Home কানাডা খবর বাংলা কাগজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের হাই কমিশনার ডঃ খলিলুর রহমান

বাংলা কাগজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের হাই কমিশনার ডঃ খলিলুর রহমান

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: কানাডার অটোয়াতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশনের বর্তমান হাই কমিশনার ডঃ খলিলুর রহমান ১৯৮৫ সালের বিসিএস (বিদেশ বিষয়ক) ব্যাচ থেকে কেরিয়ার ডিপ্লোম্যাট। কানাডায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার পদে নিয়োগের আগে তিনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সীমান্ত প্রযুক্তি এবং আইসিটি সম্পর্কিত বিদেশের বিষয় মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি সিনিয়র পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন, জেনেভা এবং বাংলাদেশ হাই কমিশন, নয়াদিল্লিতেও দায়িত্ব পালন করেন।

জনস্বাস্থ্যে মেডিক্যাল গ্রাজুয়েট এবং পিএইচডি করা ডাঃ রহমান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় বেশ কয়েকটি সিনিয়র পদের দায়িত্বে ছিলেন। যার মধ্যে রয়েছে, “ডাব্লিউএইচও”র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়, নয়াদিল্লির পরিচালক, অযৌক্তিক রোগ এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্য; প্রধান, ইউ.এন. ইস্ক্যাপে ডাব্লিউএইচও অফিস, ব্যাংকক; এবং সর্বশেষে সিনিয়র জনস্বাস্থ্য নীতির উপদেষ্টা হিসাবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ উদ্যোগের সমন্বয়কারী হিসাবে, ডাঃ রহমান তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন (ডাব্লিউএইচএইচসিটিসি) গ্রহণের পরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বিকাশ, আইন ও প্রয়োগের জন্য ডাব্লিউএইচও’র প্রচারের নেতৃত্বও দিয়েছেন।

ডাঃ রহমান বাংলাদেশে “বাংলাদেশ তামাক বিরোধী আইন” উন্নয়নের জন্য নেতৃত্ব এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করেন। ডাঃ রহমান ২০০৯ সালে বাংলাদেশের কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক প্রোগ্রামের পুননির্ধারণের নেতৃত্বও দিয়েছেন।

২০১২ সালের ডিসেম্বরে কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর থেকেই ডঃ রহমানকে বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে করোনার সেলের চিফ কো-অর্ডিনেটর করা হয়েছিল এবং জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য হিসাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং এজেন্সিগুলির মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে সমন্বিত প্রচেষ্টা বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সাথে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে মহামারী পরিচালনায় সরকারের প্রচেষ্টা বাস্তবায়নেও তিনি কাজ করেন।

করোনা মহামারী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ কয়েক হাজার বাংলাদেশী কর্মী প্রত্যাবাসন এবং দেশে ফিরে আসার জন্য তাদের পুনরায় প্রশিক্ষণ এবং আপ-স্কিলিংয়ের জন্য কর্মসূচি তিনি তৈরি করেন।
ডাঃ রহমান আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ক‚টনীতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতৃত্ব ও পরিচালনার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে দেশে ও বিদেশে পড়াশোনা করেছেন এবং প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে বহু আন্তর্জাতিক ফোরাম, সেমিনার এবং সভা-আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। গ্লোবাল ইউএন ও ডেভলপমেন্ট ইস্যুতে তাঁর বিস্তৃত জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে।

ডাঃ রহমান ইংরেজি এবং ফরাসী উভয় ক্ষেত্রেই দক্ষ। তিনি বিবাহিত এবং তার দুটি সন্তান রয়েছে।

বিস্তারিত সাক্ষাৎকার: বাংলা কাগজের সাথে একান্তে তিনি একটি সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কানাডার “সাপ্তাহিক বাংলা কাগজ”র সহকারী সম্পাদক সুহেল আহমদ। বাংলা কাগজের সম্মানিত পাঠকদের উদ্দেশ্যে সাক্ষাৎকারটি নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:

বাংলা কাগজ: অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন এর সম্মানিত হাই কমিশনার জনাব ডঃ খলিলুর রহমান, কানাডার ‘সাপ্তাহিক বাংলা কাগজ’ এর পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা।
হাই কমিশনার : আমার এ সাক্ষাৎকারটি নেয়ার জন্য আপনাকে ও বাংলা কাগজকে ধন্যবাদ।

বাংলা কাগজ: বাংলাদেশ এবং কানাডার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশের সময় থেকে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক খুবই ভাল। কানাডিয়ান সরকার, জনগণ এবং মিডিয়া একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য সমর্থন ও সহানুভূতি প্রকাশ করেছিল। স্বাধীনতার পরপরই কানাডা প্রথম কয়েকটি দেশের একটি, যে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় (১৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২)। বাংলাদেশ ও কানাডার পারস্পরিক সম্পর্ক আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে, বাংলাদেশের পক্ষ হতে নতুন কী কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে?
হাই কমিশনার : আপনার প্রশ্নের উত্তরটি প্রশ্নের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। কানাডার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই ভালো। আমি শুধু স্বাধীনতার সময় থেকেই বলব না, স্বাধীনতার পূর্ব থেকে যখন ১৯৭০ সনে ডিসেম্বরে যে নির্বাচন হয়েছিল, সেই নির্বাচনে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে যে গড়িমসি করে, এর পরিপ্রেক্ষিতে তদানীন্তন কানাডার প্রধানমন্ত্রী আজকের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বাবা জেমস পিয়ের ট্রুডো পাকিস্তান সরকারকে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে। অতএব, কানাডা বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে। শুধু সরকার নয় কানাডার জনগণও মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সহায়তা করেছে। তার পরে আপনি নিজেইতো বললেন, স্বাধীনতার পরপরই কানাডা প্রথম কয়েকটি দেশের একটি, যে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ কানাডা আমাদের বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এবং তার পর থেকে সর্বক্ষেত্রে বিশেষ করে সামাজিক ক্ষেত্রে যেমন উইমেন ইকোনোমিক এমপাওয়ারমেন্ট, স্কিল ডেভেলপমেন্ট পার ইয়ুথ ছাড়াও সামাজিক সংস্থাগুলোকে সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে কানাডা বাংলাদেশের পুনর্গঠনে সাহায্য করতে থাকে এবং এই সাহায্যের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এখন কানাডা বাংলাদেশের একটি অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে আমরা একসাথে কাজ করে যাচ্ছি, জলবায়ু পরিবর্তনসহ “পীচ কিপিং অপারেশন”, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও আমরা একসাথে কাজ করেছি। আমি মনে করি, বিশ্বের যে কয়টি উন্নত দেশের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো, কানাডা তার মধ্যে এক নম্বর। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে কানাডার বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। অতএব, হাই কমিশনার হিসেবে আমার দায়িত্ব হবে এই সম্পর্ককে আরো জোরদার ও উচ্চতম পর্যায়ে এটিকে নিয়ে যাওয়া। আমি খুবই ভাগ্যবান যে, এমন একটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করছি।

বাংলা কাগজ: বাংলাদেশ সাস্কাচুয়ান সরকারের সাথে বাণিজ্য, খাদ্য সুরক্ষা, কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে সহযোগিতা, প্রাদেশিক সরকারের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে, তার বর্তমান অবস্থা কী?
হাই কমিশনার : এটা গত বছর স্বাক্ষরিত হয়েছে, আমি আসার আগে সাবেক রাষ্ট্রদূত মিজানুর রহমান সাহেবের সময়েই বাংলাদেশের পরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাথে এটা স্বাক্ষরিত হয়েছে। উনাকে আমি এজন্য মোবারকবাদ জানাই। এই সমঝোতা স্মারকের আওতায় চারটি এরিয়াতে কাজ হবে। কানাডার সাস্কাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন গেøাবাল ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটি (জিআইএফএস), বঙ্গবন্ধু গবেষণা চেয়ার স্থাপনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ কানাডার মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্যিক, গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, প্রযুক্তি বিনিময়, উন্নয়ন সহায়তা বৃদ্ধি পাবে। সাস্কাচুয়ান ইউনিভার্সিটির একটি ইনস্টিটিউট এবং আমাদের বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিচার্চ কাউন্সিল (BARC) এর সাথে সম্পাদিত হয়েছে, ও আওতায় একটি “বঙ্গবন্ধু চেয়ার” হবে কানাডায়, ইতোমধ্যে এই পদে একজন নিযুক্ত করা হয়ে গেছে। উনার নেতৃত্বে এই চারটি পর্যায়ে কাজ করা হবে। এই সমঝোতা স্মারকের আওতায় গ্লোবাল ইনস্টিটিউট অফ ফুড সিকিউরিটি’র একটা রিজিওনাল সেন্টার হবে বাংলাদেশে। আমি বলবো এই সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, তারই আওতায় উল্লেখিত কাজগুলো ইতোমধ্যে হয়ে গেছে।
একই সাথে বাংলাদেশে যেটা আমাদের “বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়” আছে আর এখানে বঙ্গবন্ধু-পিয়ারে ট্রুডো টেকনিকাল সেন্টার হবে, সেই সেন্টারের এর্যোক ডিরেক্টর ও নিয়োগ দেয়া হবে। এই সেন্টার ও চেয়ার এই চারটি এরিয়াতে কাজ করবে। একই সাথে বাংলাদেশে যেটা আমাদের “বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়” আছে আর বাংলাদেশের এগ্রিকালচার প্রোডাক্ট বিদেশে মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে, এক্সপোর্ট এর ক্ষেত্রে আমাদের অনেক সুবিধা হবে, আমরা অনেক এগিয়ে যাবো। তাছাড়া সাস্কাচুয়ান প্রদেশের সাথে আমাদের অনেক সম্পর্ক আছে, আমরা অনেক শস্য আমদানি করি, যা ডাল থেকে শুরু করে গম, পটাশ আমদানি করি। কোভিড পরবর্তী স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসলেই আমি ঐসব প্রদেশে যাবো এসব বিষয়ে আরো আলাপ আলোচনা করবো, তাতে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরো জোরদার হবে।

বাংলা কাগজ: ‘বাংলাদেশ-কানাডা সংসদীয় ফোরাম” দু’দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিতে কী কী ভূমিকা রাখছে?
হাই কমিশনার : আমার ধারণা এই ফোরামটি কোনো ফর্মাল ফোরাম নয়। আমাকে দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, এই ফোরামটি একটি সক্রিয় ফোরাম নয়, এই ফোরামটিকে সক্রিয় করা আমার একটি প্রায়োরিটি। এই নাম সর্বস্ব ফোরামটিতে কিভাবে অন্যান্য এম.পিদেরকে যারা বাংলাদেশের সাথে কানাডার সম্পর্ককে জোরদার করতে, বাণিজ্যের প্রসারে কাজ করবে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি সক্রিয় ফ্রেম হিসেবে আমি এটাকে তুলে ধরতে চাই। ফোরামতো আছেই, আমি যেটা করতে চাই, সেটা হচ্ছে, একটি “ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশ গ্রুপ” আমি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেখানে শুধু এম.পি. নয়, সিনেটরেরাও থাকবেন, রাজনীতিবিদ থাকবেন, ব্যবসায়ীরা থাকবেন, শিক্ষাবিদেরা থাকবেন। এমন গ্রুপ করতে চাই, যে গ্রুপটি বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা এবং বাংলাদেশ-কানাডা সম্পর্কের জোরদার করণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। আমি টরন্টোতেও যাবো, ফোরামটি সক্রিয় করতে আমি খুব দ্রুতই কাজ শুরু করতে যাচ্ছি।

বাংলা কাগজ: কানাডা থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ অধিক বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ হতে কী কী নতুন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে?
হাই কমিশনার : আমরা চাই রেমিট্যান্স বাড়ুক, এখান থেকে যে রেমিট্যান্স যায় তা খুবই কম, এরাউন্ড ৬০ মিলিয়ন। কয়েকদিন আগে একটা ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউটকে আমরা ভেটিং করলাম, তারা এই প্রবাহকে বৃদ্ধি করতে কাজ করবে। সোনালী এক্সচেঞ্জ এর সাথে লিয়াজো করার ব্যবস্থা করেছি। যা খুব শিগগিরই কাজ শুরু করবে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিতে কাজ করবে।
বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর চেয়ে, বাংলাদেশ থেকে টাকা নিয়ে আসার প্রবণতা এখানে বেশি। সেটি জমিজমা বিক্রি করে হোক কিংবা অন্যভাবে হোক।
আমি পর্যবেক্ষণ করেছি যে, পাওয়ার অফ এটর্নির ৯০% এর বেশি ব্যবহৃত হয় জমি জমা বিক্রি হয়, এবং বিক্রয়কৃত টাকা বিভিন্নভাবে অবৈধ উপায়ে লোকজন এখানে নিয়ে আসছে। অতএব, এ ব্যাপারে আমি খুব কম আশাবাদী। মধ্যপ্রাচ্যের বাংলাদেশিরাই আমাদের আসল রেমিট্যান্স হিরো। আমি অন্যান্য রাষ্ট্রদূতের চেয়ে ভিন্ন, তাই কথাটি অকপটে আপনার সামনে আমি বলে ফেললাম যে, এখানে (কানাডাতে) টাকা পাঠানোর চেয়ে নিয়ে আসার পরিমাণ বেশি। যারা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক তাদের জন্যই আমরা সোনালী এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এখানকার একটা রেমিট্যান্স কোম্পানির মাধ্যমে রেমিট্যান্স দেশে পাঠানোর যে প্রক্রিয়ার কথা এইমাত্র বললাম, তা সম্পন্ন হবে। কাগজপত্র ও অফিসিয়াল কাজকর্মের জন্য বিষয়টি এখন ঢাকায়, অনূমোদন পেলেই কার্যক্রম শুরু হবে।

বাংলা কাগজ: বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও কানাডার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কিভাবে সেতুবন্ধন তৈরি করা যায়?
হাই কমিশনার : আমাদের জনসংখ্যার তুলনায়, এখানে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা পাকিস্তান, ফিলিপিনেই ছায়া অনেক কম, ভারত অনেক বড় দেশ। এক্ষেত্রে ভারতের কথা বাদ-ই দিলাম। সেই হিসেবে অনেক কম ছাত্রছাত্রী বাংলাদেশ থেকে কানাডায় আসে।
এই যে ৬০০০ কিংবা ৬,৫০০ ছাত্রছাত্রী এখানে এসেছে, এদের বেশিরভাগের বাবা-মা হলেন দেশের পয়সাওয়ালা লোকজন। এবং আমাকে আবারো দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে, এদের বড় অংশ অবৈধ উপায়ে টাকা পয়সা উপার্জন করে এদেরকে পাঠায়। যারা আসল মেধাবী, বাবা-মা সৎ তাদের আসার সুযোগ কম। এই সকল সৎ বাবা মায়ের মেধাবী সন্তানদের এখানে পড়াশোনার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য কানাডাতে আমি আমার দায়িত্ব গ্রহণ করার পূর্বেই বিষয়টি চিন্তা করেছি, জয়েন্ট বা ডাবল ডিগ্রি চালু করার কয়েকটা উদ্দেশ্য আছে, একটা উদ্দেশ্য হলো দুটি ইউনিভার্সিটির মধ্যে সমঝোতা হবে, প্রথম দুই বছর বাংলাদেশে পড়বে, পরের দুই বছর বিদেশের ওই ইউনিভার্সিটিতে চলে আসবে। ওই ইউনিভার্সিটিও ডিগ্রি দেবে এরাও দেবে, জয়েন্টলি দিক অথবা আলাদা আলাদা দিক, আর বিদেশে (কানাডায়) দুই বছরের ডিগ্রি শেষে নিয়মানুযায়ী তারা পি.আর. এর জন্য এনটাইটেলেড হবে। একটা ছাত্রের বিদেশে থাকা খাওয়ার খরচ দুই বছর চালিয়ে যাওয়া একটু সহজ হতে পারে, যেখানে চার বছর চালানো পরিবারের পক্ষ্যে কষ্টকর। একজন ছাত্রের আনুমানিক ১,৫০০ কানাডিয়ান ডলার যদি প্রতিমাসের একটা খরচ ধরা হয়, তাহলে ওই দুই বছর তথা ২৪ মাসের খরচ বাবদ ৩৬,০০০ (ছত্রিশ হাজার) কানাডিয়ান ডলার দেশেই থাকছে। এক্ষেত্রে পড়ুয়া ছাত্রের অতিরিক্ত টিউশন ফিও গুনতে হচ্ছে না অথচ পরবর্তী দু বছর কানাডার ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগসহ কানাডায় পি.আর. ও পর্যায়ক্রমে সিটিজেনশিপ নেয়ার সুযোগ থাকছেই। এই সংখ্যাটা আমি মনে করি বাড়ানো উচিত। কারণ কানাডিয়ান সিস্টেমের সাথে আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে এখন থেকে গ্রাজুয়েশন করলে, পার্মানেন্ট রেসিডেন্স হওয়া ও পরবর্তী উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পথ সুগম হয়। আমাদের দেশ ছোট, তাই দেশ থেকে ছাত্রছাত্রীরা বিদেশে এসে পড়াশোনা করে দেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করার অবকাশ রয়েছে।
যে সকল শিক্ষার্থীরা আসছে, তারাতো আসছেই অধিকন্তু এই প্রসেসের মাধ্যমে আরো অনেক শিক্ষার্থী আসার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমি এটাই চাইছি, এটা ইনশাল্লাহ বাস্তবায়িত হবে। আমি এখনকার কয়েকটি ইউনিভার্সিটির সাথে কথা বলা শুরু করেছি। দোয়া করবেন, এটা বাস্তবায়ন হলে আমাদের শিক্ষার্থীরা বেশি সংখ্যক কানাডায় আসতে পারবে।

বাংলা কাগজ: বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায় যে, অর্থ পাচারে জড়িত ব্যক্তিদের তথ্য চেয়ে কানাডার বাংলাদেশ হাইকমিশন বরাবর দু’টি জরুরি ফ্যাক্স বার্তা পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাছাড়া পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রাজনীতিবিদরা নন, বিদেশে অর্থ পাচার করেন বেশিরভাগ সরকারি চাকুরীজীবীরা। কানাডার প্রেক্ষাপটে এ বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই কমিশন’র দৃষ্টিভঙ্গি কী?
হাই কমিশনার : আপনার পূর্বের একটি প্রশ্নে আমি টাকা পাচারের ব্যাপারে বলে নিয়েছি। আপনি যে প্রশ্নটি করলেন, এটা মূলত হলো ব্যাঙ্ক লোনের টাকা, অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকা কিংবা ব্যাঙ্ক কর্মকর্তা মানুষের গচ্ছিত টাকা মেরে নিয়ে আসাটাকেই যদি আপনি ধরে নেন তাহলে আমি বলবো, টাকা পাচার করে যে সে দেশের শত্রু। আমি সরকারি চাকুরী করি, তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করি, এই যে আপনি বললেন, “দু’টি জরুরি ফ্যাক্স বার্তা পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়” আসলে সেটা কোনো ব্যাপার না, দুইটা না তিনটা বার্তা এসেছে, আমার কথা যখন আদালতের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হবে যে, এই লোকটি টাকা পাচার করেছে এবং সে কানাডায় আছে, এবং সেই আদালতের ভিত্তিতে সরকার যদি আমাকে কিছু বলে তাহলে আমি কানাডার সরকারের কাছে বিষয়টি তুলে ধরে, তাদের সাথে একসাথে কাজ করে টাকাসহ তাদেরকে এদেশ থেকে আইনগতভাবে দেশে পাঠিয়ে বিচারের সম্মুখীন করতে পারবো। এবং এটা আমি করেছি। এখানকার সকল বাংলাদেশিদের আমি আশ্বস্ত করতে চাই, টাকা পাচার করে কেউ পার পাবে না। টাকা পাচার করার অপরাধে অপরাধীরা আজ অথবা কাল আইনানুযায়ী ধরা পড়বেই। আমি যতদিন এখানে আছি, কাজ করে যাব, আমি বসে নেই। তবে কেউ বললেই শুধু নয়, সরকার যদি আমাকে বলে যে, আদালত বলেছে এই লোকটা টাকা পাচার করে নিয়েছে, প্রাথমিক প্রমাণ আছে, এবং সেই প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে, আমি শুধুমাত্র সেই কেইসগুলোই দেখবো।

বাংলা কাগজ: ঢাকা-টরন্টো রুটে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিমান পরিষেবা চালুর কথা ছিল, বিষয়টি সর্বশেষ কোন অবস্থায় রয়েছে?
হাই কমিশনার : আপনি হয়তো জানেন যে, এটি সরকারের একটি প্রায়োরিটি। আমি এখানে আসার আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমার দেখা হয়, উনি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোভিড মহামারীর নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত রীতিনীতি উঠে যাওয়া মাত্রই বিমান ঢাকা থেকে টরন্টোতে উড্ডয়ন করবে। এটার অনেকগুলো কারণ আছে, তা হলো, লোকজনের সাথে যোগাযোগ বাড়বে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, মালপত্র আসবে। “ফিফ্থ ফ্রিডম রাইট” এর কারণে মাঝপথে বিমান থামতে পারে। ধরুন লন্ডনে থামলো, কিংবা ইতালিতে থামলে সেখান থেকে যাত্রী নিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু কানাডিয়ানরা এখনো পর্যন্ত এটাতে সম্মতি প্রকাশ করেনি। তাদের কথা, “তুমি যদি আসো তাহলে সরাসরি ঢাকা-টরন্টো আসতে হবে, মাঝপথে কোনো যাত্রী নিতে পারবে না”। কারণ ঐসকল জায়গায় ওদের বিমান যায়, আমাদের বিমান যদি ওই একই জায়গায় যায় তাহলে ওদের যাত্রী কমে যাবে। এজন্য তারা এটার অনুমতি এখনো দেয়নি। কিন্তু আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। যতদিন পর্যন্ত ফিফ্থ ফ্রিডম রাইট না হবে, ততদিন বিমান সরাসরি ঢাকা হতে টরন্টোতে আসবে, অর্থাৎ বিমান আসবে টরন্টোতে, এই আসা যাওয়ার মধ্যে “ফিফ্থ ফ্রিডম রাইট” আমরা নিয়ে নিতে পারবো। আমাদের বিমানগুলোও হবে বড়, থামার প্রয়োজন হবে না। জ্বালানি নিয়ে একবারেই টরন্টোতে চলে আসতে পারবে। আমরা মনে করি এটার মাধ্যমে কাঁচা শাখসব্জি, মাছ মাংস ইত্যাদি এখানে আশা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। প্রায় চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে বাংলাদেশের সতেজ খাবার এখান থেকেই আমরা পেতে পারবো। শুধু বাংলাদেশী নয় দক্ষিণ এশিয়ার লোকজনও এই সুবিধা কানাডায় পেতে পারেন। এতে করে আমাদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।

বাংলা কাগজ: বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরী কানাডাতেই বসবাস করছে। এই নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে নিয়ে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়াটি সর্বশেষ কোন অবস্থায় আছে?
হাই কমিশনার : নূর চৌধুরী একজন আত্মস্বীকৃত খুনি, আদালতে বিচারের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, উনি-ই সেই আসল খুনি। অতএব তাকে দেশে নিয়ে গিয়ে বিচার না বিচারের রায়ের সম্মুখীন করা হলো সরকারের কর্তব্য, দেশের কর্তব্য। আমি সরকারের একজন প্রতিনিধি হিসেবে সম্ভব সবকিছুই আমি করবো। কানাডা বলছে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তিকে ফেরত পাঠানো যাবে না। আমি মনে করি এটা একদিক থেকে ঠিক না। কানাডার চার্টার রাইট অফ ফ্রীডমে বলা আছে যে, ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে (এক্সসেপশনাল সার্কামস্টান্সেস) এই বিষয়টা বিবেচনার সঠিক সুযোগ রয়েছে।
যে লোক জাতির জনককে খুন করেছে, শুধু জাতির জনক নয় তিনির সাথে পরিবারের ১৮ জন লোককে খুন করেছে, শিশু রাসেল, শেখ কামালের সন্তান সম্ভবা স্ত্রী, মহিলা, বয়োবৃদ্ধ লোককে খুন করেছে, এবার আপনি বলেন যে এর চেয়ে ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি (এক্সসেপশনাল সার্কামস্টান্সেস) আর কোনটা হতে পারে? কানাডিয়ান চার্টার রাইটস অফ ফ্রিডম এর মধ্য দিয়েই খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানো যায়। এবং এটি আমরা কাজ করছি। খুনি নূর চৌধুরীকে এই দেশে রাখতে পারবে না। তাকে বাংলাদেশে যদি তারা না পাঠাতে চায়, তাকে এই দেশ থেকে বের করে যে দেশ হতে কানাডায় এসেছে সেই দেশে পাঠাতে হবে। আমি প্রথম দিন থেকেই বলছি, যে কানাডা নিজেকে মানবাধিকার সংরক্ষণের দেশ, আইনের শাসনের দেশ বলছে, সেই কানাডা কিভাবে একজন নুর চৌধুরীর মতো খুনিকে জায়গা দেয়? এই খুনির সাথে একটি চক্র রয়েছে এখানে, যারা বাংলাদেশ নিয়ে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে এখানে। ক্যাপ্টেন শহীদ, মেজর দেলোয়ার, মেজর মারুফসহ জামায়াতের একটি চক্র এখানে খুনি নূরকে সহযোগিতা করছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এসকল প্রোপাগান্ডা আমি বন্ধ করবো।
স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারণে এই দেশের জন্ম হয়েছে, আর সেই দেশের পাসপোর্ট নিয়ে আমরা ঘুরছি দেশে দেশে। আর দেশের বিরুদ্ধে, জাতির জনকের খুনিকে সহযোগিতা করে ফেব্রিকেটেড প্রোপাগান্ডা চালাবেন তা এখান থেকে আর হতে দেয়া যাবে না।
আপনি নিশ্চয় খেয়াল করেছেন, হাউস অফ কমন্স সি-১০ বিল পাশ করেছে। যে বিল ব্রডকাস্টিং এক্ট এর এমনমেন্ড, যার আওতায় অনলাইন এক্টিভিটি নিয়ন্ত্রণ করবে। আগের সি-১০ অনেক দুর্বল ছিল, প্রস্তাবিত বিলটি খুবই শক্তিশালী যাতে এধরণের অপপ্রচার কেউ করতে না পারে। গত মঙ্গলবার এখানকার বিচার বিভাগের মন্ত্রী ডেভিড লামেটিং গোষণা করেছে, তিনি একটি বিল উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন যা অনলাইনে প্রোপাগান্ডা রোধে কাজ করবে। যদি এই বিলটি পাশ হয়, তাহলে ওরা আর এসব প্রোপাগান্ডা চালাতে পারবে না। তাছাড়া, প্রচলিত অনেক আইন রয়েছে সেগুলো দিয়েও এদের বিচার করা সম্ভব।
দু’সপ্তাহ পূর্বে চিফ জাস্টিস অফ কানাডা রিচার্ড ওয়াগনার এর সাথে এক ব্রিফিংয়ে অন্য এক রাষ্ট্রদূতের সাথে এক ব্রিফিংয়ে আমি প্রশ্ন করেছিলাম, “ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশনের লিমিটেশন কী?” তিনি বললেন, “মত প্রকাশের স্বাধীনতা পরম মান নয়”। যে সকল লোক অপরাধ সংঘঠিত করছে, ঘৃণাবাচক কথা (Hate speech) অপপ্রচার করছে তাদের ক্ষেত্রে “ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন” পরম মান নয়। ওই জাস্টিস বলেন “কেউ যদি উক্ত আইনে কোনো অভিযোগ (কেইস) দায়ের করেন তাহলে তা যথাযতভাবে ডিবেট হবে।”

বাংলা কাগজ: বাংলাদেশ এবং কানাডা বর্তমানে বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি (এফআইপিএ)এর সাথে আলোচনা করছে যা কানাডা থেকে বাংলাদেশে আরো সরাসরি বিনিয়োগ আনতে সহায়তা করবে। বিষয়টিকে বাংলাদেশ হাই কমিশন কিভাবে মূল্যায়ন করছে?
হাই কমিশনার : এখন বাংলাদেশে সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক জোন করেছে ২৮টি হাই টিক পার্ক করেছে, এসব জায়গায় আপনারা বিনিয়োগ করতে পারেন। এখন বাংলাদেশে

বিনিয়োগ খুবই ফলপ্রসূ। আমি এখানে আসার পরে অন্তত, চারজন বিনিয়োগকারীকে বাংলাদেশে নিয়ে গেছি, তারা বিনিয়োগ করেছে। আপনাদের যে কোন বিনিয়োগে সরকার সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এজন্য আমি এখানে আসার পরে বিষয়টিকে ম্যাপাউট করার জন্য একটি গুগল ফর্ম ছেড়েছিলাম ফিলাপ করার জন্য, এবং সেখানে একটি কলাম ছিল, আপনারা কোন কোন এরিয়াতে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারেন সেগুলো আমাদের জানান। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, খুব কম লোকই আমাদেরকে এটা জানিয়েছেন। হয়তো এই ভেবে যে, এগুলো দিলে সরকার আবার আমাদের কী করে না করে। কিন্তু ফর্মের ওই অংশটি ছিল এই কারণেই।
তার বাইরেও আমরা কানাডিয়ান ইনভেস্টরদের বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্যও জোর চেষ্টা চালাচ্ছি। জোট সেক্টর থেকে শুরু করে কেনোলা সীড, এয়ার ক্র্যাফট মেইনটেন্যান্স রিপেয়ার ইত্যাদি বাংলাদেশে করার জন্য কানাডিয়ান ইনভেস্টরদেরকে মাধ্যমে বিনিয়োগ করার চেষ্টা করছি।
এবং আপনি জানেন যে আরো একটি বিষয় ছিল, কানাডিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ত্বরান্বিত করার জন্য “ফিপা” ফরেন ইনভেস্টমেন্ট প্রটেকশন এক্ট নামের একটি এগ্রিমেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এ বিষয়ে আমাদের পার্টটি আমরা তাদেরকে দিয়েছি এই বলে যে তোমরা এর একটা পুনসংস্করণ করে আমাদের পাঠাও, এটা আমাদের হাতে এখন নেই কানাডিয়ান হাতে। এবং এই এগ্রিমেন্টের আওতায় দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে প্রতি বছর আসে আমাদের ফরেন অফিস কন্সালটেশন। সেখানে যাতে ব্যবসায়িক কর্মকান্ড যাতে প্রাধান্য পায়, কিভাবে দুটি দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগের প্রসার করা যায়, তার জন্য কানাডিয়ানরা একটা প্রস্তাব দিয়েছিলো যে, প্রত্যেক দেশ চার জন করে মোট আটজনেই একটা ব্যবসায়িক প্যানেল থাকবে, এই আটজনের প্যানেল আলাদাভাবে বসে তারা এই ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সমূহ প্রতিবন্ধকতা দূর করে জন্য তার রিকমেন্ডেশন দেবে। সেই রিকমেন্ডেশন ফরেন অফিস কন্সালটেশনে আলাপ হবে। এক্ষেত্রে চারজন ব্যবসায়ীর নাম আমরা দিয়েছি, এখন কানাডিয়ানরা তাদের চারজনের নাম দেয়ার কথা। এব্যাপারে বল এখন কানাডিয়ানদের কোর্টে। এবং এরই সাথে কানাডিয়ান ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য আমরা উদ্বুদ্ধ করছি। সরকারের যথাযত গাইডেন্সের আলোকে আমি আমার হাইকমিশন বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় সকল কাজ করে যাচ্ছি।

বাংলা কাগজ: দেশের বাইরে প্রত্যেক বাংলাদেশী-ই এক একজন এম্বেসেডর, সে হিসেবে কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে আপনার কি বক্তব্য?
হাই কমিশনার : সোনার বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল, বাংলাদেশ হবে একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম, ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র যেখানে ক্ষুধা দারিদ্র থাকবে না। তারপর ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের হত্যাকাণ্ডের খুনিদের কথা তো এই বললাম, এই খুনিদের কারণে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়া থেমে গিয়েছিলো ২১ বছর। শুধু থেমে যায়নি, ওই স্বপ্নকে ধ্বংস করার জন্য সকল চেষ্টা চালানো হয়েছে। তারপর ১৯৯৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেটাকে পুনরোজ্জীবিত করা হয়। কিন্তু ২০০১ সনে একটি পরিকল্পিত পরাজয় ঘটানোর মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়। তারপর ২০০৯ সাল থেকেই আমি বলবো পুরোপুরী সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। আজকে আপনি জানেন যে, বাংলাদেশ একটি মধ্য আয়ের দেশে হিসেবে যোগ্যতা অর্জনের তিনটি মানদণ্ডের প্রত্যেকটিতে সফলভাবে যোগ্যতা আর্জন করেছে। ২০৩০ সালে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এস.ডি.জি) অর্জনে সক্ষম হবো ইনশাল্লাহ। এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের যে স্বপ্ন বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে আমরা পরিণত করবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সেই প্রচেষ্টা চলছে। আমরা আশা করি ২০৪১ সাল লাগবে না, তার আগেই বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
তাছাড়া আপনি হতো জানেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে “২১০০-ডেল্টা প্ল্যান” নাম আরো একটি প্ল্যান গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্লানের আওতায় বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্র হতে আরো উন্নততর রাষ্ট্রে উপনীত হবে। দুর্বার গতিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে। এটি চলছে, চলবে।
কোভিডের কারণে এই দেশের জিডিপি যেখানে নেগেটিভ বাংলাদেশের জিডিপি ৫.২৪%, আমরা আশা করি এই বছর শেষে বাংলাদেশের জিডিপি ৬ এর উপরে হবে। অতএব আমাদের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। এই যে দেশে আর্থসামাজিক যে উন্নয়ন হচ্ছে, আপনারা যারা বিদেশে আছেন এখানে, ভাল ভাল জায়গায় ভাল ভাল সাবজেক্টে লেখাপড়া করেছেন, আধুনিক শিক্ষায় জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়েছেন, বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী হিসেবে, বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যের কারণে আমরা চাই আপনারা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সম্পৃক্ত হোন। সরকার আপনাদের সম্পৃক্ততা কামনা করে।
আমি চাই আপনারা যারা বিদেশে আছেন, সবাই দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করেন এবং দেশের ইমেজ বিদেশে এসে তুলে ধরা আমি সরকারি কর্মকতা হিসেবে রাষ্ট্রদূত, কিন্তু ওই আপনি যেটি বললেন, বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী সবাই কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, আমি আশা করি সেই দায়িত্ব আপনারা পালন করবেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন, সম্মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সবাই কাজ করবেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে কিন্তু আপনার লাভ হবে না, আপনি নিজে নিজেকেই ছোট করছেন। এজন্য আমি চাই “বাংলা কাগজ” বিষয়টি আমাদের বাংলাদেশী ভাইবোনদের মাঝে ছড়িয়ে দিক যে, আপনারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার থেকে বিরত থাকুন, আপনারা নিজেরাই নূর চৌধুরীর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন, যে এই খুনিকে আমরা আমাদের মাঝে রাখতে চাই না। আর যারা এই খুনিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাহায্য করেন, তাদেরকে আমি সতর্ক করে দিতে চাই যে, আপনারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট বহন করেন, ধারণ করেন, বাংলাদেশের মর্যাদা যাতে বৃদ্ধি হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করুন।

বাংলা কাগজ: “সাপ্তাহিক বাংলা কাগজ” কানাডাকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
হাই কমিশনার: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

Exit mobile version