটিকে সম্পন্ন করতে যাঁরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে পাশে থেকেছেন তাঁরা হলেন— গৌতম পাল, তোফাজ্জল হোসেন, ওমর জাহিদ, রিংকী আহমেদ, রাহুল সাহা, দুলাল ভৌমিক, কাজী আলম বাবু এবং শহিদুল ইসলাম মিন্টু। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডঃ মমতাজ মমতা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানান “টরন্টো ফিল্ম ফোরাম” এর প্রতি ক্লাস গ্রহণ ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার মহড়ার জন্য রবিবার তাদের অফিস কক্ষ ব্যবহার করবার জন্য। এছাড়াও তিনি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ কানাডা হিন্দু কালচারাল মন্দির অডিটরিয়াম এর কর্তৃপক্ষকে তাঁদের পূর্ণ সহযোগিতার জন্য।

ডঃ মমতাজ মমতা বলেন, ‘আমরা একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছি মাত্র। বাংলা সংস্কৃতিপ্রেমী অভিভাবক সকলের প্রতি আমাদের বিনীত অনুরোধ শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চায় আপনার সন্তানদের উদ্বুদ্ধ করুন, ধ্রæবপদ পারফর্মিং আর্টস অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার এর সাথে তাদের যুক্ত করে প্রবাসে বাংলাদেশের মান উন্নত রাখতে একে অপরকে সহযোগিতা করতে সচেষ্ট ও সচেতন হয়ে উঠুন আর তবেই আমাদের উদ্দেশ্য সফল উঠবে এ আমাদের বিশ্বাস।’