অনলাইন ডেস্ক : ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করা এখন জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আসলে আওয়ামী লীগ অত্যন্ত ভীতু দল। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে, যদি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে এই আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। গণতন্ত্রের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে এবং সার্বভৌমত্বের স্বার্থে আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করা জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে।’

বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে আগামীকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর গণমিছিল কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলোও একই কর্মসূচি পালন করবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছে। সম্পূর্ণ সচেতনভাবে সহিংসতা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের নামে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ উদ্দেশ্যমূলকভাবে শান্তি সমাবেশের নামে প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে আমাদের বাধা দিয়েছে। গণতন্ত্রের যে ন্যূনতম নাম তারা সেটাও মানেনি। বরং আমরা যেদিন কর্মসূচি দিয়েছি, সেদিন তারা কর্মসূচি দিয়েছে। কর্মসূচি শিফট করেছি, তারাও শিফট করেছে। কতটা প্রতিশোধমূলক হলে, কতটা ভয় পেলে তারা এই ধরনের কাজ করতে পারে!’

তিনি বলেন, ‘গত ২৮ জুলাই সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে নয়াপল্টনে বিএনপি বৃহত্তম মহাসমাবেশ করেছে। এরপর ২৯ জুলাই নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ নেতাকর্মীদের আহত করেছে। সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালালেও এ আন্দোলন জনগণের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২০১৪ সালে ১৫৪ সংসদ সদস্যকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করে এবং ২০১৮ সালে রাতের ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। নির্বাচনি ব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের অনীহা এসেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশ বিপন্ন হবে।’

দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি উদ্বিগ্ন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার নাকি মেগা উন্নয়ন করছে, কিন্তু তাদের বন্যা ঠেকানোর মতো কোনো সামর্থ্য নেই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জালিয়াতি করে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে পরিকল্পিতভাবে দেশের সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে নিজেদের সুবিধামতো করে নিয়েছে। এই সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘যে আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা আওয়ামী লীগ ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। গণতন্ত্রের মোড়ক পড়ে দেশে একদলীয় ব্যবস্থা কায়েম করেছে। ১৪ বছরের অন্যায়, অত্যাচার, লুণ্ঠন ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে ফোকলা বানিয়ে ফেলেছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। মাত্র ২ কোটি টাকার জন্য তাকে সাজা দিয়েছে। অথচ হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে তাদের কোনো বিচার নেই।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে সাজা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ নির্বাচনের আগে সরকার মাঠ ফাঁকা রাখতে চায়। যাতে জনগণ ভোট কেন্দ্রে না যেতে পারে। এ সরকার যদি আবার ক্ষমতায় আসে শুধু গণতন্ত্রই নয়, হুমকির মুখে পড়বে দেশে সার্বভৌমত্ব।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহা বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুল ইসলাম খান আলিম প্রমুখ।