অনলাইন ডেস্ক : যারা মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা শক্তিশালী এবং কারসাজি করে তারা নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে পারে, কেন সিনিয়র ডেপুটি গভর্নর ক্যারোলিন রজার্সের মতো লোকেরা কেবল তাদের আঙুলের ইশারায় মুদ্রাস্ফীতি দূর করে দিচ্ছেন না। ব্যাংক অফ কানাডার কর্মকর্তারা ঘোষণা করেছে যে, তারা মুদ্রাস্ফীতিকে দমন করতে ‘সংকল্পবদ্ধ’, এবং এটিকে ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার দুই শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে সচেষ্ট। কিন্তু হার বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সেই প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং কষ্টদায়ক হতে পারে।

এমনকি রজার্স গত বৃহস্পতিবার সতর্ক করেছেন যে, ”কানাডা একটি ‘প্রত্যাশিত সঙ্কটের’ সম্মুখীন। মুদ্রাস্ফীতির দিক পরিবর্তন করার চেষ্টা করা কুয়াশার মধ্য দিয়ে একটি বরফখন্ড দেখার পরে টাইটানিককে ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো।” এমন নয় যে কানাডার অর্থনীতি কোন দিক দিয়ে পতনের কাছাকাছি। তথাপি, রজার্স দ্বারা বর্ণিত সমস্যা এমন অর্থনীতির একটি যা সহজভাবে খুব শক্তিশালী।

বেসরকারী এবং সরকারীভাবে অর্থায়ন করা সংস্থা ক্যালগারি ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টকে রজার্স বলেছেন, কানাডিয়ান অর্থনীতির অনেক অংশে চাহিদা সরবরাহকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে এবং কানাডিয়ানদের স্বল্প-মেয়াদী মুদ্রাস্ফীতির উচ্চ প্রত্যাশা এখনো রয়েছে। সমাধান হতে পারতো সুদের হারের তীক্ষ্ণ বৃদ্ধি কাজে লাগিয়ে চাহিদা কমিয়ে এনে সরবরাহকে সমন্বয়ের সুযোগ করে দেওয়া’, বলেন রজার্স।

ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক যেমন বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে, বাজারকে ধাক্কা দিতে দ্রæত সুদের হারে বেশ কয়েক দফা বড় বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাকে তাদের ভাষায় ফ্রন্ট লোডিং বলা হয়। রজার্স বলেন, এটি ভবিষ্যতে আরও উচ্চ হারের প্রয়োজনীয়তা এবং অর্থনীতির আরও সুস্পষ্ট ধীরগতি এড়াতে একটি প্রচেষ্টা।

ঝুঁকি থাকা সত্তে¡ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার খুব বেশি বাড়াতে এবং অর্থনীতিকে গভীর মন্দায় পাঠানোর ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। ব্যাংক অফ কানাডা জোর দিয়ে বলেছে যে, এ ক্ষেত্রে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেলেও এটি মন্দা সৃষ্টি না করার একটি সম্ভাবনা রয়েছে।

কিন্তু আপাতত সমস্যা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়া- এবং সারা বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো অনেক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। রাজস্ব ব্যয়, যেমন- ইউরোপীয় ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানিতে ভর্তুকি বা কানাডার সামাজিক সহায়তা তহবিল, এসব কিছু কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে পথে যাওয়ার আশা করে তার বিপরীত দিকে ঠেলে দেয়। এবং রেট বৃদ্ধি নিজেরাই পণ্যগুলোকে আরও ব্যয়বহুল করে তুলতে পারে।

বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি কানাডিয়ান আমদানির খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে, যদিও লুনির (কানাডিয়ান মুদ্রা) ক্রমবর্ধমান হার মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে একটি ঢাল হিসাবে কাজ করতে পারে। এবং কোন গ্যারান্টি নেই যে সামনে জ্বালানি সহ আরও সরবরাহের বাধা নাও থাকতে পারে, রজার্স বলেছেন।

আরো একটি সমস্যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সর্বদা মুখোমুখি হয় তা হল, তারা এখন যে সুদের হার হ্রাস বা বৃদ্ধি করছে তা বছরের পর বছর ধরে অর্থনীতিতে তাদের পরিকল্পনা মত কাজ নাও করতে পারে। এবারও একই ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রজার্স।
এভাবে ফ্রন্ট লোডিং কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের জিডিপি, চাকরির সংখ্যা এবং অন্যান্য ডেটার মতো সূচকগুলো বোঝার সুযোগ দিতে পারে এবং অর্থনীতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া করছে তা দেখে নেওয়ার পরে ছোট আকারে রেট বৃদ্ধি ব্যবহার করতে পারে — যা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া এড়াতে সহায়তা করেতে পারে।

ভোক্তাদের ব্যয় এবং মজুরি চাহিদা এমন অবস্থানে যেখানে হার বৃদ্ধি এবং ধীর চাহিদার মধ্যে কীভাবে ব্যবধান রয়েছে তা দেখা তুলনামূলকভাবে সহজ। সূত্র : সিবিসি