Home কানাডা খবর টরন্টোয় এবার হবে জমজমাট ঈদবাজার

টরন্টোয় এবার হবে জমজমাট ঈদবাজার

সুহেল ইবনে ইসহাক: ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য বরাবরই ভাল হলেও গত দুই বছরে চারটি ঈদের চিত্র ছিল ভিন্ন। কানাডার টরন্টোয় করোনাভাইরাসের কারণে কঠোর বিধিনিষেধে ঈদের আগে বাজার খুলতেই পারেননি ব্যবসায়ীরা। অল্প সময়ের জন্য মার্কেট খুললেও মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল না থাকায় বেচাকেনা ছিল খুবই কম। ফলে বড় লোকসানের সম্মুখিন হয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসায় এবার ঈদুল ফিতর ঘিরে ভাল ব্যবসার প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা। করোনাকালের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আকাশচুম্বী প্রত্যাশা নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন, বড় লাভের স্বপ্ন দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে কানাডার অন্টারিও প্রদেশের টরোন্টোতে প্রবাসী বাঙালিদের ঈদের কেনাকাটা বেশ জমে উঠেছে। ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন কালেকশন সংগ্রহ করে পসরা সাজিয়েছেন প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। তাই ঈদ বাজারে দোকানগুলো সাজিয়েছে বাহারি কাপড়-চোপড়সহ চোখ ধাঁধানো সব আকর্ষণীয় সংগ্রহে। যাতে করে ক্রেতাদের চোখে পড়ে এসব বাহারি সংগ্রহ।

জুতা থেকে শুরু করে শার্ট, প্যান্ট, শাড়ি, থ্রি-পিস, কসমেটিকস, পারফিউম, মেয়েদের জন্য শাড়ি ও সালোয়ার কামিজ ও ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবি ও ফতুয়া রয়েছে। দীর্ঘ দুই বছর পর করোনা মুক্ত পরিবেশে ঈদের কেনাকাটা শুরু হওয়ায় বাঙালি কমিউনিটির অনেকেই আনন্দ উপভোগ করছেন। অনেক স্টলেই ক্রেতাদের জন্য সারপ্রাইজ উপহারের পাশাপাশি ডিসকাউন্টের ব্যবস্থা রয়েছে।

প্রবাসী জীবন আজ যান্ত্রিক জীবনের প্রতিশব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদেশ বিভূঁয়ে ঈদ যেন, দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো।সেই আনন্দ, সেই আবেগ উচ্ছ¡াস প্রকাশের পরিবেশ কী আর বিদেশের মাটিতে পাওয়া যায়? ‘রমজানের রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’, এমন গানও আর মোহাচ্ছন্ন করে না। তথাপি, বাঙালিরা হাড়কাটা পরিশ্রম এর মাঝেও একটিদিনের জন্য আনন্দ অন্বেষণ করে চলেন রমজানের ঈদের মধ্য দিয়ে। ঈদে নতুন জামাকাপড় পরার আনন্দ, ঘরে ঘরে সন্দেশ, সেমাই,সহ নানা মুখরোচক খাদ্য সামগ্রী তৈরিতে কেউই পিছে নয়। আর সেজন্য এসবের পণ্যসামগ্রী কিনতে বাঙালি দোকানগুলোতে দেখা যায় প্রচন্ড ভীড়। পুরো রোজার মাসব্যাপী ঈদের জন্য চলতে থাকে ঈদ বাজার ।

টরন্টোর বাংলাটাউন খ্যাত ডেনফোর্থ এলাকা ও ইন্ডিয়া বাজার খ্যাত জেরার্ড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি কাপড়ের দোকানেই ক্রেতাদের ভীড়, চলছে পছন্দের পোশাক যাচাই বাছাই ও কেনাকাটা। ডেনফোর্থের “সী” নামের কাপড়ের দোকানের স্বত্বাধিকারী সাধন দেব বাংলা কাগজকে জানান, “এবারে ঈদের বাজার গত দু’বছরের চেয়ে ভালো হওয়ারই কথা। এ পর্যন্ত ভাল চলছে, ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ঈদের কেনাকাটা আরো বৃদ্ধি পাবে। জমজমাট ঈদবাজারের প্রত্যাশা করছি।”

টরোন্টোর ১৪৫৩ জেরার্ড স্ট্রিটের বোম্বে ফ্যাশনের স্বত্বধিকারী আব্দুল ওয়াদুদ বাবুল জানান, “রমজানের শুরু থেকেই ব্যবসা খুবই ভালই চলছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক। নেই অন্যবারের মত বিধিনিষেধও। ফলে ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসা জমজমাট হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সবার একটাই লক্ষ্য করোনাকালের ঈদে যে লোকসান হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা। ঈদ উপলক্ষ্যে সম্মানিত কাস্টমারদের আমরা ৫০% ডিসকাউন্ট প্রদান করছি।”

ঈদে অঙ্গসজ্জা বাঙালি নারীদের একটি অন্যতম শখ। তাই এই রমনীদের এই অভিলাষ পূরণে টরোন্টোর জেরার্ড স্ট্রিটের রানী জুয়েলার্স ক্রেতাদের জন্য ঈদের বিশেষ ডিস্কাউন্ট বোনাসের অফার নিয়ে ঈদের ডালি সাঝিয়ে রেখেছে।

বাংলাকগজের সাথে আলাপকালে রানী জুয়েলার্সের স্বত্বধিকারী জানান, “সম্মানিত ক্রেতাদের জন্য এই ঈদে রয়েছে বিশেষ ডিসকাউন্ট। চাঁদরাতে গভীর রাত পর্যন্ত জুয়েলার্স খোলা থাকবে।কাস্টমারদের পছন্দের গহনা সামগ্রীর জন্য এবং সবচেয়ে ভালো সেবা প্রদানের জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।”

ডেনফোর্থ এভিনিউর “সী নেক্সট ফ্যাশন”এর স্বত্বধিকারী সাধন দেব জানান, “রোজার শুরুর দিকে থ্রিপিছ, জামদানি শাড়ি, বেনারশি, কাতান, সিল্ক বেডশিট, পর্দার কাপড়, লুঙ্গী ,থান কাপড়সহ প্রয়োজনীয় মালামাল কিনেছেন। রমজানের শুরুতেই ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে।” এবার ব্যবসা ভালো হবে বলে তিনি আশা করছেন।

ডেনফোর্থ এভিনিউর “শাড়ি হাউসের” স্বত্বধিকারী রিঙ্কি রয় বাংলা কাগজকে জানান,” “প্রতিদিন সকাল থেকেই কেনাকাটার জন্য ভিড় করেছেন লোকজন। প্রতি বছর রোজার মাঝামাঝি সময়ে ঈদের কেনাকাটা শুরু হলেও এবার রোজার শুরুতে মার্কেট ও ফ্যাশন হাউসগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ার কারণ পয়লা বৈশাখ।

বাংলা বর্ষবরণের দুই সপ্তাহ পরই পবিত্র ঈদুল ফিতর। পরপর দুই উত্সবকে রাঙাতে কেনাকাটার ধুম পড়েছে আমাদের বিপণিবিতানে।”

বৈশ্বিক মহামারি করোনার থাবায় গেলো দু’বছর তারা রমজানে ব্যবসা করতে পারেননি ।করোনা সংক্রমণ রোধে কার্যত তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ফলে আর্থিকভাবে তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হন। বিশেষ করে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এসকল প্রবাসী পোশাক ব্যবসায়ীরা যে লাভের আশা করেন তা ভেস্তে যায় গত দু’বছর। তবে এবার করোনা বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কোমর বেঁধে নেমেছেন অনেক ব্যবসায়ীরা।

ডেনফোর্থে, জেরার্ড বাজার, ও লিভবিকের দক্ষিণ এশীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কেনা-কাটা করতে আসা কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হলে একজন বাঙালি ক্রেতা জানান,“ঈদ পরিশীলনের আমাদের ইসলামিক ও দক্ষিণ এশীয় সংস্কৃতির সকল পণ্য একই ছাদের নিচে মিলানো সম্ভ? হচ্ছে না এখানে, তাই এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করে পরিবারের পছন্দের পোশাক ও জিনিসপত্র জোগাড় করতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। তারপর ভালোই লাগছে, কষ্ঠের মধ্যেও নিহিত আছে অশেষ আনন্দ।”

প্রবাসে ঈদের আনন্দ উচ্ছ¡াসে জাতি, ধর্ম, বর্ণের কোনো বালাই থাকে না। আনন্দ যেন সংক্রমিত হতে থাকে তার নিজ ইচ্ছায়, যেন প্রকৃতির মতো। ঈদের আনন্দ ঘরে-ঘরে আন্দোলিত হোক, সেই সঙ্গে দূর হোক সকল জরা যন্ত্রণা।

Exit mobile version