অনলাইন ডেস্ক : যেসব কানাডিয়ানদের প্রিয়জন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন তাদের কাছে মহামারীর অর্থ দীর্ঘ বিচ্ছেদ এবং চারপাশে ব্যাপক অনিশ্চয়তা। তারা জানেন না আবার কবে তাদের পরিবার ও বন্ধুদের আলিঙ্গন করতে সমর্থ হবেন। এখন যেহেতু একে একে সব ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উঠে যেচ্ছে, অনেকেই তাদের আত্মীয়দের সাথে পুনরায় মিলিত হচ্ছেন। আবার অন্যদের ক্ষেত্রে চলমান বিধিনিষেধ এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি তাদের অপেক্ষার সময়কে আরেকটু দীর্ঘায়িত করছে।
মহামারীর ২ বছরে কিভাবে বাহিরের দেশে থাকা ঘনিষ্টজনদের সাথে লোকেরা সম্পর্ক বজায় রেখেছে সে বিষয়ে একটি অনুসন্ধান চালিয়েছে সিবিসি রেডিও। গত বছর প্রযোজক ইদিল মুসা এবং জেনিফার চেন সারা দেশে মানুষের সাথে কথা বলেছেন এবং শুনেছেন যে কীভাবে তারা অনেক দূরত্বে থাকা স্বজনদের সাথে তাদের সম্পর্ককে দৃঢ় রাখার জন্য সৃজনশীল এবং আনন্দদায়ক উপায় খুঁজে নিয়েছেন। তারা যেসব লোকেদের সাথে কথা বলেছিলেন তাদের মধ্যে কয়েকজনের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে পুনরায় খোঁজ নিয়েছেন। এর মধ্যে হ্যালিফ্যাক্সে মা-ছেলের সাক্ষাৎ ছিলো একটি ঘটনা। ২০২১ সালের মে মাসে অটোয়াতে বসবাসকারী ইউআনইউআন ঝোউ একজন অল্পবয়সী মা, যিনি অ্যালগনকুইন কলেজে তার শৈশবকালীন শিক্ষা ডিপ্লোমা কোর্সে অধ্যয়নরত। তার ভিনসেন্ট নামে ১০ মাস বয়সী একটি শিশু ছিল এবং ঝোউর স্বামী একটি চীনা রেস্টুরেন্টে কাজ করত। তার সাত বছরের ছেলে ইউনতাও বাই সহ তার পরিবারের বাকি সদস্যরা ১১ হাজার কিলোমিটার দূরে চীনের শানডং-এ থাকত। ভিনসেন্টের জন্মের পর ইউনতাওকে দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন ঝোউ। তবে মহামারী তার সে পরিকল্পনাকে অসম্ভব করে তুলে। “কোভিড-১৯ এর কারণে আমার প্রতিটি পরিকল্পনা বরবাদ হয়ে গেছে,” বলেন ঝোউ।
সেই সময়ে, তার বড় ছেলের অনুপস্থিতি তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। ঝোউ বলেন, “আমরা দিনে দুই বার ভিডিও চ্যাট করতাম। প্রতিদিন সে আমাকে জিজ্ঞাসা করে কখন আমরা তার দেখাশোনার জন্য ফিরে আসব।”
গত এক বছরে তার জীবনে কিছু বড় পরিবর্তন এসেছে। তিনি তার প্রোগ্রাম থেকে স্নাতক শেষ করেছেন এবং হ্যালিফ্যাক্সের একটি ডে কেয়ারে পূর্ণকালীন চাকরি পেয়েছেন। শেষ শরতে, ঝোউ তার বড় ছেলের জন্য একটি ভিসার ব্যবস্থা করেন এবং ডিসেম্বরে ইউনতাও – যার ইংরেজি নাম ড্যামেলো – একটি বিমানে করে দীর্ঘ ভ্রমন শেষে নোভা স্কটিয়ায় পৌছায়। ঝোউ বলেন, “আমি যখন তাকে প্রথম দেখি, আমি তাকে দীর্ঘ সময় আলিঙ্গন করেছিলাম। আমি তাকে কোলে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছি। সে আগের চেয়ে লম্বা এবং ভারী হয়ে গেছে।” তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তার প্রথম কথা ছিল, “তোমার কি ঠান্ডা লাগছে?” এবং “তুমি কি মাকে মিস করেছ?” সেইদিন বিকেলে তারা শীতের উপযুক্ত কোট এবং বুট কিনতে বেরিয়েছিল।
ঝোউয়ের বাবা-মা চীনে থাকেন। ঝোউ বলেন, তাদের জন্য ইউনতাও থেকে আলাদা থাকা কঠিন ছিল। “আমি আমার বাচ্চাদের নিয়ে আমার বাবা-মায়ের সাথে দেখা করতে চীনে ফিরে যাব। আগামী বছরের জন্য এটাই আমার প্রত্যাশা।”