মালেক ইমতিয়াজ : একদিকে কোভিড-১৯ এর পরবর্তী ঢেউ থেকে এখনও নিরাপদ নয়। অন্যদিকে নির্বাচনী হাওয়ায় জেগে ওঠেছে সমস্ত কানাডা। মধ্যবর্তী ফেডারেল নির্বাচন আসন্ন। হাতেগোনা দিন রয়েছে মাত্র। সর্বশেষ নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা এখন তুঙ্গে।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে তা বোঝাই যাচ্ছে। নির্বাচনী জরিপে প্রধান দু’টো দলের ব্যবধান খুব বেশি নয়। শেষ মুহূর্তে চিত্র পুরোপুরি পাল্টে যেতেও পারে। তবে খোলাচোখে যা দেখা যাচ্ছে লিবারেলের জন্য খতরা আছে। এমনও হ’তে পারে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়বে ক্ষমতাসীন দল লিবারেল। এককভাবে সরকার গঠন তো দূরে থাক শেষ পর্যন্ত কোয়ালিশন সরকার গঠনের সুযোগটা থাকলেও লিবারেলের মুখ রক্ষা হয়। আবার ফলাফলে এতটা ধরাশায়ী নাও হ’তে পারে নিরব ভোটারদের শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তের ফলে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলের মধ্যে লিবারেল, কনজারভেটিভ, নিউ ডেমোক্রেট, পিপলস পার্টি, বøক কুইবেকুয়া ও গ্রীন পার্টি। এছাড়া আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীও। তবে প্রধানত লড়াই হবে লিবারেল ও কনজারভেটিভ এই প্রধান দু’টো দলের মধ্যে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন বিভিন্ন মিডিয়ার জরিপে দুই দলের পক্ষে বিপক্ষে ভোটারদের সমর্থন ওঠানামা করছে। ব্যবধানটা একেবারেই কমে এসেছে। তবুও লিবারেলের চাইতে কনজারভেটিভের পাল্লা ভারিই দেখা যাচ্ছে।

অতীতের চাইতে এবারের নির্বাচনে কনজারভেটিভ থেকে প্রার্থীর মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে সম্ভবত কিছুটা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। যে সব নির্বাচনী এলাকায় লিবারেলের শক্তিশালী ভোট ব্যাংক রয়েছে, সে সব এলাকায় বিভিন্ন এথনিক গ্রুপের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে কনজারভেটিভ। যাতে লিবারেলের ভোট ব্যাংকে ভাঙ্গন ধরে।

দৃশ্যত এর ফলে লিবারেলের ভোটব্যাংক কিছুটা হলেও তছনছ হ’তে পারে। এ ক্ষেত্রে ভোটারদেরকেই সচেতন থাকতে হ’বে। নিজ কমিউনিটির প্রার্থী বলে নয় বরং প্রার্থীর যোগ্যতা বিচার করে ভোট প্রদান করতে হ’বে। এমনকি দলের উর্ধ্বে থেকে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবার সিদ্ধান্ত নিতে হ’বে। সামগ্রিকভাবে বর্তমান ও অতীতে দেশ পরিচালনায় যে দলটি আভ্যন্তরিনও আন্তর্জাতিক পলিসিতে অধিক নিরাপদ, তাদেরকেই নির্বাচিত করা প্রত্যেক সচেতন নাগিরেকের দায়িত্ব।

দলের উর্ধ্বে থেকেও অপজিশন দলের প্রার্থীকে সমর্থন ও ভোট দেবার মতো গণতান্ত্রিক সৌন্দর্য নর্থ আমেরিকার নির্বাচনে আমরা দেখেছি। উল্লেখ্য আমেরিকার ২০০৯ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বারাক ওবামার পক্ষে সরাসরি নির্বাচনী পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন রিপাবলিকান পার্টির হেভিওয়েট রাজনীবিদ, সাবেক সেনাবাহিনীর প্রধান ও প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবিøউ বুশের প্রথম মেয়াদের ফরেন সেক্রেটারি কলিন পাওয়েল। এটা গণতান্ত্রিক রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল ইতিহাস। তাছাড়া ২০২০ সালে একইভাবে আমেরিকার নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশসহ অনেক ডাকসাইটে রিপাবলিকান নেতারা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পকে দ্বিতীয় মেয়াদে সমর্থন দেননি। অথচ কাউকেই নিজ দল থেকে বহিষ্কার বা পদত্যাগ করতে হয়নি। এখান থেকে একটি উদাহরণ আমরাও কাজে লাগাতে পারি। কানাডিয়ান রাজনীতিতে আমাদের দলীয় সমর্থন ভিন্ন হ’তে পারে। কিন্তু আমাদের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও বৃহত্তর স্বার্থটা যেন প্রাধান্য পায়।
শুধু দল নয় সুচিন্তিত মতপ্রকাশই হোক একজন ভোটারের মূল লক্ষ্য। এই চিন্তা সামনে রেখে বাংলাদেশি কমিউনিটিকেও তাৎপর্যময় ভূমিকা রাখতে হ’বে বিশ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে।
আমরা বাংলাদেশি-কানাডিয়ান কমিউনিটির লোকজন বরাবরই ভোটপ্রিয়। ভোটের প্রতি এই উৎসাহ উদ্দীপনা সম্ভবত আমাদের দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতি থেকেই সাথে করে নিয়ে এসেছি। কানাডিয়ান হিসেবে ভোটে অংশগ্রহণ করা একটি অন্যতম নাগরিক দায়িত্ব। ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে আমাদের মনে একটা খাহেশ থাকে, আমার গণতান্ত্রিক অধিকারটা যথাযথ প্রয়োগ করতে চাই। দেশের রাজনৈতিক ও পারিপার্শ্বিকতার কারণে আমাদের অনেকের অভিযোগ আছে ‘দুর-ছাই ভোট কেন্দ্রে গিয়েও ভোট দিতে পারি নাই।’

কিন্তু কানাডিয়ান নির্বাচনে ভোটের সে অধিকার খর্ব করার কারও কোন সুযোগ নেই। তাই এবারের নির্বাচনে আমরা কেউ যেন ভোট দিতে বাদ না পড়ি। মনে রাখতে হ’বে এবারের হাড্ডাহাড্ডি নির্বাচনে একটা ভোটেরও মূল্য অপরিসীম। আসুন পরস্পরকে ভোট প্রদানে উৎসাহিত করি। আর দলীয় বিবেচনার উর্ধ্বে থেকে আমরা যাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অধিক যোগ্য মনে করবো সে দলের মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিতে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায়ও অংশ নিতে হ’বে। মনে রাখতে হ’বে এখানকার সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সাথে আমাদের সকলেরই স্বার্থ জড়িত। সুতরাং সিদ্ধান্ত ভুল হ’লে সকলকেই এর দীর্ঘমেয়াদি খেসারত দিতে হ’বে।