সুহেল ইবনে ইসহাক, টরন্টো, কানাডা: টরন্টোতে বাংলাদেশী মুসলমানদের জন্য একটি কবরস্থান স্থাপন টরন্টোবাসি বাংলাদেশী মুসলমানদের দীর্ঘ দিনের একটি লালিত স্বপ্ন। আজ অবধি বাংলাদেশীদের দ্বারা পরিচালিত টরন্টোতে কোনো ফিউনারেল হোম নেই। প্রিয়জনের মৃত্যুর পর তাদের শেষ বিদায়ের আয়োজনে বাংলাদেশীদের দৌঁড়াতে হয় ভিনদেশি দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন ফিউনারেল হোমের কাছে। সেই অপ্রাপ্তিটুকু ঘুচাতে এবং বহুদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কমিউনিটির কিছু সংখ্যক ধর্মপ্রাণ সমাজসেবক এগিয়ে এসেছেন এবং প্রাণপনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা হলেন, খসরুজ্জামান চৌধুরী দুলু, কোহিনূর ইসলাম তানবীর, নিজাম এনায়েত হোসেন এনুসহ আরো অনেকে।

ইতিমধ্যেই তাঁদের ব্যাবস্থাপনায় রিচমন্ডহিল মুসলিম সেমেট্রিতে প্রায় তিনশো কবরের সমন্বয়ে একটি বাংলাদেশী গোরস্থান ক্রয় করতে তাঁরা সক্ষম হয়েছেন। বাংলাকাগজের সাথে আলাপকালে অন্যতম উদ্যোক্তা খসরুজ্জামান চৌধুরী দুলু বলেন, “ভবিষ্যতে কবরস্থানটি যে আরো বড় হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আল্লাহর সাহায্য আর সকলের এগিয়ে আসাতে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই কবরস্থানটি বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়েছে। এবার ফিউনারেল হোমের জন্য স্বপ্নযাত্রা।” তিনি আরো জানান, “সকলের সার্বিক সহযোগিতায় অল্পদিনের মধ্যেই ফিউনারেল হোমও সম্পন্ন হবে ইনশা আল্লাহ।”

উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বাংলা কাগজে পাঠানো এতদসংশ্লিষ্ট চিঠিটি হুবহু নি¤œরূপ:
(প্রিয় টরন্টোবাসি,
আসসালামু আলাইকুম। এই বছরের প্রথম দিকে যখন করোনা ভাইরাসের মহামারী শুরু হয় তখন প্রতি দিনই নিজের পরিচিত কাছের মানুষের মৃত্যুর খবর পাচ্ছিলাম। করোনা পূর্ববর্তী মৃত প্রিয়জনদের জানাযা, দাফন কাফন আমরা সবাই মিলে করতে পারলেও করোনা কালিন সময়ে এবং বিশেষ করে করোনায় মৃতদের দাফন-কাফন করার পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ন ভিন্ন। সেই সময়ে খসরুজ্জামান চৌধুরী দুলু ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা কয়েকজন মিলে কমিউনিটিতে ফিউনারেলের কাজ শুর করি এবং কমিউনিটির অনেক প্রিয় মানুষদের শেষ বিদায় জানাই। আমাদের এই প্রচেষ্টাতে অনেকেই সাহায্য করেছেন এবং মন খুলে আমাদের জন্য দোয়া করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ সেই থেকে এখন পর্যন্ত আমরা কমিউনিটির জন্য ফিউনারেলের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, উনি যেনো আমাদের সবার দীর্ঘায়ু দান করেন। আল্লাহ না করুক, যদি আমাদের কমিউনিটির কেউ মৃত্যুবরণ করেন, তা হলে আমরা আমাদের “Canadian Bangladeshi Islamic Funereal Services” এর মাধ্যমে মৃত ব্যাক্তিকে অতি অল্প সময়ে হাসপাতাল থেকে জানাযা এবং দাফন পর্যন্ত সর্বাত্বক সহায়তা দিতে পারবো এবং আমরা প্রয়োজনে এই কাজে আর্থিকভাবেও সাহায্য করতে পারবো ইনশাআল্লাহ্।

আপনারা জানেন, ইতিমধ্যেই আমাদের ব্যাবস্থাপনায় আমরা রিচমন্ডহিল মুসলিম সেমেট্রিতে প্রায় তিনশো কবরের সমন্বয়ে একটি বাংলাদেশী গোরস্থান ক্রয় করতে পেরেছি এবং ভবিষ্যতে এটি যে আরো বড় হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আল্লাহর সাহায্য আর সকলের এগিয়ে আসাতে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তা সম্পন্ন হয়েছে ।

এই দাফন কাফনের কাজ করতে গিয়ে একটি জিনিসের প্রচন্ড অভাব অনুভব করেছি তা হলো নিজেদের না থাকা একটি ফিউনারেলে হোম। প্রিয়জনের মৃত্যুর পর তাদের শেষ বিদায়ের আয়োজনে আমাদের দৌড়াতে হয় ভিনদেশি দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন ফিউনারেল হোমের কাছে। অবশ্যই তা দোষের কিছু নয়, তবে আমাদের কালচারে প্রিয়জনের শেষ বিদায়ে আমরা যে ভাবে সম্মান ও যত্ন সহকারে দাফন কাফন দেখে এসেছি তার কমতি কিন্তু বোধ করছি। টরন্টোতে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশীদের দ্বারা পরিচালিত কোনো ফিউনারেল হোম নেই। কমিউনিটি হিসেবে আমাদের কমতি কিসে? আমরা, আমাদের ছেলে মেয়েরা অন্য দশটি কমিউনিটির সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি এবং মাশাআল্লাহ্ ভালই করছি, তা হলে আমরা কেনো পারবো না নিজেদের জন্য একটি ফিউনারেল হোম করতে? মাত্র কয়েক সপ্তাহের প্রচেষ্টায় যদি একটি গোরস্থান করা যায় তা হলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি বাংলাদেশী ফিউনারেল হোম করা যাবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।

বাংলাদেশি কমিউনিটির নিজস্ব একটি ফিউনারেল হোম এখন সময়ের দাবি, আর সেই দাবি বুকে ধারন করে আমরা সম্পূর্ণ বাংলাদেশীদের দ্বারা পরিচালিত আমাদের নিজস্ব একটি ফিউনারেল হোম করার স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নেমেছি। স্বজন হারানোর প্রচন্ড দুঃখের দিনে কোনো পরিবারকে যেনো দাফন কাফন নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয় সেই একচিলতে স্বস্তির স্থান হবে আমাদের এই ফিউনারেল হোম এমনই স্বপ্ন দেখছি আমরা। অতীতের সকল কাজে আপনারা যে ভাবে এগিয়ে এসেছিলেন আমাদের বিশ্বাস এবারও আপনারা এগিয়ে আসবেন এবং আমাদের জন্য অন্তর থেকে দোয়া করবেন। আপনারা সবাই এগিয়ে আসলে মহান রবের কৃপায় অবশ্যই আমরা আমাদের জন্য এই শহরে একটি ফিউনারেল হোম করতে পারবো। বিস্তারিত জানতে ও পরামর্শ প্রদানে যোগাযোগ করুন: খসরুজ্জামান চৌধুরী দুলু-৪১৬- ৮৯৭-৯১৮৪, কোহিনূর ইসলাম তানবীর-৬৪৭-৫০১-০২৪৯, নিজাম এনায়েত হোসেন এনু – ৪১৬-২০০-৮৬৯৮)