অনলাইন ডেস্ক : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের উন্নয়ন প্রচার করতে গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। তিনি এও বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে অত্যন্ত স্বচ্ছ ও সুন্দর। আমার বিশ্বাস, বাঙালি জাতি অত্যন্ত পরিপক্ক, তারা আসল জায়গায়ই ভোট দেবে।

তিনি বলেন, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন জনগণের কাছে পৌঁছাতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। এজন্য জনগণের কাছে সরকারের উন্নয়নের খবরগুলো পৌঁছে দিতে গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়নের গতি-প্রকৃতি’ শীর্ষক বিএসটি নাগরিক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘গত ছয় মাসে দুনিয়ার প্রায় ৬০ দেশে নির্বাচন হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে আমাদের নির্বাচন হওয়ার আগে আরও ২২ দেশে নির্বাচন হবে। আমার কাছে নাম আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়- মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিদিনের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। আর আমি যে শখানেক দেশের নির্বাচনের কথা বললাম, তাদের নিয়ে কোনো আলাপ নেই। এর একটি অর্থ হচ্ছে আমাদের অবস্থান অনেক উন্নত হচ্ছে। আমাদের দেশের প্রতি সবার আকর্ষণ বেড়েছে।’

এ সময় সিঙ্গাপুরের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ছোট্ট একটি দেশ, সেখানে ৬৫ বছর ধরে তারা স্থিতিশীল। আগে বাবা, এখন ছেলে দেশটি শাসন করছেন। একটা ব্যারেন ল্যান্ড (অনুর্বর ভূমি) ছিল। এমন ব্যারেন ল্যান্ড যে মালয়েশিয়া থেকে বের করে দিতে হয়েছে। দরিদ্র জায়গা। কিন্তু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে তারা এখন এশিয়ার নাম্বার ওয়ান।

মন্ত্রী বলেন, যেসব দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শান্তি-শৃঙ্খলা নেই, সেখানে ভরাডুবি হয়েছে। ইরাক একসময় মধ্যপ্রাচ্যের অগ্রসর দেশ ছিল। সিরিয়া অনেক ভালো ছিল। আফ্রিকার মধ্যে সবচেয়ে উন্নত দেশ ছিল লিবিয়া। তাদের কোনো দেনা ছিল না। সুখে-শান্তিতে ছিল। কিন্তু তারা এখন মারামারি-কাটাকাটি নিয়ে ব্যস্ত।

তিনি বলেন, আমরা মারামারি না, শান্তি ও স্থিতিশীলতা চাই। আর তা বজায় রাখতে পারলে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। আগামী নির্বাচনে আমাদের একটি বড় পরীক্ষা হবে। আমরা যদি শান্তি-স্থিতিশীলতা বজায় রেখে শেখ হাসিনা সরকারকে জয়যুক্ত করতে পারি, তাহলে ট্র্যাক রেকর্ড অনুসারে তার উন্নয়নের গতিধারা চালু থাকবে। অন্যথায় ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। তখন বাংলাদেশ সন্ত্রাসী দেশ, পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বাংলাদেশ ছিল অসভ্য দেশ, যেখানে নারী-পুরুষ ও সংখ্যালঘু কারো জীবনের নিশ্চয়তা ছিল না। আমরা সেই বাংলাদেশ দেখতে চাই না।

মোমেন বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জীবন সহজভাবে কীভাবে চালাতে হয় সে বিষয়। কারণ বর্তমানে পৃথিবীতে এক অনিশ্চয়তা চলছে। প্রায়ই বলে থাকি, যেসব দেশে রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা আছে, শান্তি আছে- সেসব দেশে অঙ্কের হিসাবে দেখলে তাদের উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি।

তিনি বলেন, যারা দেশকে ভালোবাসে তারাই দেশের কথা চিন্তা করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশকে দরিদ্র থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করেছেন। আগামী রূপকল্প ২০৪১ সালে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়নের গতি-প্রকৃতিও ওপর গবেষণাধর্মী একটি নোট উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. মো. শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী। নোটে ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সরকারের সামগ্রিক উন্নয়ন বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়। ওই বিশ্লেষণে প্রায় প্রতিটি সেক্টরের উন্নয়নের ধারা তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্ট আয়োজিত সংলাপে বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর ব্যাপারী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস, অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন (ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ) বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ফারুক শাহ।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. উত্তম কুমার বড়ুয়া।