শুজা রশীদ : (শেষ পর্ব)

যেদিন জাহান মারা গেল সেইদিনই মাঝ রাতের কিছু পরে নীতার বড়সড় একটা হার্ট এটাক হল। তাকে রুজ ভ্যালে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে তার করনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফটিং করা হয়। সাময়িকভাবে তিনি কথা বলার ক্ষমতা এবং নিজের শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। পরদিন বিকালে রিমাকে ফোন করে খবরটা জানাল মরিয়ম। রিমা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। এতো গুলো বছর রবিনকে অবহেলা করে শেষ পর্যন্ত যখন তার সাথে তাদের যোগাযোগ হল, তখনই ছেলেটার এমন পরিণতি মেনে নিতে নীতার যে কষ্ট হবে সেটা অনুমান করা সহজ। তার ভেতরে হয়ত একটা অপরাধবোধও কাজ করছে, ভাবল রিমা। মিন্টুর শেষ উপহার ছিল রবিন। সেই মূল্যবান উপহারটা হেলায় দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। ইদানীং রবিন নীতা এবং লাট্টুকে দাদু এবং দাদী বলে ডাকতে শুরু করেছিল। প্রতিবার যখন সে নীতাকে দাদী বলে ডাকত নীতার দুই চোখ অশ্রুতে ভরে উঠত।
হাসপাতালে নীতাকে দেখতে যাবার আগে নিজের বাড়ীতে থামল রিমা। ওর এবং বাচ্চাদের কিছু জামাকাপড় নেবার দরকার ছিল। ডেমিয়েনের কাছ থেকে সাময়িকভাবে অনুমতি পাওয়া গিয়েছিল ভেতরে ঢোকার। ঐ দিন সকালেই ও দোকানে গিয়ে ওর মালপত্র যা অক্ষত ছিল তার বেশ কিছু সরিয়ে এনে নোমানের এপার্টমেন্টে রেখেছিল।

রুজ ভ্যালে হাসপাতালে ওরা নোমানের গাড়িতেই গেল। কথা ছিল পিন্টু ওর গাড়ীটা কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দেবে কিন্তু এতো ঝামেলার মধ্যে সে যে সময় করতে পারে নি সেটা সহজেই বোধগম্য। নীতা ওঈট তে ছিলেন। ওদেরকে তার সাথে খুব স্বল্প সময়ের জন্য দেখা করতে দেয়া হল। নীতা ওদেরকে দেখে চিনতে পারলেন এবং আলতো করে মাথা নাড়লেন। তিনি কিছুদিন আগে রবিনকে একটা ছোট নীল খেলনা গাড়ি দিয়েছিলেন যেটা দিয়ে রবিন সব সময় খেলত। রিমা সেটা সাথে নিয়ে এসেছিল। ও নীতার হাতে সেটা তুলে দিল। নীতা হাতের মুঠিতে সেটাকে শক্ত করে চেপে ধরলেন। তার দুই চোখ বেয়ে নেমে এলো অশ্রæর ধারা।

“মা, আপনি চিন্তা করবেন না। রবিন ভালো হয়ে যাবে।” রিমা চেষ্টা করে যতখানি সম্ভব বিশ্বাসযোগ্য করে বলতে।

নীতা অন্য দিকে ফিরলেন। বোঝা গেল না রিমার কথা তিনি বুঝতে পেরেছেন কিনা। কর্মরত নার্স ওদেরকে বাইরে বের করে দিল, বলল রোগীকে দেখে কিঞ্চিৎ উত্তেজিত মনে হচ্ছে।
মরিয়ম স্বামী এবং মেয়েদেরকে নিয়ে পাশেই একটা ওয়েটিং রুমে বসে ছিল। নীতাকে হাসপাতালের বিছানায় অসহায়ের মত শুয়ে থাকতে দেখে, তার চোখের অশ্রুর ধারা দেখে, রিমা তাৎক্ষনিক একটা সিদ্ধান্ত নিল। কাজটা ওর ইতিমধ্যেই করা উচিৎ ছিল কিন্তু এতো সমস্যার মধ্যে আর করা হয়ে ওঠেনি। ও নোমানকে পাঠালো বাচ্চাদেরকে নিয়ে আশেপাশে কোথাও ঘুরে আসতে, তারপর পিন্টু আর মরিয়মকে ওয়েটিং রুমের এক কোণে নিয়ে গিয়ে বসল।

“পিন্টু, তোমাকে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হয়নি,” ও অপরাধী মুখ নিয়ে বলে। “যে টাকাটা তোমরা খুঁজছ সেটা কোথায় আছে আমি জানতে পেরেছি।”
পিন্টু ভীষণ অবাক হল। “কি বলছ ভাবী?”
“ঠিকই শুনেছ,” রিমা শান্ত গলায় বলল। “বিশ্বাস কর আর না কর, সেই টাকা দিয়ে মিন্টু রবিনের জন্য একটা ট্রাস্ট তৈরী করেছিল, আমার বাবাকে বানিয়েছিল ট্রাস্টি। এটা আমি জানতে পেরেছি মাত্র কয়েক দিন আগে। বোঝাই যায় মিন্টু নিশ্চিত হতে চেয়েছিল রবিনের যেন কখন অর্থনৈতিকভাবে কোন সমস্যা না হয়।”
পিন্টু একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল। মিন্টু এমনটা করতে পারে সেটা ও একেবারেই আন্দাজ করে নি। মরিয়ম স্বামীর দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকাল, তার প্রতিক্রিয়া দেখছে। গত কয়েকটা বছর ধরে ঐ টাকাটা খুঁজে পাবার জন্য কি না করেছে!

“কিন্তু,” রিমা কেঁশে গলা পরিষ্কার করে বলল, “ঐ টাকাটা তোমাদের পরিবারের। আমি আমার ছেলেকে কোনদিন ঐ অর্থের একটা পয়সাও ব্যবহার করতে দেব না। টাকাটা কিভাবে তোমাদের কাছে ফেরত দেয়া যাবে এখনও জানি না কিন্তু কিছু একটা উপায় নিশ্চয় বের করা যাবে।”
পিন্টু আরেকটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে দুই হাতে মুখ ঢাকল। মরিয়ম তার পিঠে আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয়। মিন্টু টাকাটা নিয়ে কি করেছে সেটা জেনে খুব একটা বিস্মিত হয় নি ও। একজন বাবা হিসাবে যা করেছে মিন্টু সেই জন্য সে তাকে ক্ষমা করে দিতে প্রস্তুত। কিন্তু ঐ অর্থের একটা পয়সাও ও ছুঁয়ে দেখতে চায় না।
নিজেকে সামলে নিতে পিন্টুর কিছু সময় গেল। সে মুখ তুলে রিমার দিকে তাকাল। “বাবা-মায়ের সাথে আলাপ করি,” সে শান্ত গলায় বলল। “আমি নিশ্চিত রবিনের জন্য কোন ট্রাস্ট তারা নষ্ট করবেন না।”
মরিয়ম সমর্থন জানিয়ে মাথা নাড়ল। “আমার তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমরা সবাই রবিনকে ভীষণ ভালোবাসি।”

রিমা উঠে দাঁড়াল। “তোমরা কি সিদ্ধান্ত নাও আমাকে জানিও। তারপর আমি আমার বাবার সাথে আলাপ করব।”
ওয়েটিং রুম থেকে বেরিয়ে আসে রিমা। মরিয়ম ওর পিছু নেয়। “রিমা, তোমার একটা জিনিষ আমার কাছে আছে।”
“আংটিটা?”
মরিয়ম মাথা নাড়ল। হাত ব্যাগ থেকে আংটিটা বের করে ওর হাতে দিল। “খুব সুন্দর আংটি। এটা কেন গাড়ীর মেঝেতে পড়ে ছিল ভেবে পাচ্ছি না।”
রিমা কাঁধ ঝাঁকাল। “তোমাকে একদিন আমি সব খুলে বলব। আপাতত এটাকে তার প্রকৃত মালিকের কাছে ফেরত দিতে হবে।”
মরিয়ম আলতো করে ওর কাঁধে একটা হাত রাখল। “রিমা, সব কিছু আমি জানতে চাই না কিন্তু একটা কথা তোমাকে বলতে চাই, মাঝে মাঝে আমাদের সবাইকেই কম বেশী ছাড় দিতে হয়। না হলে জীবন চলত না।”

রিমা মৃদু হেসে মাথা নাড়ল। কিছু বলল না। দেখল নোমান বাচ্চাদেরকে নিয়ে ফিরে আসছে। তার দুই দিকে সেঁটে আছে ফায়জা আর জিব্রান। ছেলে মেয়ে দুই জন মানুষটাকে অনেক পছন্দ করে বোঝাই যায়। আংটিটা তাকে ফেরত দেয়াটা যা ভেবেছিল তার চেয়ে কঠিন হবে। কিন্তু ফিরিয়ে দেয়া ছাড়া আর কি পথ খোলা আছে ওর সামনে?
রুজ হিল হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেল স্কারবরো জেনারেল হাসপাতালে রবিনকে দেখার জন্য। ছেলেটার অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় নি। কিন্তু ডাক্তারের কথা শুনে ভরসা পেল। রবিনের সামগ্রিক অবস্থা নাকি আগের চেয়ে বেশ ভালো হয়েছে যদিও জ্ঞান এখনও ফেরেনি। তাকে দেখে মনে হয় সে খুব আনন্দে আছে, যেন ঘুমের মধ্যে প্রচুর মজার মজার স্বপ্ন দেখছে।
“নিশ্চয় খেলনা গাড়ীর স্বপ্ন দেখছে,” জিব্রান বিড়বিড়িয়ে বলে।

“হ্যাঁ, হাজার হাজার খেলনা গাড়ীর।” ফায়জা ফিক করে হেসে ফেলে। ওর গন্ড বেয়ে গড়িয়ে নামে অশ্রæ।
রিমা কথা বলার চেষ্টা করে না। ওর গলাটা ভীষণ ভারী হয়ে আছে। কথা বলার মত অবস্থা ওর নয়।

১০৫

আজ ওরা অন্যন্য দিনের চেয়ে বেশ আগেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পড়ল। বাইরে এখনও একটু আলো আছে। কালচে নীল আকাশে সাদা সাদা পেঁজা মেঘের আনাগোনা।
“কোথায় যেতে চাও?” হাসপাতালের পার্কিং লট থেকে গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে জিজ্ঞেস করল নোমান।

“চল, লেকের পাশে যাই,” রিমা বলল। “ব্লাফার্স পার্ক।”
“ঠিক বলেছ। এখন লেকের পাশে খুব ভালো লাগবে।”
ফায়জা সি গাল দেখতে পছন্দ করে, জিব্রান পছন্দ করে বালু। সুতরাং তারা কেউই কোন আপত্তি করল না।
গ্রীষ্মের মাত্র শুরু হলেও পার্কে বেশ ভীড়। বিশাল পার্কিং লটের কিয়দংশ ভরে গেছে গাড়ীতে। অন্য পাশে এক ঝাঁক সি গাল দল বেঁধে বসে ছিল। ফায়জা আর জিব্রান গেল ওদের জ্বালাতে। দুই হাত ছড়িয়ে খেলাচ্ছলে দৌড়ে গিয়ে ওদেরকে ভয় দেখায়, পাখীর ঝাঁক বেঁধে একটু দূরে উড়ে গিয়ে আবার পার্কিং লটে আসন গাঁড়ে। তারা দুই ভাইবোন খিল খিল করে হেসে ওঠে।

নোমান লেকের পাশ ঘেঁষে এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া পায়ে হাঁটা পথটা দেখিয়ে বলল, “এই পথে?”
রিমা মাথা নাড়ল। এক দল অল্প বয়স্ক ছেলে মেয়েরা বাবা-মায়ের সাথে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছিল। তাদের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল ওরা।
“রিমা, তোমাকে একটা কথা বলা দরকার,” নোমান বলল।
নোমানের কথা শুনে রিমার আংটিটা ফিরিয়ে দেয়ার কথা মনে পড়ল। কিন্তু আগে নোমানের কি বলার আছে শোনার সিদ্ধান্ত নিল।
“হ্যাঁ, বল।”
“কালাম কাল রাতে আমাকে ফোন দিয়েছিল।”
রিমা অবাক হয়ে বলল, “কালাম?”
“হ্যা, তোমাকে রাগের মাথায় কি কি বলেছিল সেই জন্য খুব অনুতপ্ত,” নোমান বলল। “তোমার সাথে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। বলল রবিনকে দেখতে গিয়েছিল। দোলনও গিয়েছিল ওর সাথে। এমন সময়ে গিয়েছিল যখন ওখানে আমরা কেউ ছিলাম না। কিন্তু ও আমাকে যে কারণে ফোন করেছিল সেটাই আমি তোমাকে বলতে চাই। ও আমাকে বলেছে আমি যেন তোমাকে জানাই।”

রিমা পিছে তাকিয়ে নিশ্চিত হল ফায়জা এবং জিব্রান ওদের কাছাকাছি নেই। কালাম কি জানাতে চেয়েছে কে জানে। নিশ্চয় ভালো কিছু না। বাচ্চাদের সব কিছু শোনার কোন দরকার নেই। নোমানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল।
“কালাম বলল কয়েক দিন আগে ওর কাজের এক বন্ধু ডানফোর্থ এভেনিউতে পিন্টুর বাবাকে নাকি দেখেছে,” নোমান বলল। “তিনি জাহানের হাতে একটা খাম তুলে দিচ্ছিলেন। ওর বন্ধু জাহানকে ব্যাপারটা নিয়ে প্রশ্ন করতে সে বলেছিল পিন্টুর মা নাকি তাকে মাঝে মাঝে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করতেন। কালামের ধারনা ঐ খামের মধ্যে কি ছিল পিন্টুর বাবার সেই ব্যাপারে কোন পরিষ্কার ধারনা ছিল না। উনি সম্ভবত ভেবেছিলেন শুধু টাকাই ছিল। ও কিসের ইঙ্গিত করছে বুঝতে পারছ? ওর ধারণা খামের মধ্যে টাকার সাথে একটা নোটও ছিল। ঐ নোটেই জাহানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তোমার বাড়ি এবং দোকানে আগুণ ধরিয়ে দেবার ব্যবস্থা করার।”

রিমা লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়ল। খুব যে বিস্মিত হয়েছে তা নয়। নীতাকে দিয়ে সবই সম্ভব। কিন্তু বাচ্চারা, বিশেষ করে রবিন বাড়ীর ভেতরে থাকতে তিনি কখনই সেখানে আগুণ লাগানোর নির্দেশ দেবেন না। তাহলে? তারপর ওর মনে পড়ল ঐ রাতে ওদের সবারই নির্বাচনী অফিসে বিজয় পার্টিতে যাবার কথা ছিল। নীতার সাথে ফায়জার কথা হয়েছিল ঐ সন্ধ্যায়। হয়ত কোন একভাবে জাহানকে সেই তথ্যটা জানিয়েছিলেন নীতা। নিজে সরাসরি ফোন করেন নি, অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে থাকতে পারেন। তার জানার কথা ছিল না রবিনের শরীর খারাপ থাকায় প্ল্যান পালটে শুধু রিমা গিয়েছিল মিলার সাথে দেখা হবে সেই সম্ভাবনার কথা ভেবে। হয়ত সেই কারণেই নীতা এতো ভয়ানক ভেঙে পড়েছেন। রবিনের পরিণতির জন্য তিনি নিজেই দায়ী। মাথা নীচু করে কিছুক্ষণ ভাবল, তারপর মুখ তুলে নোমানের দিকে তাকাল। “এই কথা আর কাউকে বলনি তো?”
নোমান মাথা নাড়ল। না।

“বলো না। আর আমার একটা উপকার কর। কালামকে ফোন দিয়ে বল ও যেন এই ব্যাপারে আর কাউকে কিছু না বলে। ওর কাছে কোন প্রমাণ নেই। সুতরাং অকারণে একটা ধারণার উপর নির্ভর করে গুজব ছড়ানো ঠিক নয়। তাতে কারো কোন উপকার হবে না।”
নোমান মাথা দোলাল। “তোমার সাথে আমি সম্পূর্ণ এক মত।”
এবার রিমার পালা। পেছনে তাকিয়ে ফায়জা আর জিব্রানকে আরেকবার দেখল ও। ওরা পাল্লা দিয়ে এক গাছ থেকে আরেক গাছে দৌড়ে দৌড়ে যাচ্ছে, তাদের হাসির কলকল শব্দ ঢেউয়ের শব্দকে ছাপিয়ে শোনা যাচ্ছে। এই দুঃসময়েও যে ওরা মন খুল হাসতে পারছে দেখে ওর খুব ভালো লাগে।
হাতব্যাগ থেকে আংটিটা বের করল রিমা। “এটা আমার গাড়ীর মেঝেতে পড়ে ছিল।”
নোমান সেটার দিকে এমন ভাবে তাকাল যেন বিষাক্ত কিছু দেখছে।

“ওটা দিয়ে আমি আর কি করব?” সে গম্ভীর কন্ঠে বলল।
লোকটার জন্য ভীষণ খারাপ লাগে রিমার। নৈতিক ভাবে ঠিক কাজ করলেও তার পরিণতি যে মন্দ হতে পারে নোমান তার জ্বলন্ত নিদর্শন। “আপাতত তোমার কাছেই রাখো,” রিমা মৃদু হেসে বলল।
হাসিটা দেখে একটু থমকে গেল নোমান। রিমাকে কিছুক্ষন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করল, তারপর হাত বাড়িয়ে আংটিটা নিল। “মনে হচ্ছে কিছু একটা লুকাচ্ছ আমার কাছ থেকে,” ইতস্তত করে বলল।
“দশ বছর আগে আমি একবার তোমার বিশ্বাস ভেঙেছিলাম,” রিমা ঠোঁটের ডগায় মৃদু হাসিটা ধরে রেখে বলে। “তখন ভেবেছিলাম তোমাকে ঝামেলা থেকে বাঁচাতে হলে ওটাই একমাত্র উপায় ছিল। এখন মনে হয় ভুল করেছিলাম। তুমিও একটা ভুল করেছ। সুতরাং, শোধবোধ। এখন আমরা সমান সমান।”

নোমান তার দিকে সন্দেহ ভরা দৃষ্টিতে তাকাল। “তার মানে আমার এখনও সুযোগ আছে?”
রিমা ওকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে বলল, “আমার বাবা-মা আসছেন আমাকে দেখতে। আমার জীবনের কোন বড় সিদ্ধান্তই নেবার সুযোগ তাদেরকে আমি কখন দেই নি। এইবার তার একটা ব্যাতিক্রম করব। আমার পরবর্তি স্বামীকে বেছে দেবার সুযোগ আমি তাদেরকে দেব।”
নোমানকে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারে না। রিমা কি ওর সাথে ঠাট্টা মশকরা করছে?
রিমা পিছু তাকিয়ে বিশাল এক টুকরো হাসি দিল। “এতো মুখ গোমড়া করে থেকো না। তারা তোমাকে খুব পছন্দ করতেন! আমার ধারনা এখনও করবেন।”
নোমান সাবধানে আংটিটা ওর পকেটে ঢুকিয়ে রাখল। নতুন আশা এবং স্বপ্নের ছোঁয়ায় ওর মুখখানা বিশাল এক হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

ওরা দুই জনে লেকের তীর ধরে ধীর পায়ে হাঁটতে থাকে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঢেউয়ের স্রোত ক্রমশঃ আছড়ে পড়ে পাড়ে, গোধূলি লগ্নে বাড়ি ফিরে যেতে থাকে ঝাঁক বাঁধা পাখীর দল, তাদের কল কাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারদিক। ঝলকে ঝলকে বয়ে যায় শরীর জুড়ানো বাতাস। দিনের শেষ আলোতে রিমাকে কোন এক অপ্সরীর মত দেখায়। নোমানের মনে হয় সে যেন এক স্বর্গের মধ্য দিয়ে হেঁটে চলেছে।