
অনলাইন ডেস্ক : উপ-প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বলেছেন যে তিনি ‘ইতিমধ্যেই’ একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন, তবে উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোটের (ন্যাটো) পরবর্তী মহাসচিব হওয়ার প্রতিদ্ব›িদ্বতায় থাকতে পারেন বলে যে গুজব ছড়িয়েছে তা অস্বীকার করেননি। বুধবার একটি সংক্ষিপ্ত প্রেস কনফারেন্সের সময় তিনি ন্যাটোর শীর্ষ পদের জন্য প্রতিদ্ব›িদ্বতার কথা বিবেচনা করছেন কিনা জানতে চাইলে, ফ্রিল্যান্ড তার আগ্রহের বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকার করেননি, বরং ব্যাখ্যা করেছেন যে তিনি তার বর্তমান দায়িত্বকে ভালবাসেন।
তিনি ভ্যাঙ্কুভার বিসি-তে লিবারেলদের আয়িজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, আসলে ইতিমধ্যেই আমি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছি, মূলত কানাডার অর্থমন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আমার দুটি বড় দায়িত্ব রয়েছে। এবং আমি সত্যি সত্যিই ওই দায়িত্বের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করছি। ”আমি প্রধানমন্ত্রীর সাথে, আমার মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের সাথে, কানাডিয়ানদের সাথে বিশ্বের একটি চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক সময় পার করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি, বলেন ফ্রিল্যান্ড। তিনি আরো বলেন, ”আমি যা বিশ্বাস করি তা সত্যিকার অর্থে কাজে লাগাতে আমাদের দেশের সামনে অসাধারণ সুযোগ রয়েছে। জাস্টিন ট্রুডোর পরে সরকারের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিসভার সদস্য ফ্রিল্যান্ড ন্যাটোতে শীর্ষ পদের প্রার্থী হওয়ার গুজব কয়েক সপ্তাহ ধরে ন্যাটো পর্যবেক্ষকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। যা এই সপ্তাহের শুরুতে পল ওয়েলস তার নিউজলেটারে প্রথম প্রকাশ করেছিলেন।
ন্যাটোর বর্তমান মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গের মেয়াদ চলতি মাসের শেষের দিকে সামাপ্ত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে গত মার্চে তার মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়। অর্থাত জেনস স্টলটেনবার্গ আগামি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত তার দায়িত্বে থাকছেন। অক্টোবর ২০২৩ নাগাদ নতুন মহাসচিব নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে যার জন্য আরো এক বছর হাতে হয়েছে।
অন্যদিকে ট্রুডো শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করলে কানাডার লিবারেল পার্টির প্রধান হিসাবে ফ্রিল্যান্ডের নাম সম্ভাব্য প্রতিস্থাপন হিসেবেও শোনা যাচ্ছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে তিনি পরবর্তী ফেডারেল নির্বাচনে আবার প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে চান।
ঘোষণার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত কয়েকটি সূত্র ন্যাশনাল পোস্টকে বলেছে, কানাডিয়ান ক‚টনীতিক এবং প্রবীণ আমলা ওয়েন্ডি গিলমারকে আটটি সহকারী মহাসচিব পদের একটিতে আসন্ন মনোনয়নের পাশাপাশি কানাডা ইতিমধ্যেই ন্যাটোর সাথে একটি বৃহত্তর ভূমিকা গ্রহণ করবে। এটা কানাডার জন্য দারুণ খবর। তার মনোনয়ন প্রমান করে যে কানাডা ন্যাটোতে সক্রিয় হচ্ছে, যেখানে এটি এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল পূর্ব দিক, জানিয়েছে একটি শীর্ষস্থানীয় সরকারী সূত্র। সূত্রটি অপারেশন ইউনিফায়ারের মাধ্যমে কানাডার ইউক্রেনীয় সৈন্যদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ওপি রি-অ্যাশিওরেন্সের মাধ্যমে লাটভিয়ায় একটি ন্যাটো টাস্কফোর্সের নেতৃত্বে তার জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করেছে।
গিলমোর ২০১৮ সাল থেকে পাকিস্তানে কানাডার হাই কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এর আগে গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা বিভাগের একজন মহাপরিচালক ছিলেন।
ন্যাটোর ওয়েবসাইট অনুসারে সংস্থার মহাসচিব পদটি ‘ঐতিহ্যগতভাবে’ একজন শীর্ষস্থানীয় ইউরোপীয় রাজনীতিবিদ দ্বারা অধিষ্ঠিত হয়েছে, যিনি জোটের ৩০টি সদস্য রাষ্ট্রের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত দ্বারা নির্বাচিত হন। একজন কানাডিয়ান কখনও এই পদে ভূমিকা পালন করেননি। রয়্যাল মিলিটারি কলেজ এবং কুইন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্রিশ্চিয়ান লিউপ্রেখট বলেছেন, এ বিষয়টি ন্যাটোতে কানাডার শীর্ষ পদ পাওয়ার সম্ভাবনাকে হ্রাস করে। ন্যাটোর সবকিছুই অত্যন্ত রাজনৈতিক, বিশেষ করে ঊর্ধ্বতন পদে কে কি পায় তা নিয়ে যথেষ্ট রাজনৈতিকভাবে চতুর-বাণিজ্যিক খেলা চলে, বলেন লিউপ্রেখট।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং কার্লেটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্যাটারসন চেয়ার স্টিফেন সাইডেম্যান বলেছেন, তিনি স¤প্রতি ন্যাটোর শীর্ষ পদের জন্য ফ্রিল্যান্ডের বিষয়ে গুজব শুনেছেন। তিনি লিউপ্রেখটের সাথে একমত যে, কানাডা তার পক্ষে ঐক্যমত্য ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
আরো একটি কারণ হল, কানাডা তার জিডিপির দুই শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার ন্যাটো প্রতিশ্রুতি পালন করেনি। ২০২১ সালে দেশটি সামরিক খাতে জিডিপির প্রায় ১.৪ শতাংশ ব্যয় করেছে এবং ২০২৭ সালের শেষের আগে অতিরিক্ত ৭৫.৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, সংসদীয় বাজেট কর্মকর্তার মতে। ন্যাশনাল পোস্ট