হাসান আমিন : শার্লটটাউন পার্কিং লটের এক প্রান্তে সবুজে ঘেরা একটুকরো জমিতে তাঁবু খাটিয়ে স্টিভ ওটন তার কুকুর নোভাকে নিয়ে থাকেন। স্টিভ গৃহহীনদের যে আশ্রয়স্থলে থাকতেন সেখানে পোষা প্রাণী রাখার অনুমতি নেই। ক্রিসমাসের দুই দিন পর থেকে আমি রাস্তায় রয়েছি, তবে আমি মাঝেমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতাম, বলেন স্টিভ। স্টিভের ভাষ্য, আশ্রয়কেন্দ্র তাকে উদ্বিগ্ন করে তোলে এবং যখন সে অসুস্থ বোধ করে তখন তার কুকুর সমর্থন এবং শক্তির উৎস হয়।
এর থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় হল ভাল, পোক্ত ও মর্যাদাপূর্ণ সামাজিক আবাসন তৈরি করা, বলেন স্টিভ। শার্লটটাউনে তার তাঁবুর বাইরে কথা বলার সময় স্টিভ ওটন বলছিলেন, তিনি নিশ্চিত নন যে এই বছরের শেষের দিকে ঠান্ডা শুরু হয়ে গেলে তিনি কোথায় থাকবেন। স্টিভ বলেন, প্রথমবারের মত আমি এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি।
কানাডা জুড়ে শহুরে কর্মকর্তারা কীভাবে গৃহহীনদের শিবিরগুলোর ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি মোকাবেলা করা যায় তার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। ভ্যাঙ্কুভারের শহুরে কর্মীরা চলতি সপ্তাহের শুরুতে শহরের ডাউনটাউন ইস্টসাইডে গৃহহীনদের তাঁবু অপসারণ শুরু করেছে। হ্যালিফ্যাক্স শহরে স¤প্রতি ওয়েস্ট-এন্ড পার্কে বসবাসকারী লোকদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নির্দেশ অমান্য করে যারা এখনও রয়ে গেছে তাদের উচ্ছেদ করার জন্য পুলিশকে ডাকা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
মন্ট্রিলে সা¤প্রতিক বছরগুলোতে গৃহহীনদের বেশ কয়েকটি শিবির উচ্ছেদ করা হয়েছে। শহরটি হঠাৎ হঠাৎ তাঁবু টানিয়ে শিবির স্থাপনকারীদের উচ্ছেদ অব্যাহত রাখতে সহায়তা করার জন্য একজন সংযোগ অফিসার নিয়োগ করতে চাইছে। শহরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ক্যাম্পগুলো গৃহহীনতার একটি নিরাপদ বা টেকসই সমাধান নয় এবং এসব ক্যাম্প নিরাপত্তা ঝুঁকিও তৈরি করে।
স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য :
মন্ট্রিলের ওল্ড ব্রæয়ারি মিশন আশ্রয়ের প্রতিনিধি মেরি-পিয়ার থেরিয়েনের মতো পরামর্শকদের যুক্তি হল, কেবল শিবিরগুলো বন্ধ করে দেয়া কোনো উপকারে আসে না। থেরিয়েন বলেন, আমরা শহরের সাথে একমত যে ক্যাম্পগুলো এই মুহূর্তে আবাসন সংকটের দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয়। তবে আমরা চাই যে ক্যাম্পগুলোতে থাকা লোকেদের সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন সমাধান প্রদান করার জন্য তারা একটি প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিক। কারণ তাদের কাছাকাছি স্থানান্তর করাও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হতে যাচ্ছে না।
পর্যাপ্ত আবাসনের অধিকারের বিষয়ে সাবেক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক হিসেবে লেইলানি ফারহা বিষয়টি নিবিড়ভাবে অধ্যয়ন করেছেন। তিনি বলেন, নগর সরকারগুলোকে একা সমস্যা সমাধানের জন্য ছেড়ে দেয়া যাবে না। দুর্ভাগ্যবশত কানাডার বড় ও ছোট শহরগুলোতে শিবিরস্থাপন অবিশ্বাস্যভাবে সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে এটি আরো বেড়েছে, বলেন ফারহা। এর কারণ মহামারীর শুরুতে আশ্রয়স্থলের মতো জমায়েত হওয়াকে অনিরাপদ বলে মনে করা হয়েছিল। মানুষ আর এ ধরণের ক্যাম্পগুলো পছন্দ করছে না।
ফারহা বলেন, যদিও আরও সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত, তবুও কর্মকর্তাদের উচিত ক্যাম্পগুলোতে বসবাসকারী লোকদের বিশুদ্ধ পানির মতো বস্তুর সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা। আমি আশা করি শহর এবং সরকারের উচিত লোকেরা যখন ক্যাম্পে বসবাস করছেই তখন তারা যতটা সম্ভব মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে সেটা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা। কিন্তু সেই জনসংখ্যাকে কীভাবে সঠিকভাবে আবাসনের ব্যবস্থা করা যায় তা খুঁজে বের করাই প্রশাসনের শেষ লক্ষ্য হওয়া উচিত, তিনি বলেন। উদাহরণস্বরূপ, কিচেনার ওন্ট-এর কাউন্সিলররা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় শিবিরগুলোতে সহায়তা প্রদানের একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন।
আরও আশ্রয়, আরও আবাসন :
টরন্টোতে রাস্তায় বসবাসকারীদের থাকার জন্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখনও পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এই মাসের শুরুর দিকে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, গত দেড় বছরে এক রাতের ভিত্তিতে, বিছানার অভাবের কারণে গড়ে ৪০ জন লোককে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। শহরটির কর্মকর্তারা বলছেন, আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানের অভাব জরুরীভাবে সমাধান করা দরকার, তবে আরও আবাসনই একমাত্র মূল সমাধান। সূত্র : সিবিসি