Home আন্তর্জাতিক ইসরায়েলে জার্মান অস্ত্র : জরুরি আদেশ দিলেন না আইসিজে

ইসরায়েলে জার্মান অস্ত্র : জরুরি আদেশ দিলেন না আইসিজে

অনলাইন ডেস্ক : আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) নিকারাগুয়ার অনুরোধ অনুসারে মঙ্গলবার ইসরায়েলের কাছে জার্মান অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের আক্রমণের মধ্যে গাজায় গণহত্যার গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে বলে দেশটি যুক্তি দিয়েছিল।

নিকারাগুয়া আরো দাবি করেছে, জার্মানি যাতে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সাহায্য সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউএতে অর্থায়ন পুনরায় শুরু করে। এর আগে ইসরায়েল অভিযোগ করেছিল, সংস্থাটির কিছু কর্মচারী ৭ অক্টোবর সে দেশে হামাসের হামলায় জড়িত ছিল।

সেই হামলা থেকেই বর্তমান সংঘাতের সূত্রপাত।
আইসিজে নিকারাগুয়ার অনুরোধের বিরুদ্ধে ১৫-১ ভোটে রায় দেন। সভাপতিত্বকারী বিচারক নওয়াফ সালাম এদিন বলেছেন, অন্তর্বর্তী আদেশের জন্য আইনের ৪১ অনুচ্ছেদের অধীনে আদালতের ক্ষমতা প্রয়োগের প্রয়োজন হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

অন্যদিকে ১৬ জন বিচারকের প্যানেল সম্পূর্ণভাবে মামলাটি বাতিলের জার্মান অনুরোধও মঞ্জুর করেননি।

আদালত এখনো নিকারাগুয়ার মামলার যোগ্যতা নিয়ে উভয় পক্ষের যুক্তি শুনবেন। এতে সম্ভবত কয়েক মাস সময় লাগবে।
বিচারক সালাম বলেছেন, আদালত ‘গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের বিপর্যয়কর জীবনযাত্রার বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, বিশেষ করে খাদ্য ও অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনীয়তার দীর্ঘায়িত ও ব্যাপক বঞ্চনার পরিপ্রেক্ষিতে, তারা যার শিকার করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, আদালত ‘আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করার ঝুঁকি এড়াতে, সশস্ত্র সংঘাতের পক্ষগুলোর কাছে অস্ত্র হস্তান্তর সম্পর্কিত সব রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতাগুলো স্মরণ করিয়ে দেওয়া বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।

এর আগে এপ্রিলে দুই দিনের শুনানিতে নিকারাগুয়া ইসরায়েলের অন্যতম বৃহত্তম সামরিক সরবরাহকারী হয়ে গণহত্যাকে সহায়তা করার অভিযোগে জার্মানির বিরুদ্ধে একটি মামলা এনেছিল। তবে জার্মানি অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছে। তাদের আইনজীবী যুক্তি দিয়েছেন, নিকারাগুয়ার মামলাটি ক্ষীণ প্রমাণের ভিত্তিতে তাড়াহুড়া করা হয়েছে এবং এখতিয়ারের অভাবে তা বাতিল করা উচিত।

জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তর এক্সে এই রায়ের পরে জানিয়েছে, তারা আইসিজের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘জার্মানি মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের পক্ষ নয়।

বিপরীতে আমরা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য দিনরাত কাজ করছি। আমরা ফিলিস্তিনিদের মানবিক সাহায্যের বৃহত্তম দাতা। আমরা গাজার মানুষের কাছে যাতে সাহায্য পৌঁছয় তা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। তবে আমরা এটাও দেখতে পাচ্ছি, ৭ অক্টোবরের সন্ত্রাস দুঃখের এই নতুন সর্পিল শুরু করেছে, যার বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। ১০০ জনেরও বেশি জিম্মি এখনো হামাসের হাতে রয়েছে, গোষ্ঠীটি গাজার জনগণকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।’

জার্মানি মামলার শুনানিতে যুক্তি দিয়েছিল, গাজার বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরুর পর থেকে তারা সবেমাত্র ইসরায়েলে কোনো অস্ত্র রপ্তানি করেনি।

আদালত উল্লেখ করেছেন, জার্মানি যুদ্ধের শুরু থেকে যুদ্ধের অস্ত্রের জন্য ইসরায়েলকে মাত্র চারটি রপ্তানি লাইসেন্স দিয়েছে—প্রশিক্ষণের গোলাবারুদের জন্য দুটি এবং একটি পরীক্ষার উদ্দেশ্যে, সেই সঙ্গে ‘বহনযোগ্য তিন হাজার ট্যাংকবিধ্বংসী অস্ত্র’-এর একটি চালান।

বার্লিন কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক ছিল। কিন্তু গাজায় বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় গাজার মানবিক পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান সমালোচনা এবং রাফাহতে স্থল আক্রমণের বিরুদ্ধে কথা বলে ধীরে ধীরে তারা সুর পরিবর্তন করেছে।

জানুয়ারিতে হেগের বিশ্ব আদালত দক্ষিণ আফ্রিকার আনা একটি পৃথক মামলার অংশ হিসেবে রায় দিয়েছিলেন, গণহত্যা কনভেনশনের অধীনে গাজায় ফিলিস্তিনিদের অধিকারের জন্য ‘অপূরণীয় কুসংস্কারের একটি বাস্তব ও আসন্ন ঝুঁকি’ সৃষ্টি হবে। তবে ইসরায়েল দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে যে গাজায় তার হামলা গণহত্যার কাজ। পাশাপাশি জোর দিয়ে বলে, তারা আত্মরক্ষার জন্য কাজ করছে।

সূত্র : আলজাজিরা

Exit mobile version