Home কানাডা খবর কানাডায় আবাসন সঙ্কট সমাধানে নতুন গৃহকরের প্রস্তাব কাজে আসবে কী?

কানাডায় আবাসন সঙ্কট সমাধানে নতুন গৃহকরের প্রস্তাব কাজে আসবে কী?

অনলাইন ডেস্ক : কানাডার গৃহায়ণ খাত এখন সবচেয়ে ব্যয়বহুল বাজারে পরিণত হয়েছে। বাড়ির দাম বাড়ছে লাগামহীন গতিতে। এমন পরিস্থিতিতে ক্রয় ক্ষমতার ব্যবধান কমানো তথা সাম্যতা রক্ষায় ভ্যাঙ্কুভারভিত্তিক একটি থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের বাড়ির উপর নতুন গৃহকরের প্রস্তাব করেছে। তাদের মতে, এই কর আরোপের মাধ্যমে দেশের আবাসন সঙ্কটের সমাধান হতে পারে।

যদিও করোনা মহামারীর শুরুতে ২০২০ সালের মার্চে কানাডার ‘আবাসন বাজার’ খুবই মন্দা ভাবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু শিগগিরই এটি চাঙ্গা হতে শুরু করে এবং ২০২১ সালের প্রায় পুরো সময়টা হাউজিং সেক্টরে ‘অগ্নিমূল্য’ বিরাজ করতে থাকে। নভেম্বরে কানাডায় বাড়ির গড় মূল্য রেকর্ড ৭ লাখ ২০ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে ওই রেকর্ড মূল্য বৃদ্ধি সত্তে¡ও গত বছর বাড়ি বিক্রির সংখ্যাতেও নতুন রেকর্ড স্থাপিত হয়। ২০২১ সালে রেকর্ড ৬ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি বাড়ি হাতবদল হয়।

কানাডার গৃহায়ণ খাতের এই ‘প্রচণ্ড গতি’ অর্থনীতিবিদদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। তাদের মতে, খুব শিগগিরই এই বাজারের পতন হবে। তখন তা হবে খুবই বেদনাদায়ক। সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন উপায় উদ্ভাবনের কথা বলা হচ্ছে। যদিও এখনও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি, তবুও নতুন করারোপসহ সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা চলছে।

কানাডার সবচেয়ে ব্যয়বহুল দুটি আবাসন বাজার হচ্ছে টরন্টো ও ভ্যাঙ্কুভার। চলতি সপ্তাহেও এই দুই নগরীর বাজার চিত্র ছিল ঊর্ধ্বমুখী। গ্রেটার টরন্টো এরিয়াতে (জিটিএ) গত মাসে সব ধরনের বাড়ির বেঞ্চ মার্ক মূল্য ছিল ১২ লাখ ৮ হাজার ডলার। বছরের শুরুর মূল্যের চাইতে যা ছিল ৩১ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে ভ্যাঙ্কুভারে ওই সময়ে মূল্য বৃদ্ধির হার ছিল ১৭ শতাংশ। তবে সেখানে বাড়ির গড় মূল্য ছিল জিটিএ’র চাইতে বেশি, ১২ লাখ ৩০ হাজার ২০০ ডলার। এই দুই অঞ্চলের বাড়ির গড় মূল্য পুরো কানাডার বাড়ির জাতীয় গড় মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ।

উভয় বাজারেই ১ মিলিয়ন ডলারের কমে একক পরিবারের জন্য বাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ভ্যাঙ্কুভারভিত্তিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ‘জেনারেশন স্কুইজ’ চলতি সপ্তাহে ১ মিলিয়ন ডলার বা তার বেশি মূল্যের বাড়ির উপর নতুন কর আরোপের প্রস্তাব করেছে। গোষ্ঠীটির দাবি তাদের এই ‘প্রগতিশীল ট্যাক্স’ প্রস্তাব কম মূল্যের বাড়ির প্রতি আগ্রহ কমাবে এবং ৩ মিলিয়ন ডলার বা তার বেশি দামের বাড়ির নির্মাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

জেনারেশন স্কুইজের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন পল কেরশো, যিনি ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার একজন অধ্যাপক তিনি বলেছেন, এই কর বার্ষিক ভিত্তিতে হিসাব করা হলেও বাড়ি বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত তা স্থগিত থাকবে। তাই এটি ভ‚মি স্থানান্তর করের মতো কাজ করবে, যা অনেক প্রদেশ ও পৌরসভায় ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে।

কেরশো আরো বলেন, হাউজিং ব্যবসার ধারাবাহিকতা রক্ষায় এই করের প্রয়োজন রয়েছে। ব্যবসার স্বার্থেই রিয়েল এস্টেট মালিকেরা এটি দিতে সম্মত হবে। ফলে সাধারণ মানুষকে এই করের বোঝা খুব একটা বহন করতে হবে না।

কেরশো এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তার অনুমান এই কর আরোপের ফলে বছরে ৫ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল গঠিত হতে পারে। এই তহবিল আবাসন খাতের যে কোন সঙ্কট সমাধানে সহায়তা করবে।

তবে সমালোচকেরা বলছেন, কানাডায় বর্তমানে বাড়ির চাহিদা বেশি হওয়ায় মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন কর আরোপ করে মূল্য আরো বাড়িয়ে চাহিদা কমানোর চেষ্টা করা ঠিক হবে না। বরং নতুন নতুন বাড়ি নির্মাণের মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী যোগান বৃদ্ধি করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। গুয়েলফ বিশ্ববিদ্যালয়ের রিয়েল এস্টেট ফাইনান্স বিভাগের সাবেক অধ্যাপক জেন লেন্ডারভিল বলেন, তিনি নতুন করের ধারণার সাথে একমত নন। ক্রয় ক্ষমতা বাড়িয়ে নয়, সরবরাহ বাড়িয়ে সমস্যা সমাধান বেশি যুক্তিযুক্ত হবে বলে তিনি মনে করেন।
অন্যদিকে সরকারও গৃহায়ণ খাতে নতুন কর আরোপের কথা ভাবছে না। গত সপ্তাহে কানাডিয়ান প্রেসকে দেয়া এক বিবৃতিতে সরকার স্পষ্ট করে বলেছে, বাড়ির মালিকদের উপর নতুন কর আরোপের ইচ্ছা তাদের নেই। ফেডারেল সরকারও বেশ কয়েক বার বলেছে, তারা কানাডার প্রাইমারি রেসিডেন্সের ইকুইটির উপর কোনো কর প্রবর্তন করবে না। সূত্র : সিবিসি

Exit mobile version