অনলাইন ডেস্ক : কুইবেকে স্কুলগুলো থেকে মাস্ক ম্যান্ডেট তুলে নেয়ার পর কয়েক সপ্তাহ চলে গেছে। কিন্তু অভিভাবকদের উদ্বেগ এখনো কাটছে না। তারা বলছেন, নীতি নির্ধারক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারিরা মহামারির গতি প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন নি। তাদের আশঙ্কা শিশুদের এভাবে বিধিনিষেধের বাইরে রাখলে সংক্রমণ আবার বাড়তে পারে। মন্ট্রিলের একজন অভিভাবক ক্যাথরিন কোরাকাকিস বলেন, তার মেয়ে বেলা চলতি সপ্তাহে মাস্ক ছাড়াই ক্লাসে বসা শুরু করেছে। যদিও তার ১১ বছর বয়সী ওই মেয়ে আরো ২ সপ্তাহ মাস্ক পরে ক্লাসে যেতে সম্মত ছিল, কিন্তু সহপাঠিরা কেউ মাস্ক ব্যবহার না করায় সেও তা বাদ দিয়েছে। তিনি বলেন, মহামারির বিষয়ে আমাদের আরেকটু সচেতন থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।
বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে আমি সত্যিই কিছুটা নার্ভাস। কুইবেকের ইংলিশ প্যারেন্টস কমিটি অ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারি কোরাকাকিস বলেন, বসন্ত বিরতির পর মুখোশগুলো এত দ্রুতসরিয়ে নেয়া ঠিক হয়নি। আমাদের বাচ্চাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার স্বার্থে এটি আরো কিছুদিন রাখা উচিত ছিল।
অনেক অভিভাবক মনে করেন, মহামারি চলাকালে কানাডিয়ান নীতিনির্ধারকেরা বাচ্চাদের জন্য ‘হতাশাজনক’ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত ১ থেকে ৪ মার্চ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে ৬৭ শতাংশ অভিভাবক মনে করেন মহামারি চলাকালে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় নীতি নির্ধারকেরা শিশুদের মঙ্গলের কথা চিন্তা করেনি। অর্থাত শিশুদের বিষয়টি তাদের বিবেচনাতেই ছিল না। এঙ্গাস রিড ইনস্টিটিউট ও সিবিসি যৌথভাবে ওই জরিপের আয়োজন করেছিল। ২ হাজার ৫৫০ জন অভিভাবক এতে অংশ নেন। এদের সবারই ১৮ বছরের কম বয়সী সন্তান রয়েছে। অন্যদিকে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের পিতা-মাতাদের ক্ষেত্রে এই অভিযোগের হার আরও বেশি, প্রায় ৭২%। করোকোকিস বলেন, মুখোশের বিষয়টি ছাড়াও স্কুল সম্পর্কিত আরো অনেক বিষয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। মহামারির কারণে শিশুদের শিক্ষার যে ক্ষতি হয়েছে এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যর যে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণের কোন বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে না। ভ্যাঙ্কুভার এঙ্গাস রিড ইনস্টিটিউটের সভাপতি শচি কার্ল একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, একটি শিশুর জীবনের অনেক কিছুই স্কুল এবং তার চারপাশের পরিবেশ থেকে তৈরি হয়। শিশুর জন্য স্কুল শুধু শেখার জায়গা নয়, এটি তার প্রাথমিক জীবনের বিকাশেরও স্থান। মহামারির কারণে গত আড়াই বছর শিশুরা এসব থেকে বঞ্চিত ছিল। তাই এই ঘাটতি পূরণের জন্য প্রয়োজন বিশেষ পরিকল্পনা। কিন্তু আমাদের নীতি নির্ধারকেরা এই বিষয়টিতে সঠিক পথে হাঁটতে পারেননি। তাদের অবস্থান নিয়ে অভিভাবকেরা তাই হতাশ।
অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও কোভিড-১৯ টাস্ক ফোর্সের চেয়ার ট্রেসি ভেলান কোর্ট বলেন, শিশুদের জন্য মাস্কের পক্ষে যেমন এখন অনেকে কথা বলছেন তেমনি এক সময় অনেকে এর বিপক্ষেও অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে সেটি বড় বিষয় নয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে শিশুদের মঙ্গলের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিনি বলেন, শিশুদের জন্য দুশ্চিন্তা মায়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আবার মায়েদের বিষন্নতা শিশুদের জন্য ভাল নয়। এই চক্র থেকে বের হতে হলে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। সূত্র : সিবিসি