অনলাইন ডেস্ক : অন্টারিয়ানরা দীর্ঘ দিন ধরেই তাদের নির্বাচনী ব্যবস্থার পরিবর্তন দাবি করে আসছেন। কিন্তু তাদের সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় অনেক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে যান না। অনেকে আবার কেন্দ্রে গিয়েও ভোট না দিয়ে ফিরে আসেন। এসব কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটের হার প্রত্যাশার চাইতে কম ছিল। বিশেষ করে পশ্চিম উইন্ডসরে এই হার ছিল সবচেয়ে কম (৪৩.৩%)। আগামী ২ জুনের নির্বাচনেও কম ভোটার উপস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

২০১৮ সালের নির্বাচনে ১০.২ মিলিয়নেরও বেশি অন্টারিয়ান ভোটদানের যোগ্য ছিলেন। কিন্তু ওই নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ৫.৮ মিলিয়নেরও কম ভোটার। নর্থাম্বারল্যান্ড-পিটারবোরো সাউথের একজন ভোটার ডেভিড এরল্যান্ড। তিনি নির্বাচনের দিন ভোট দিতে যান, কিন্তু ভোটকর্মীরা যখন তাকে একটি ব্যালট দেন তিনি সেটি নিয়ে পর্দার আড়ালে না গিয়ে তার ভোট প্রত্যাখান করার সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি ব্যালটটি ভোটকর্মীদের হাতে ফেরত দিয়ে চলে আসেন। বিভ্রান্ত ভোটকর্মীদের তিনি বলেন, এটি নির্বাচনী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আমার প্রতিবাদ। অন্টারিও নির্বাচনে এটি একটি বৈধ বিকল্প। ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮৪ জন এই কাজটি করেছিলেন। খালি ব্যালট ফিরিয়ে দিয়ে তারা তাদের হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন।

টরন্টো থেকে ১০০ কিলোমিটার পূর্বে পোর্ট হোপ অঞ্চলে বসবাসকারী এরল্যান্ড বলেন, আমি বুঝতে পারছিলাম যখনই আমি বর্তমান ব্যবস্থায় ভোট দিচ্ছি তখনই ধরে নেয়া হবে আমি এই পদ্ধতিকে সমর্থন করছি। নিজেকে একজন ‘ওয়ানাবে’ ভোটার দাবি করে তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থার পরিবর্তন না হলে কোন দল বা প্রার্থীর প্ররোচনায় তিনি ভোট দেবেন না। ইউনিভার্সিটি অব উইন্ডসরের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক লিডিয়া মিলজান রসিকতা করে বলেন, ‘আপনি কি জানেন অনেকে কেন ভোট দেয় না। এটা জানা সব সময়ই বেশ কঠিন। কেননা, যারা সাধারণত ভোট দেন না তারা জরিপের উত্তরও দেন না।’

২০১৮ সালে উইন্ডসর পশ্চিম নির্বাচনী জেলায় প্রাদেশিকভাবে সর্বনিম্ন ৪৩.৩ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছিল। এছাড়া কম ভোট কাস্ট হওয়া অন্টারিওর অন্য এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রাম্পটন, মিসিসাগা, উইন্ডসর-টেকুমসেহ ও উত্তর অন্টারিওর কিওয়েটিনুং। মিলজান এসব এলাকায় কম ভোট কাস্ট হওয়ার জন্য নিম্ন আয়, অল্প বয়স্ক জনসংখ্যা ও অভিবাসীদের কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়া সিবিসির এক জরিপে ভোট না দেয়ার কারণ হিসেবে লোকজন যে সব উত্তর দিয়েছেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সময়ের অভাব, নির্বাচনের দিন এলাকার বাইরে থাকা, রাজনীতি পছন্দ না করা, প্রার্থী পছন্দ না হওয়া এবং ভোটের দিনক্ষণ সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত না হওয়া।

মিলজান বলেন, প্রার্থী এবং তাদের প্রচারণার কৌশলের উপরও ভোটার উপস্থিতির হার নির্ভর করে। এছাড়া ক্ষমতার পরিবর্তনের বিষয়টিও একটি বড় ফ্যাক্টর। যেমন ২০১৮ সালে অন্টারিওতে ভোটারেরা ক্যাথলিন ওয়েনের লিবারেলদের ক্ষমতাচ্যুত করতে ভোট কেন্দ্রে ভিড় করেছিল। ফলে দুই দশকের মধ্যে সেবার সর্বোচ্চ ভোট পড়েছিল।

এবারের ২০২২ সালের নির্বাচনের প্রচারাভিযান নিয়ে মিলজান এখন পর্যন্ত হতাশ ও বিরক্ত। প্রচারভিযানে নতুনত্ব ও চমক আনতে না পারলে এবং ভোটগ্রহণ ব্যবস্থা আরও উন্নত না করতে পারলে এবারও লাখ লাখ ভোটার ভোট দানে বিরত থাকবে। অনেকে ভোট কেন্দ্রে গেলেও ব্যালট ফিরিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ জানাবে। সূত্র : সিবিসি