অনলাইন ডেস্ক : অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে সুইডেন। এর মাধ্যমে কয়েক দশকের নিরপেক্ষতার অবসান ঘটাল দেশটি।

মূলত ইউক্রেন আক্রমণের পর ইউরোপে রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে দেশটি তার দীর্ঘদিনের নীতি থেকে বেরিয়ে ন্যাটোর সদস্য হলো। শুক্রবার (৮ মার্চ) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটনে যোগদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর সুইডেন আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোর ৩২তম সদস্য হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে বৈঠকের পর ওয়াশিংটন ডিসিতে দেওয়া এক বিবৃতিতে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন বলেন, ‘ন্যাটো সদস্য হিসেবে সুইডেনের পথপ্রদর্শক হবে ঐক্য ও সংহতি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের মিত্রদের সাথে বোঝা, দায়িত্ব এবং ঝুঁকি ভাগ করে নেব।’

এদিকে ন্যাটোতে সুইডেনের যোগদানের নথি নেওয়ার সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, ‘যারা ধৈর্য্য ধরে তারা ভালো কিছুই পায়। এটি সুইডেনের জন্য, আমাদের জোটের জন্য এবং ট্রান্সআটলান্টিক সম্পর্কের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’

এর আগে বৃহস্পতিবার স্টকহোমে এক সংবাদ সম্মেলনে সুইডেনের কর্মসংস্থান ও একীভূত বিষয়ক মন্ত্রী জোহান পেহরসন তার দেশের ন্যাটোতে যোগদানকে ‘সুইডেনের জন্য নতুন নিরাপত্তা নীতির যুগ’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে গত ২০ বছর ধরে এই ধরনের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের ওপর পূর্ণ-মাত্রার আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। আর এটিই সুইডেন এবং তার প্রতিবেশী ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোতে যোগদানের জন্য আবেদন করতে উদ্বুদ্ধ করে। এই দুটি দেশের রাশিয়ার সাথে ১ হাজার ৩৪০ কিলোমিটার (৮৩২ মাইল) দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে।

তবে আবেদনের পর প্রাথমিকভাবে কুর্দি ইস্যুতে তুরস্ক সুইডেনের ন্যাটো সদস্য পদ প্রাপ্তিতে বাধা দেয়। পরবর্তী সময়ে এ পথে মূল বাধা হয়ে দাঁড়ায় ‘রাশিয়ার মিত্র’ হিসেবে পরিচিত হাঙ্গেরি।

তবে গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ন্যাটোতে সুইডেনের যোগদানের বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় হাঙ্গেরি। এ অনুমোদনের ফলে সুইডেনের ন্যাটোর সদস্য পদ পেতে সকল বাধা কেটে যায়।

হাঙ্গেরির এ অনুমোদনের প্রতিক্রিয়ায় সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, সুইডেন গত ২০০ বছরের সামরিক নিরপেক্ষতাকে পেছনে ফেলতে যাচ্ছে। আমরা যা আছি এবং যা কিছুতে বিশ্বাস করি সেগুলোকে ভালোভাবে রক্ষা করার জন্য আমরা ন্যাটোতে যোগ দিচ্ছি।

উল্লেখ্য, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ২০২২ সালে ন্যাটোর সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করে। মূলত রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর দেশ দুটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। গত বছরের এপ্রিলে ফিনল্যান্ড ন্যাটোয় যোগ দেয়।

কিন্তু তুরস্ক ও হাঙ্গেরি অনুমোদন দিতে দেরি করায় সুইডেন এতোদিন ন্যাটোর সদস্য হতে পারেনি। ন্যাটোর নিয়ম হলো, সব সদস্য দেশ অনুমোদন না দিলে নতুন কোনও দেশ এই জোটের সদস্য হতে পারে না।

তবে সময়ের পরিক্রমায় প্রথমে তুরস্ক ও পরে হাঙ্গেরি ন্যাটোতে সুইডেনের যোগদানের বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন নেতৃত্বাধীন এই সামরিক জোটের ৩২তম সদস্য হলো দেশটি।