Home কানাডা খবর আমার চেতনার উন্মেষ আমার জন্মভূমি বাংলাদেশে – শেখ সাদী আহমেদ

আমার চেতনার উন্মেষ আমার জন্মভূমি বাংলাদেশে – শেখ সাদী আহমেদ

আগামী ৬ এবং ৭ আগস্ট টরন্টোর ৯ ডজ রোডের রয়েল কানাডিয়ান লিজন হল-এ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১৬তম টরন্টো বাংলা বইমেলা ২০২২। এই বইমেলা আয়োজনের প্রাণ পুরুষ হচ্ছেন শেখ সাদী আহমেদ। বাংলা ভাষা ও বাংলা সাহিত্যের মূলস্রোতকে কানাডার পরিমণ্ডলে সঠিক স¤প্রসারণের অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে অমায়িক এবং উদ্যোমী ব্যক্তিত্ব শেখ সাদী আহমেদ ২০০৩ সালে কানাডার টরন্টো শহরে প্রথম বাংলা বইয়ের ঐতিহ্যবাহী দোকান ‘অন্যমেলার’ প্রতিষ্ঠা করেন।

‘অন্যমেলা’ টরেন্টোর বাংলা টাউন রূপে জনপ্রিয় ২৯৮৬ ডানফোর্থ সড়কে অবস্থিত। এরই ধারাবাহিকতায় শেখ সাদী আহমেদের সফল নেতৃত্ব ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কানাডার ‘টরন্টো বাংলা বই মেলার’ যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সাল হতে। এই বছর ঐতিহ্যবাহী টরন্টো বাংলা বই মেলা পদার্পণ করবে ষোল বছরে। বর্তমানে টরেন্টো বই মেলা শুধুমাত্র কানাডার বাংলাদেশি লেখক ও বাংলাদেশের প্রকাশক, লেখকদের নয় বরং একইসঙ্গে বহুজাতিক সংষ্কৃতির প্রতি উদার কানাডার অভিবাসী, লেখকসহ সাধারণ মানুষের ভাব ও সংষ্কৃতির আদান প্রদানের একটি সফল জনপ্রিয় বার্ষিক মিলন মেলা আর উৎসবে পরিণত হয়েছে। এইভাবে টরেন্টো বাংলা বই মেলা বাঙালি বাংলা সাহিত্যের মূলস্রোতের বিকাশের অঙ্গীকারে সাংষ্কৃতিক সত্তার এক সফল প্রতিফলন রূপে বাংলাদেশি কানাডিয়ানদের জীবনে ভূমিকা রেখে আসছে।
টরেন্টো বই মেলার স্থপতি ও মূল রূপকার, আয়োজক নিবেদিত প্রাণ বাংলাদেশি কানাডিয়ান শেখ সাদী আহমেদ বাংলাদেশের দেশাত্মবোধে লালিত সাহিত্য ও বইপ্রেমী মানুষ ষ বাংলার আবহমান সাহিত্য সংষ্কৃতির সঠিক বিকাশের প্রতি অবিচল শেখ সাদী আহমেদের নিরলস নেতৃত্বে আর প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ বাংলা বইমেলা কানাডার পরিমণ্ডলে সৃষ্টি করেছে এক অনন্য স্বতন্ত্র ঐতিহ্য বহুমুখী প্রতিবন্ধকতা সত্তে¡ও পাড়ি দিয়েছে দীর্ঘ সফল পথ পরিক্রমা। টরেন্টো বাংলা বইমেলা বাংলাদেশের অমর একুশে ফেব্রুয়ারির বই মেলা অনুষ্ঠিত হবার পর আমাদের ১৯৫২ সালের মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ও মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের আবহের ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর বাংলা বই মেলার পাশাপাশি শেখ সাদী আহমেদ স্থানীয় ও কানাডার বাঙালি লেখক এবং চিন্তাবিদদের সহযোগিতা ও উপস্থিতিতে ‘অন্যমেলায়’ নিয়মিতভাবে আলোচনার আয়োজন করেন। এসব আলোচনায় বাংলা সাহিত্য, নুতন ও দুষ্প্রাপ্য বাংলা বই পরিচিতি, কবিতা পাঠ, বাংলা সাহিত্যের ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্বদের জন্মজয়ন্তী পালন করা হয়। সেই সাথে তাঁর প্রত্যক্ষ উদ্যোগে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস এ স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়।
“রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত- যৌবনা- যদি তেমন বই হয়।” কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী একটি ভাল বইয়ের দীর্ঘস্থায়ী গুরুত্বের দিকটা বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে ইরানের দার্শনিক কবি ওমর খৈয়ামের অমর একটি রুবাইয়া কে এভাবে উল্লেখ করেছেন। একটি ভাল বই, প্রজন্ম হতে প্রজন্মান্তরে মানুষের জীবনবোধের বিকাশ ঘটিয়ে প্রেরণার অমলিন উৎস হয়ে বেঁচে থাকে আর মানবতার সুকুমার বোধগুলিকে বিকশিত করে।

বইমেলার বিভিন্ন দিক নিয়ে শেখ সাদী আহমেদ এর সাথে আলাপ করেছেন কানাডার হ্যালিফ্যাক্স এ বসবাসরত সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিককর্মী ফারজানা নাজ শম্পা। ১৬তম টরন্টো বই মেলার শুরুর প্রাক্বালে ‘বাংলা কাগজ’ এর পাঠকদের জন্য সেই আলাপচারিতা প্রকাশ করা হলো।

ফারজানা নাজ শম্পা : আসসালামু ওয়ালাইকুম। কোন দর্শন ও বিশেষ আদর্শ থেকে কানাডায় প্রবাস জীবনে বাংলা বইয়ের বিকাশ নিয়ে কাজ করেছেন আর এক্ষেত্রে আপনার কোন সুনির্দিষ্ট চিন্তাকে প্রাধান্য দিয়েছেন?

শেখ সাদী আহমেদ: ওয়ালাইকুম আসসালাম। জীবন সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি তা সে পার্থিব কিংবা অপার্থিব যাই হোক না কেন তা হলদর্শন এর মুল বিষয। আর প্রতিটি মান্যু তার চিন্তাচেতনায় বা যেকোনো ক্ষেত্র বিশেষে গভীর উপলব্ধি ধারণ ও বহন করে। এই বহমানতাই তার পরিচয় ও কার্যক্ষেত্র। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে পৃথিবীর যে অঞ্চলেই আমরা বসবাস করি না কেন বাঙালির য়ে আবহমান কৃষ্টি, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি রয়েছে তা অন্যান্য জন এবং নব প্রজন্মের মধ্যে তুলে ধরা; আর এর জন্য প্রয়োজন ভালো বই। আর এ কারণেই বাংলা বইয়ের প্রাধান্য। মেধা ও মনন বিকাশের ক্ষেত্রে মাতৃভাষার চর্চা প্রয়োজন। বই হলো সেই চর্চার অন্যতম সেরা মাধ্যম।

ফারজানা নাজ শম্পা : টরেন্টোর বাংলা বই মেলা আয়োজনে কী মাত্রার প্রতিবন্ধকতার সন্মূখীন হয়েছেন ও হচ্ছেন? প্রতি বছরের এই বই মেলায় সাধারণত কেমন সাড়া মিলছে সেই দিকটা কিছুটা আলোকপাত করবেন কি?

শেখ সাদী আহমেদ: যেকোনো বৃহৎ ও মহৎ কাজ করতে গেলে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা আসে।সেটা স্বাভাবিক। তবে বাংলা বইমেলার মতো অতি উচ্চমার্গের একটি আয়োজন করতে বিশেষত অভিবাসী জীবনে প্রতিক‚ল পরিবেশ; আর্থিক সংকট এবং এ কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা মোতাবেক বই মেলা করা হয়ে উঠে না। এ ছাড়াও ব্যক্তিগত আভিজাত্যের আত্মাভিমান ও অনেকেরই নির্লিপ্তার কারণ একটি প্রতিবন্ধকতা। প্রতি বৎসর অভিবাসীর সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রজন্মের অধিকতর অংশ গ্রহণ বাংলাদেশ থেকে নিরবচ্ছিন্ন বাংলাদেশের স্বনাম খ্যাত প্রকাশকরা যেমন সময়, কথাপ্রকাশ, অনন্যা, অংকুরসহ অন্যান্য প্রকাশকদের অংশ গ্রহন তথা তাদের বিপুল বই সম্ভার অভিবাসী ও প্রজন্মের মধ্যে ব্যপক উৎসাহ উদ্দীপনা এবং আগ্রহ তৈরি করেছে। এ ছাড়া, বাংলা একাডেমিসহ বাংলাদেশের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব টরেন্টো বাংলা বই মেলায় অংশ গ্রহণ করে উৎসাহিত করে গেছেন । একইসঙ্গে স্থানীয় অভিবাসী লেখক, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিকরা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েবই মেলাকে আরও বেগবান করেছেন ।

ফারজানা নাজ শম্পা : টরেন্টো বাংলা বইমেলা সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
শেখ সাদী আহমেদ: টরন্টো বাংলা বইমেলা কানাডার বাংলাদেশিদের একটি বড় অনুষ্ঠান। ১৫তম টরন্টো বাংলা বই মেলা উদ্বোধন কালেবাংলাদেশের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব কবি আসাদ চৌধুরী বলেছেন, টরন্টোর একটি বিশেষ উৎসব এই বইমেলা। এক অর্থে কানাডার এক বড় উৎসব । এই অর্থে সর্ব সাধারণের অভিপ্রায় তার কন্ঠে উচ্চারিত। টরন্টো বাংলা বইমেলা বিগত ২০০৭ সাল থেকে শুরু হয়ে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চলে এ বছর ২০২২ এ ১৬ বৎসরে পদার্পণ করচ্ছে।

ফারজানা নাজ শম্পা : আমরা জানি কানাডায় বাংলা বইয়ের বিকাশে ও বইমেলা বিষয়ক আপনার অবদান অনন্য। সেই প্রেক্ষিত হতে আপনার মতামত কী?
শেখ সাদী আহমেদ: কানাডা বহু সাংস্কৃতিক দেশ হিসেবে পরিচিত এবং এখানে অভিবাসী সকল জাতী, গোষ্ঠী, স¤প্রদায়, এর আপন সংস্কৃতি চর্চা কেসন্মান ও উৎসাহ প্রদান এবং পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় রাষ্ট্রীয়ভাবে। বাংলাদেশি তথা বাঙালি হিসেবে আমার মনে হয়েছে আমাদের জাতীয় জীবনের অনেক কিছু এখানে পালনের চেষ্টা করি এবং পালন করি। সেই হিসেবে আমাদের একটি জাতীয় অনুষ্ঠান বইমেলা। যার সঙ্গে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, এমনকি জাতীয় সত্ত¡া জড়িত। সে রকম একটি জাতীয় বিষয়ের সঙ্গে নিজেকে জড়িত করতে পেরে স্বস্তি অনুভব করি প্রতিনিয়ত। দেখুন কানাডা আমার মাতৃভূমি নয় বাসভূমি। জীবনের অধের্ক সময় এখানে অতিবাহিত করেছি; এই দেশের এই সমাজের অংশ হিসেবে। তবু আমার মানস গঠন, আমার চেতনার উন্মেষ আমার জন্মভূমি বাংলাদেশে। সে দেশের মাটি, আকাশ, বাতাস থেকে বয়োপ্রপ্তি ও স্থিতি লাভ করেছি। এর জন্য আমাকে অতি অবশ্যই সতত মাতৃভৃমি র সেবা ও পরিচর্যা করে যেতে হবে। তা যেকোনো উপায়ে হোক না কেন। আর এটি আমার ব্যক্তিগত অভিমত।

ফারজানা নাজ শম্পা : আপনার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন বিষয়ক কিছুটা ধারণা দিবেন কি?
শেখ সাদী আহমেদ: আমি ও আমার স্ত্রী বাংলাদেশের স্নাতকোত্তর এবং বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরিজীবী ছিলাম। আমার এক কন্যা কানাডায় লেখা-পড়া শেষে কানাডার প্রাদেশিক সরকার এর অধীনে চাকরিরত।

ফারজানা নাজ শম্পা : আন্তরিক ধন্যবাদ শেখ সাদী আহমেদ ভাই আপনার গুরত্বপূর্ণ সময় হতে কিছুটা দেবার জন্য।
শেখ সাদী আহমেদ: আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ।

Exit mobile version