Home আন্তর্জাতিক শীতকালীন ঝড়ে গাজায় মানবিক বিপর্যয় চরমে, ত্রাণ প্রবেশে বাধা ইসরায়েলের

শীতকালীন ঝড়ে গাজায় মানবিক বিপর্যয় চরমে, ত্রাণ প্রবেশে বাধা ইসরায়েলের

অনলাইন ডেস্ক : শীতকালীন ঝড় ও টানা বৃষ্টিতে ফিলিস্তিনের গাজায় ভয়াবহ মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে। বাস্তুচ্যুত লাখো ফিলিস্তিনি চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ত্রাণসামগ্রী প্রস্তুত থাকলেও ইসরায়েলের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার কারণে জীবনরক্ষাকারী আশ্রয় ও জরুরি সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না। খবর আল জাজিরা

জাতিসংঘ জানিয়েছে, তাদের কাছে তাঁবু, কম্বলসহ প্রয়োজনীয় নানা ত্রাণসামগ্রী প্রস্তুত রয়েছে। তবে সীমান্ত ক্রসিংগুলো দিয়ে এসব সহায়তা গাজায় ঢুকতে ইসরায়েল এখনও বাধা দিচ্ছে বা কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই বুধবার গাজা সিটির শাতি শরণার্থী শিবিরে ঝড়ের সময় যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি বাড়ির ছাদ ধসে পড়ে। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ছয়জন ফিলিস্তিনিকে জীবিত উদ্ধার করেন, যাদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে।

এর আগেই গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, তীব্র শীতের কারণে দুই সপ্তাহ বয়সী এক ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এতে করে অপ্রতুল আশ্রয়ে বসবাসরত শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য ঝুঁকির বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র জানান, ঝড়ের কারণে গাজাজুড়ে বহু আশ্রয়কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে এবং মানুষের ব্যক্তিগত মালামাল নষ্ট হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে গাজাজুড়ে প্রায় ৩০ হাজার শিশু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্রুত সংস্কারকাজ জরুরি, যাতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম আবার শুরু করা যায়’। গাজার ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বর্তমানে গাজা উপত্যকায় যে পরিস্থিতি চলছে, তা এক কথায় ‘চরম মানবিক বিপর্যয়’।

এমন মানবিক সংকটের মধ্যেই কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানী ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচনায় গাজায় যুদ্ধবিরতি স্থিতিশীল করা এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার বিষয়টি গুরুত্ব পায়। কাতারি কর্মকর্তাদের মতে, আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাতারের ভূমিকা, গাজায় জরুরি ত্রাণ প্রবেশের প্রয়োজনীয়তা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে অগ্রসর হওয়ার বিষয়গুলো উঠে আসে।

ওয়াশিংটন থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক অ্যালান ফিশার জানান, কাতারের প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, গাজায় মানবিক সহায়তা অবশ্যই ‘নিঃশর্তভাবে’ প্রবেশ করতে দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘সহায়তা নিঃশর্তভাবে গাজায় প্রবেশ করতে হবে— এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট করে বোঝাতে চেয়েছেন যে, ইসরায়েল লাখো মানুষের জন্য ত্রাণ আটকে দিচ্ছে।’

যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে গাজায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনাও আলোচনায় উঠে আসে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন বাহিনী হলে তা অবশ্যই নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত অগ্রসর হওয়া জরুরি। যুক্তরাষ্ট্র নতুন বছরের শুরুতেই কোন কোন দেশ ওই বাহিনীতে সেনা পাঠাবে, তা ঘোষণা দিতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও সহিংসতা থামেনি। চিকিৎসা সূত্র জানায়, গাজা সিটির কেন্দ্রীয় এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১১ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজার তথাকথিত ‘ইয়েলো লাইন’-এর কাছে নিক্ষেপ করা একটি মর্টার শেল লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার ঘটনায় তারা তদন্ত করছে।

আল জাজিরার সাংবাদিকরা জানান, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরের পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলি কামান থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। পূর্ব গাজা সিটির তুফফাহ এলাকায় ইসরায়েলি গুলিতে আরও দুজন আহত হন।

এদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের হামলা বেড়েছে। ফিলিস্তিনি বার্তাসংস্থা ওয়াফা জানায়, কালকিলিয়ায় ইসরায়েলি সেনারা এক যুবকের পায়ে গুলি চালায়। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তার অবস্থা স্থিতিশীল।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৭০ হাজার ৬৬৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ১ লাখ ৭১ হাজার ১৫২ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

Exit mobile version