Home কানাডা খবর আবাসন খাতে মন্দার মূল কারণ মর্টগেজ বৃদ্ধি

আবাসন খাতে মন্দার মূল কারণ মর্টগেজ বৃদ্ধি

হাসান আমিন : কানাডায় আবাসন খাত ঝিমিয়ে পড়ার মূল কারণ হিসেবে চলতি বছরের শুরু থেকেই মর্টগেজ বৃদ্ধির হারকে দেখছে বৃহৎ ব্যাংকগুলো। ২০২০ এবং ২০২১ সালে দ্বিগুণ-অঙ্কের প্রবৃদ্ধির প্রবণতা ভেঙে গত ৩১ অক্টোবর, ২০২২ সালে শেষ হওয়া অর্থ বছরে রিয়েল এস্টেট ঋণ ৮ শতাংশ বেড়েছে। ২০ ও ২১ সালে ঐতিহাসিকভাবে কম সুদের হার বাড়ির ক্রেতাদের উৎসাহিত করেছিল এবং ব্যাংকের আয়কে শক্তিশালী করেছিল।

ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে এবং হাউজিং ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, এ বছর বন্ধকী ঋণ বৃদ্ধির হার আরও কমবে।

আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেট বিশ্লেষক জিওফ্রে কোয়ান ক্লায়েন্টদের প্রশ্নোত্তরে বলেন, ‘আমরা মনে করি, বন্ধকী ঋণের প্রবৃদ্ধি আরও হ্রাস পেয়ে নিম্ন থেকে মধ্য-একক সংখ্যায় বছর-বছর বৃদ্ধি পাবে যা উচ্চ বন্ধকের হার এবং দুর্বল হাউজিং ক্রয়ক্ষমতার ফলে বাড়ির বিক্রি কমে যাওয়া এবং বাড়ির দাম পড়ে যাওয়াকে প্রতিফলিত করবে।’ বিনিয়োগ ব্যাংক কিফ, ব্রæয়েট অ্যান্ড উডস (কেবিডব্লিউ) এর গবেষণা অনুসারে, কানাডার ছয়টি বৃহৎ ব্যাংক রিয়েল এস্টেট খাতে সিংহভাগ ঋণের যোগান দিয়ে থাকে, যা চতুর্থ ত্রৈমাসিকে মোট ঋণ হিসেবের ৪৪ শতাংশ অন্তর্ভুক্ত করে।

সুদের হার এক বছরে দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অনেক কানাডিয়ান মর্টগেজ পেতে যে সব যোগ্যতা লাগে তা আর পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছেন না। ঋণদাতারা উচ্চ সুদের হারে ঋণ দেয়া বজায় রাখতে সক্ষম হবেন কিনা তা নির্ধারণ করতে ঋণগ্রহীতাদের ওপর পরীক্ষামূলক চাপ প্রয়োগ কৌশল ব্যবহার করে দেখতে পারে। এই চাপ বাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক।

জানুয়ারি মাসে বাড়ি বিক্রির পরিমাণ কমেছে। টরন্টো এবং ভ্যাঙ্কুভার অঞ্চলে ক্রয়-বিক্রয় যথাক্রমে ৪৫ শতাংশ এবং ৫৫ শতাংশ কমেছে। কেবিডব্লিউ বিশ্লেষক মাইক রিজভানোভিচের মতে, অর্থনীতিবিদরা ব্যাপকভাবে প্রত্যাশা করছেন যে ব্যাংক অফ কানাডা ২০২৩ সাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত রেট কমিয়ে রাখবে এবং পরামর্শ দিয়েছে যে পরের বছর পর্যন্ত বন্ধকী ঋণের প্রতিবন্ধকতাগুলো সহজ হবে না। রিজভানোভিচ ক্লায়েন্টদের আরও বলেন, ‘আমাদের অধীনভুক্ত কানাডিয়ান ব্যাংকগুলোর জন্য আমরা আশা করি যে পরবর্তী কয়েক ত্রৈমাসিকে সরাসরি মর্টগেজ বৃদ্ধির দ্রুত হ্রাস ঘটবে এবং পরবর্তী ২০২৩ -এর মধ্যে সম্ভাব্য সমান ব্যালেন্স দেখা যাবে।’ বাড়ির প্রকৃত ক্রেতাদের ঋণ দেওয়া আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে কারণ কানাডার ব্যাংকিং রেগুলেটর আরও কঠোর নিয়মের প্রস্তাব করেছে যা ঋণগ্রহীতাদের জন্য মর্টগেজ পাওয়া কঠিন করে তুলবে।

ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনের সুপারিনটেনডেন্ট অফিস (ওএসএফআই) জানুয়ারিতে তিনটি প্রস্তাব উন্মোচন করেছে যা ফেডারেল নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোর জন্য আন্ডাররাইটিং নিয়মগুলোকে কঠোর করবে। এর মধ্যে ব্যাংকের তালিকায় থাকা ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের জন্য ‘মর্টগেজ স্ট্রেস এক্সাম’কে শক্তিশালী করা এবং ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঋণগ্রহীতাদের শেয়ার আটকে দেয়া রয়েছে।

বন্ধকী ব্রোকার এবং ট্রাইব ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী ফ্রান্সেস হিনোজোসার মতে, উচ্চ হার এবং কঠোর অনুমোদনের বিধিমালার কারণে ঐতিহ্যগত ঋণদাতাদের কাছে বন্ধক রাখার জন্য যোগ্যতা অর্জনকারী লোকের সংখ্যা এক বছর আগের থেকে কমে গেছে। কঠোর নিয়মের চাপ সম্ভাব্য ঋণগ্রহীতাদের এবং যারা তাদের বন্ধক হালনাগাদ করছে তাদের সাবপ্রাইম এবং প্রাইভেট ঋণদাতাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বড় ছয়টি ব্যাংকে মর্টগেজের জন্য যোগ্যতা অর্জনকারী আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে ধীর কার্যকলাপ এবং তীব্র প্রতিযোগীতার পাশাপাশি ব্রোকাররা লক্ষ্য করছে যে বড় ঋণদাতারা সা¤প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় আবেদন প্রক্রিয়াকরণ এবং অনুরোধে সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক দ্রুততর হয়েছে।

ফ্রান্সেস হিনোজোসা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘যখন আপনি একটি প্রধান ঋণদাতার কাছে একটি চুক্তি জমা দেন তখন আমরা গত দুই বছরে যা দেখেছি তার তুলনায় প্রতিক্রিয়ার সময়টি খুব দ্রুত হয়। এবং তারা এখন যে পরিমাণে আবেদন পাচ্ছে তা সত্যই লক্ষ্যণীয়।’ ব্যাংক অফ কানাডা ইঙ্গিত দিয়েছে যে এটি আরও সুদের হার বৃদ্ধি প্রতিরোধের পরিকল্পনা করছে এবং কানাডা জানুয়ারিতে দেড় লাখ কর্মসংস্থান যোগ করেছে।

যেহেতু উচ্চ হারের সাথে সামঞ্জস্য করতে হচ্ছে তাই ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ধরে রাখার এবং আকর্ষণ করার সমস্ত উপায় অনুসন্ধান করছে। যেহেতু উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হারের মধ্যেই বন্ধকী ঋণ হালনাগাদ করতে হচ্ছে, সেহেতু ঋণগ্রহীতারা কেউ কেউ সামর্থ্যের তুলনায় বেশি অর্থ প্রদানের সম্মুখীন হতে পারেন। সিআইবিসি অনুসারে, অধিকতর গ্রাহকরা উচ্চতর অর্থপ্রদান সহায়ক করার জন্য ৩০ বছরের বেশি সময়সীমার জন্য মর্টগেজ গ্রহণ করছেন। গ্রাহকরা স্বল্প সময়ের জন্য নির্দিষ্ট শর্তাবলীতে আকৃষ্ট হচ্ছেন, কারণ তাদের পরবর্তী কয়েক বছরে প্রত্যাশিত উচ্চ হারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সূত্র : দ্য গেøাব এন্ড মেইল।

Exit mobile version